কবি শামসুর রাহমান ১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর পুরান ঢাকার মোগলটুলিতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈত্রিক নিবাস বর্তমান নরসিংদী জেলায়। ২০০৬ সালের ১৭ আগষ্ট কবি ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। কবির জন্মদিন স্মরণে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে বনানী কবরস্থানে কবির সমাধিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, আলোচনা সভা, গান ও কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান।
এদিকে কবি শামসুর রাহমান স্মরণে বাংলা একাডেমি, জাতীয় কবিতা পরিষদ ও শামসুর রাহমান স্মৃতিপরিষদ যৌথভাবে একাডেমির রবীন্দ্র চত্ব¡রে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। আজ বিকাল ৪টায় এ অনুষ্ঠানে শামসুর রাহমানের কবিতা থেকে আবৃত্তি, কবিকণ্ঠে নিবেদিত কবিতা, নৃত্য ও সংগীত পরিবেশিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন একাডেমির ও শামসুর রাহমান স্মৃতিপরিষদের সভাপতি অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেবেন কবি সৈয়দ শামসুল হক, কবি-রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর ও বাংলা একাডেমি মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মুহাম্মদ সামাদ স্বাগত বক্তব্য দেবেন।
কবিকণ্ঠে নিবেদিত কবিতা পাঠ করবেন রবিউল হুসাইন, হাবীবুল্লাহ সিরাজী, রুবী রহমান, মুহম্মদ নূরুল হুদা, নূহ-উল-আলম লেনিন, কাজী রোজী, হালিম আজাদ, শিহাব সরকার, নাসির আহমেদ, কাজল বন্দোপাধ্যায়, রবীন্দ্র গোপ, কামাল চৌধুরী, আসাদ মান্নান, মুনীর সিরাজ, শাহজাদী আঞ্জুমান আরা, আমীরুল ইসলাম, আসলাম সানী, তারিক সুজাত, অঞ্জনা সাহা, মৃত্তিকা গুণ ও দীপিতা রাহমান।
শামসুর রাহমানের কবিতা থেকে আবৃত্তি করবেন লায়লা আফরোজ, রফিকুল ইসলাম, শাহাদাত হোসেন নিপু, আহ্কাম উল্লাহ ও নায়লা তারান্নুম কাকলি। সংগীতে অংশ নেবেন রফিকুল আলম, মহীউজ্জামান চৌধুরী, বুলবুল মহলানবীশ, মাহজাবিন রহমান শাওলী, উত্তম ঘোষ প্রমুখ। এম আর ওয়াসেকের পরিচালনায় নৃত্য পরিবেশন করবে নন্দন কলা কেন্দ্রের শিল্পীরা। আজ সকালে কবির সমাধিতে বাংলা একাডেমি, জাতীয় কবিতা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন পুষ্পমাল্য অর্পণ করবে।
স্বাধীনতার এ কবি দেশের ও দেশের মানুষের বিরুদ্ধে কোন অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে, কোন অনাচার হতে দেখলে নিজেকে একাত্ম করে নিতেন এবং তার জবাব দিতেন কবিতার ভাষায়। আশা, বেদনা, ভালোবাসা, দ্রোহ কোনো কিছুই বাদ যায়নি তাঁর কবিতা থেকে।
তাই এ কবি প্রসঙ্গে কবি ড. মুহাম্মদ সামাদ জানান, বাঙালীর জীবনে শামসুর রাহমানের প্রয়োজন কতটুকু তা অনুধাবন করা যায় তাঁর কবিতা পাঠ করলেই। তাঁর কবিতায় স্বাধীনতা, মৌলবাদ, ধর্মান্ধতা, প্রেম, দ্রোহ, বিশ্বজনীনতা সবই উঠে এসেছে। যা আজও আমাদের উজ্জীবিত করে। তিনি বলেন, শামসুর রাহমান নামটির সঙ্গে বাংলাদেশ ও এ দেশের কবিতাপ্রেমীদের নাড়ির যোগ রয়েছে। কারণ তিনি আমাদের স্বাধীনতার কবি। তিনি মৌলবাদ ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন বলেই শ্যামলীর নিজ বাড়িতে তাঁকে কৃষ্ণপক্ষের শক্তি দ্বারা আক্রান্ত হতে হয়েছিল।
কবি হাবিবুল¬াহ সিরাজী বলেন, শামসুর রাহমান বাঙালীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি। তিনি নগরে বাস করলেও শুধু নাগরিক কবি ছিলেন না, ছিলেন জনতার কবি। তিনি বলেন, কবি শামসুর রাহমানের প্রতি সেদিনই আমরা সঠিক শ্রদ্ধা জানাতে পারব যেদিন বাংলার মাটি থেকে চিরতরে মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদ নির্মূল এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করে ঘোষিত রায় কার্যকর করতে পারব।
(3)