গাজী আব্দুল কুদ্দুস, ডুমুরিয়া: এককালের প্রতিপত্তি ধামালিয়ার জমিদার বাড়ির বিলীন হওয়া ঐতিহ্য আবারও ফিরে এসেছে। প্রাচীন রূপকথার আধুনিক রূপকার হিসেবে জমিদার উত্তরসূরী ফার্মেসী বিজ্ঞানী আমেরিকা প্রবাসী ড. এসকে বাকার শিক্ষা ও মানব সেবায় নিজেকে আত্মপ্রকাশ করেছেন। প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে ডুমুরিয়া উপজেলার রঘুনাথপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দুটি অত্যাধুনিক ভবন নির্মাণ করে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
১৯৪৭ সালে অবিভক্ত বাংলার দক্ষিণাঞ্চল মুসলিম জমিদারগণ শাসন করতেন। খুলনার ডুমুরিয়া, ফুলতলা, দাকোপ ও যশোরের কেশবপুর অঞ্চলের কিয়দাংশে ধামালিয়া সরদার বংশীয় জমিদার শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করতেন। ইতিহাস অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯২৭ সাল পর্যন্ত অত্যন্ত দাপটের সাথে তারা জমিদারী পরিচালনা করতেন। সামাজিক শৃংখলা শাসন শিক্ষা ও জনকল্যাণমূলক কাজেও জমিদাররা নিবেদিত ছিলেন। মুন্সী বাবর আলী ছিলেন ধামালিয়া জমিদার বংশের প্রথম পুরুষ। মুন্সী বাবর আলী থেকে আহাদ আলী (অষ্টাদশ শতক) আমল পযর্ন্ত অর্থসম্পদ ও শক্তি সুপ্রতিষ্ঠিত ছিল। মুন্সী ভেকন আলী সরদারের আমলে তাদের জমিদারি প্রসার, প্রভাব ও প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পায়। মুন্সী আহাদ আলীর আমলে জমিদারি পূর্ণতা পায়। জমিদারদের প্রধান আয়ের উৎস ছিল ব্যবসা, ভারতে ইটের ভাটা ও ঠিকাদারী। তৎকালে কলকাতায় নারকেলডাঙ্গায় ৩০ বিঘা জমির উপর মুন্সী বাজার গড়ে ওঠে। কথিত আছে, তারা বিভিন্ন স্থানে গুপ্ত ধন ও চারো ঘুনিতে টাকা কড়ি পেতেন। বর্তমান প্রজন্মের কাছে রূপকথা হলেও এটি সত্য। মুন্সী আহাদ আলীর মৃত্যুর পর মোবারক আলী আঃ কাদের অত্যন্ত বিলাশ বহুল ও উচ্ছৃংখল জীবন জাপন শুরু করলে অর্থ সম্পদে ভাটা নামে। পরবর্তীতে হিন্দু জমিদারদের সাথে মামলায় জড়িয়ে পড়লে আর্থিক অবস্থা এবং প্রভাব নিঃশেষ হয়ে যায়। পরবর্তীকালে পাকিস্তান সরকার জমিদারদের পরিবারবর্গের জীবন যাপনের জন্য ১০০ একর সম্পত্তি জমিদারদের ফেরত দেন। তারপর জমিদারি প্রথা শেষ হবার পর নিলামকৃত সম্পত্তি নিয়ে বিভিন্ন মামলা মোকদ্দামায় জড়িয়ে কোন মতে টিকে থাকেন তারা। জমিদার বাড়ির বিলুপ্ত গৌরব পুনরুদ্ধার করার স্বপ্ন দেখেন জমিদার উত্তরসূরী সামছুল করিম বাকার। পরিশ্রম আর অধ্যাবসায় ছিল সামছুল করিম বাকারের জীবনে কাক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর মূলমন্ত্র।
১৯৬৯ সালে ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্স ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ১ম স্থান অধিকার করেন। ১৯৭০ সালে এমএসসিতে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচারার হিসেবে যোগ দেন। দেড়বছর কর্মরত থাকার পর ক্যানাডিয়ান কমনওয়েল্থ স্কলারশীপ নিয়ে এমএস করেন। ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত কানাডায় অবস্থান করেন। ১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত আমেরিকায় ইলিনয়েস ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়ন করেন। সেখান থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮১ সাল থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত পালমোলিভ রিসার্চ সেন্টার থেকে তার গবেষণার ফসল কোলগেট (টুথ পাউডার) এবং ৪টি ইউএস পেটেন্ট আবিস্কার করেন। তিনি উক্ত গবেষণা কেন্দ্রের সিনিয়র রিসার্চ সায়েন্টিস্ট হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন।
দীর্ঘদিন ধরে ড. সামছুল করিম বাকার এককালের পরিত্যক্ত জমির বাড়ি নতুন রূপায়নের মধ্য দিয়ে ব্রত রয়েছেন। সৃষ্টি করেছেন মানব সেবার এক নতুন অধ্যায়। অতি অল্পসময়ের মধ্যে তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক সংগঠনসহ সামাজিক কর্মকান্ডে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে আসছেন। ড. এসকে বাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নিয়ে ড. এসকে বাকার কলেজ প্রতিষ্ঠা করে শিক্ষার আলো জ্বালিয়ে আসছেন। ২০১৯ সালে কলেজটি এমপিওভুক্তি হয়। রঘুনাথপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা ব্যয় করে ২টি অত্যাধুনিক ভবন নির্মান করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাছাড়া ধামালিয়া লিটল ফ্লাওয়ার কিন্ডার গার্টেন, মজিদুল ইসলাম ফ্রি ফোরকানিয়া মাদরাসা, মজিদুল ইসলাম হাফিজিয়া ও এতিমখানা, স্থাপন মজিদুল ইসলাম করেছেন। সরকারি শাহপুর মধুগ্রাম কলেজ ছাত্রাবাস, মধুগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়, রূপরামপুর বাকার সৈকত সঙ্গিত একাডেমিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভবনে অনুদান দিয়ে দৃষ্টান্ত রেখেছেন। অত্যাধুনিক কারুখচিত মসজিদ নির্মান করেছেন বাড়ির সামনে। আমেরিকা প্রবাসি ও বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ড. সামছুল করিম বাকার বলেন; জনকল্যাণে ব্রত হলে একজন মানুষ সত্যিকারে আত্মতৃপ্ত হয়।
(1)