অভয়নগর বাঘুটিয়া ইউনিয়নের ঋষি পল্লিতে পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে আমন ধান কাটাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় প্রভাবশালীদের হামলায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লডছে সংখ্যালঘু দলিত সম্প্রদায়ের পরিমল বিশ্বাস (৪০) এবং দুধকুমার বিশ্বাস (৩৫)।
জানা গেছে, গত শনিবার সকালে যশোর অভয়নগর বাঘুটিয়া ইউনিয়নের ভাটপাড়া ঋষি পল্লির কাশিনাথ দাসের ছেলে পরিমাল বিশ্বাস (৪০), দুধ কুমার বিশ্বাস (৩৫), দেবলা রানী (৪১) সহ প্রায় ১০/১২ জন কে নিয়ে তাদের পৈত্রিক জমিতে ধান আমন কাটতে যায়। এমন সময় একই গ্রামের লাল বাহিনী ক্ষ্যাত আবু বক্কার মোল্ল্যা, কাশেম মোল্লা, এবং কায়েম মোল্লা ও তার ছেলে মিজান এর নেতৃত্বে ৪০/৫০ জনের সন্ত্রাসী বাহিনী অস্ত্র (পিস্তল, রামদা, রড, শাবল, ভেলা, বোম, লাঠি, ইট) নিয়ে লাল পোশাক পরে তাদের উপর হামলা চালায়। হামলায় পরিমল বিশ্বাস (৪০) এবং দুধকুমার বিশ্বাস (৩৫) গ্রুতর আহত হলে তাদেরকে অভয়নগর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এঘটনায় অভয়নগর থানায় পৃথক পৃথক মামলা হয়েছে।
আহত পরিমল বিশ্বাস এবং দুধকুমার বিশ্বাস এর ছোট ভাই এবং মামলায বাদী দীপক বিশ্বাস বলেন, আমার ঠাকুরদাদা মারা যাওয়ার সময় অর্থাৎ ১৯৬৫ সালের দিকে তার পাশের বাড়ি কাকাতো ভাই মুনার উপর যাবতীয় সম্পত্তি দেখা শোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। কারন তখন আমার বাবা কাশিনাথ দাস এবং কাকা সুধীর দাস নাবালক ছিল। ঠাকুরদাদা মারা যাওয়ার পর চতুর মুনা মাঠ জরিপের সময় সকল সম্পত্তি নিজের নামে রের্কড তৈরি করে। পরবর্তিতে আমার বাবা, কাকা বড় হয়ে সম্পত্তি ফেরত চাইলে মুনা ঋষি বলে, তোদের বাবা আমার কাছে সব বিক্রি করে গেছে।
এঘটনার পর আমার বাবা, কাকা মিলে জেলা কোর্ট মামলা করে। মামলায় আমাদের পক্ষে রায় আসে কিন্তু তারা মানে না। পরে ১৯৯৬ সালে মহামান্য হাইকোর্ট আমাদের পক্ষে রায় দেয়। এ রায়কে উপেক্ষা করে মুনা আবার আমাদের নামে মামলা করলে কোর্ট তা রিজেক্ট করে দেয় এবং তার কয়েকবছর পর জমি মুনার দখলে থাকায় জাল দলিল দিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী মুসলিম সম্প্রদায়ের নিকট নামমাত্র মুল্যে বিক্রি করে। এরমধ্যে আমরা স্থানীয় শালিশীর রায়, জেলা কোর্টের রায় এবং হাইকোর্টর রায়ের প্রেরিক্ষিতে গত দু বছর আগে রায় প্রাপ্ত ৭৩ শতাংশ জমি দখলে নিয়ে চাষাবাদ শুরু করি। কিন্তু ফসল কাটতে গেলেই বাধে বিপত্তি। শনিবারে তো আমাদেরকে মেরে ফেলতো যদি এলাকার লোকজন না এগিয়ে আসতো। আমাদেরকে মেরে আবার আমাদের নামে ওরা মামলা করেছে। পরে আমরা আমাদের লোকদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করে অভয়নগর থানায় মামলা করেছি যার নং ৩-১/১১/১৫।
পরিমল বিশ্বাস বলেন, ওরাতো আমাদেরকে অনেক আগে থেকে এলাকা ছাড়া করার চেষ্টা করছিল। এ ওদিনতো আমাদেরকে মেরে ফেলতা।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ ওসমান আলী শেখ বলেন, আসলে জমিটা কাশিনাথ দাসের বাবার জমি। ওয়ারেশ সুত্রে কাশিনাথরাই মালিক কিন্তু মুনা ঋষি কৌশলে নিজের নামে রেকর্ড করে। পরে কাশিনাথরা জানতে পেরে রেকর্ড সংশোধনী মামলা করে জিতে যায়। আমরাও অনেকবার মীমাংশা করে আদালতের রায়কে মেনে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। কিন্তু মুনা তা অমান্য করে এলাকার প্রভাবশালীদের কাছে জাল দলিল দিয়ে জমি বিক্রি করে দেয়। এরপরও আমরা সালীশ করেছি, সে রায় না মেনে আবু বক্কার মোল্ল্যা গংরা ঝামেলা বাধাতে থাকে। শুনেছি প্রায় সময় এরা ঋষিদের হুমকি-ধামকি দেয়। শনিবার এঘটনার পর আমি সেখানে গিয়েছি এবং ঋষিদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছি। সংখ্যালঘুদের উপর এভাবে হামলা করা ঠিক হয়নি। যদিও উভয় পক্ষ মামলা করেছে। আমি এ ঘটনার তিব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং এর সুষ্ঠ সমাধান প্রত্যাশা করছি।
অভয়নগর থানার অফিসার ইনচার্জ বলেন আইনি পদক্ষেপ অব্যাহত আছে এবং দুই পক্ষের অভিযোগ নেওয়া হয়েছে তদন্ত পুর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ দলিত পরিষদ (বিডিপি) যশোর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বিপুল বিশ্বাস বলেন, আমরা এ মানবতাবিরোধী ঘটনার তিব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে ন্যায় বিচার আশা করছি।
-উজ্জল কুমার দাস, ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি
(10)