২০ লাখ টাকা আত্মসাৎ-এর অভিযোগ এনে বটিয়াঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জলমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ১৯৪৭ সালের ৫(২) ধারায় দুদক আইনে মামলা হয়েছে। জনপ্রতিনিধিসহ ৬জনকে স্বাক্ষী করে গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় জেলা ও দায়েরা জজ আদালতের সিনিয়র স্পেশাল জজ বিপ্লব গোস্বামীর আদালতে ব্যবসায়ী রবিন্দ্র নাথ দত্ত বাদি হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। মিস কেস নং ১২৩১/১৫। মু. বিল্লাল হোসেন খানের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎসহ তিনটি মামলা খুলনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে দায়ের হয়েছে। মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, ২নং আসামী জলমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর মোল্লা অস্থায়ী গো-হাট বসানোর লক্ষে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন। ওই আবেদনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মু. বিল্লাল হোসেন খান মতামত সাপেক্ষে সুপারিশ প্রদান করেন। জেলা প্রশাসক শর্ত সাপেক্ষে অস্থায়ী গরুর হাট বসানোর অনুমতি প্রদান করেন। শর্ত মোতাবেক পাশ্ববর্তী অন্য কোন বাজার কমান্ড এরিয়ার মধ্যে এবং মহাসড়ক ও স্কুল মাঠসহ জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয় এমন স্থানে প্রস্তাবিত অস্থায়ী পশুর হাট বসানো যাবেনা। আসামীরা স্থানীয় সরকার অধ্যাদেশ ও জেলা প্রশাসকের আদেশ অমান্য করে মহাসড়কের পাশে স্কুল মাঠে অস্থায়ী কোরবানীর পশুর হাট বসায়। জলমা ইউনিয়নের হোগলাডাঙ্গায় প্রগতি স্কুল মাঠে ২০ সেপ্টেম্বর হতে ২৫ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টা পর্যন্ত পশুরহাট বসিয়ে স্কুলের বারান্দায় হাসিল ঘর স্থাপন করে টাকা আদায় করা হয়। সেই হাট থেকে আদায়কৃত ২০ লাখ টাকা উপজেলা রাজস্ব তহবিলে বা সংশ্লিষ্ট তহবিলে জমা প্রদান না করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মু. বিল্লাল হোসেন খান ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর মোল্লা আদায়কৃত টাকা আত্মসাৎ করেন। ফলে সরকার বড় ধরনের একটা রাজস্ব থেকে বঞ্ছিত হয়েছে বলে মামলার আরজি উল্লেখ করা হয়। এছাড়া গত ২১ সেপ্টেম্বর-২০১১ তারিখে সরকারী হাট-বজার সমুহের ইজারা পদ্ধতি এবং আয় বন্টন সম্পর্কিত নীতিমালার ১০.২ উপধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, যদি ঈদ বা অন্য কোন বিশেষ উপলক্ষে অস্থায়ী হাট-বাজার বসানোর প্রয়োজন পড়ে, তবে সংশ্লিষ্ট উপজেলা পরিষদ জেলা প্রশাসকের পূর্ব অনুমতি গ্রহণ করে প্রচলিত নীতিমালার বিধি-বিধান অনুসরণপূর্বক ইজারা প্রদান করবেন। ইজারালব্ধ অর্থের ২০ ভাগ ‘‘৭ ভুমি রাজস্ব খাতে’’ ট্রেজারী চালানের মাধ্যমে ইজারা প্রদানের ৭ কার্যদিবসের মধ্যে জমা দিবেন। অবশিষ্ট ৮০ ভাগ অর্থ সংশ্লিষ্ট উপজেলা পরিষদের নিজস্ব আয় হিসাবে গণ্য হবে এবং উপজেলা পরিষদের রাজস্ব তহবিলে জমা দিবে বলেও মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়েছে। জেলা ও দায়রা জজ বিপ্লব গোস্বামী মামলাটি আমলে নিয়েছেন। মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী এ্যাড. মনোরঞ্জন বিশ্বাস এ তথ্য জানান। এদিকে মামলার বাদি রবিন্দ্র নাথ দত্ত দেশ প্রতিবেদককে জানান, আমিও একজন ঠিকাদার হিসেবে এই হাট ইজারা নিতে প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু পশুর হাট টেন্ডার না দিয়ে ইউএনওর নির্দেশে ইউপি চেয়ারম্যান নিজেই হাট বসিয়েছেন। আমিসহ যে সকল ঠিকাদার এই টেন্ডারে অংশ গ্রহণে ইচ্ছুক ছিলাম তারা সবাই আশ্চার্যান্বিত হয়েছি। সরকার বিভিন্ন দিক থেকে রাজস্ব বঞ্ছিত হয়েছে। সেকারনেই আমার বিবেকের তাড়ানায় আমি এই দুর্ণীতি পরায়ণ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছি ॥ উল্লেখ্য, ১৫ সেপ্টেম্বর ’১৫ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ম জননেত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাংচুর ও সেফটি ট্যাংকিসহ নর্দমায় ফেলার অভিযোগে ইউএনও মু. বিল্লাল হোসেন খানের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়। উপজেলা ছাত্রলীগ আহবায়ক অরিন্দম মন্ডল বাদি হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন (পিবিআই), খুলনাকে তদন্তের জন্য প্রেরণ করেন আদালত। মামলাটি পিবিআই তদন্ত করছেন। এছাড়াও সরকারের থেকে লিজ নেয়া জমিতে মাছের ঘেরের বাঁধ কেটে দেয়ার অভিযোগে ইউএনও বিল্লাল হোসেন খানের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়। বটিয়াঘাটার মাইলমারা গ্রামের গোবিন্দমন্ডল বাদি হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। আদালত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মু. বিল্লাল হোসেন খানকে কেন আপনার বিরুদ্ধে মামলা নেয়া হবেনা এই মর্মে কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করেন। এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মু. বিল্লাল হোসেন খানের বিরুদ্ধে আদালতে ৩ টি মামলা দায়ের হয়েছে।