নিবন্ধন ফরম বিতরণের খবর পেয়ে মঙ্গলবার সকাল থেকেই নিবন্ধনপ্রার্থীরা ভিড় করেন তথ্য অধিদপ্তরের প্রটোকল শাখায়।
শতাধিক আগ্রহী সশরীরে উপস্থিত হয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া জানতে চান।
এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে কমপক্ষে ৬০০ টেলিফোন কল আসে। তথ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আগ্রহীরা ফরম পূরণ করার কাজ শুরু করেছেন। আজ-কালের মধ্যে জমা নেওয়া শুরু হবে।
ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাত হানতে পারে, আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করতে উৎসাহ দিতে পারে- এমন তথ্য-উপাত্ত প্রচার, প্রকাশ বা সম্প্রচার করা যাবে না- এ ধরনের নানা বিধিনিষেধ রেখে জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা ২০১৫ চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে তথ্য মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ-সংক্রান্ত খসড়া নীতিমালার বিষয়ে তিন দফায় অংশীজনদের মতামত নেওয়া হয়েছে। এখন এসব মতামত বিশ্লেষণ, যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এ নিয়ে আন্তমন্ত্রণালয় সভা ডাকা হবে এ মাসেই।
এদিকে নীতিমালায় অনলাইন গণমাধ্যমের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। নীতিমালা চূড়ান্ত করার আগেই নিবন্ধন শুরু হচ্ছে অনলাইন পত্রিকার। অনলাইন সাংবাদিকতায় শৃঙ্খলা আনার লক্ষ্যে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এই নিবন্ধন কার্যক্রম চলবে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। নিবন্ধন ফরম ও হলফনামা পূরণ করে জমা দিতে হবে তথ্য অধিদপ্তরের প্রটোকল শাখায়। এ ক্ষেত্রে এসএসসি পাসের সনদপত্র জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক।
‘অনলাইন নিউজ প্রকাশনা’ নিবন্ধনের জন্য আবেদনপত্রে প্রকাশকের নাম, জাতীয়তা, ঠিকানা, ফোন নম্বর, ই-মেইল ঠিকানা, পিতা ও মাতার নাম, জন্ম তারিখ, পেশা, অনলাইন পত্রিকার নাম, ওয়েব ঠিকানা ও ইউআরএল; সম্পাদকের নাম, জাতীয়তা ও বয়স, শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, ই-টিআইএন, ট্রেড লাইসেন্স-সংক্রান্ত তথ্য ও ব্যাংক হিসাবের বিবরণ দিতে হবে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনলাইন গণমাধ্যম সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে রয়েছে। দেশে কী পরিমাণ অনলাইন গণমাধ্যম আছে তার সঠিক পরিসংখ্যানও সরকারের কাছে নেই। এসব গণমাধ্যমের কিছু অংশের বিরুদ্ধে অপসাংবাদিকতা, সহিংসতা ছড়ানোর মতো বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু নীতিমালার অভাবে এসব রোধ করা যাচ্ছে না। নীতিমালা চূড়ান্ত করতে দেরি হওয়ায় নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। তবে নিবন্ধনের সিদ্ধান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নীতিমালা চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। তথ্যসচিব মরতুজা আহমদ গতকাল কালের কণ্ঠকে জানান, অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা দ্রুত চূড়ান্ত করা হবে।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ এস এম মাহবুবুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অংশীজনদের ও সাধারণ মানুষের মতামত নেওয়ার কাজ শেষ হয়েছে। আমরা এসব মতামত দেখেছি। নীতিমালা দ্রুত চূড়ান্ত করতে আমরা আন্তমন্ত্রণালয় সভায় বসব।’
অনলাইন গণমাধ্যমের খসড়া নীতিমালায় মোট আটটি অধ্যায়ের মধ্যে দ্বিতীয় অধ্যায়ে নিবন্ধনের বিষয়টি রয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, সব অনলাইন গনমাধ্যমকে নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে নিবন্ধিত হতে হবে। নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট বিধিবিধান অনুসরণ করে অনলাইন গণমাধ্যমকে নিবন্ধন করবে। বিদ্যমান অনলাইন গণমাধ্যমগুলো শর্তপূরণসাপেক্ষে নিবন্ধিত হবে। সব অনলাইন গণমাধ্যমের জন্য সম্পাদকসহ সাংবাদিকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, আর্থিক সংগতি, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও বেতন কাঠামো বাস্তবায়নসহ একক নাম-সংক্রান্ত বিধিবিধান মেনে নিবন্ধিত হতে হবে।
এতে উল্লেখ আছে, প্রকাশনা বা সম্প্রচারের জন্য নিবন্ধিত ডিক্লারেশন বা লাইসেন্স পাওয়া গণমাধ্যমকে অনলাইনে প্রচার, প্রকাশ বা সম্প্রচারের জন্য নিবন্ধিত হতে হবে। সরকার অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে নিবন্ধন দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি স্বচ্ছ, প্রতিযোগিতামূলক, উন্মুক্ত, স্বতন্ত্র আইন বা বিধিমালা প্রণয়ন করবে। এতে নিবন্ধন প্রদান পদ্ধতি, যোগ্যতা ও অযোগ্যতা, বাতিল ও অগ্রায়ণের বিধান বর্ণিত থাকবে। আইন না হওয়া পর্যন্ত তথ্য মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে। নিবন্ধন পাওয়া সব অনলাইন গণমাধ্যম সরকার স্বীকৃত হিসেবে বিবেচিত হবে।
খসড়া নীতিমালা চূড়ান্ত হওয়ার পর নিবন্ধনের এসব নির্দেশনা অনুসরণ করা সম্ভব হবে। তবে এর আগেই আংশিক শর্ত পূরণ করে নিবন্ধন শুরু হচ্ছে। পাশাপাশি দ্রুত নীতিমালা চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। জানা গেছে, ২১ জুলাই খসড়া নীতিমালাটি তথ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে আপলোড করে ১২ আগস্টের মধ্যে সর্বসাধারণকে মতামত দিতে বলা হয়েছিল। দ্বিতীয় দফায় ৩১ আগস্ট এবং তৃতীয় দফায় ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। সাধারণ মানুষ ছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকেও বেশ কিছু মত পাওয়া গেছে।
খসড়া নীতিমালা তৈরির লক্ষ্যে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মোস্তাফা জব্বারকে প্রধান করে একটি উপকমিটি করা হয়েছিল।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘আমরা কয়েক মাস আগে খসড়া চূড়ান্ত করেছি। জনমত নেওয়ার পর এটি চূড়ান্ত করা হবে।’
জানা গেছে, তথ্য মন্ত্রণালয় জনমত যাছাইয়ের পর নীতিমালা পুরোপুরি চূড়ান্ত করে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভা বৈঠকে পাঠাবে। অনুমোদনের পর প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, সশস্ত্র বাহিনীসহ দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত অন্য কোনো বাহিনীর প্রতি কটাক্ষ, বিদ্রূপ বা অবমাননা করা যাবে না অনলাইন গণমাধ্যমে। অপরাধ নিবারণ ও নির্ণয়ে অথবা অপরাধীদের দণ্ড বিধানে নিয়োজিত সরকারি কর্মকর্তাদের হাস্যস্পদ করে ও ভাবমূর্তি নষ্ট করে এমন তথ্য-উপাত্ত প্রচার, প্রকাশ ও সম্প্রচার করা যাবে না। এমন তথ্য প্রচার-সম্প্রচার করা যাবে না, যা রাষ্ট্রদ্রোহমূলক ও হিংসাত্মক ঘটনা প্রদর্শন করে।
বেসরকারি টেলিভিশন ও বেতারের জন্য গত বছরের ৫ আগস্ট জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা প্রণয়ন করেছে তথ্য মন্ত্রণালয়। ওই নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় সম্প্রচার কমিশন গঠন করা হবে। এই কমিশনই জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা পেতে পারে।
চূড়ান্ত খসড়া নীতিমালা অনুসারে, অনলাইন গণমাধ্যম বলতে বাংলা, ইংরেজি বা অন্য কোনো ভাষায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে স্থির ও চলমান চিত্র, ধ্বনি ও লেখা বা মাল্টিমিডিয়ায় অন্য কোনো রূপে উপস্থাপিত তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ বা সম্প্রচারকারী ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানকে বোঝাবে। অনলাইন গণমাধ্যমের জন্য কোনো ধরনের জামানত রাখতে হবে না।
(21)