মোঃ আব্দুল আজিজ, পাইকগাছাঃ অবশেষে পাইকগাছা পৌর সদরে খুলনা জেলা পরিষদের জায়গার উপর মধুমিতা পার্কের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। আদালতের আদেশে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এমএম মাহমুদুর রহমানের উপস্থিতিতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আল-আমিনের নেতৃত্বে পার্কের পুকুর পাড়ে গড়ে ওঠা আঁধা-পাকা, সেমিপাকা স্থাপনা স্কেভেটর দিয়ে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া হয়। উচ্ছেদ কাজে সার্বিক ভাবে সহযোগিতা করে স্থানীয় প্রশাসন, থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস। স্থাপনা উচ্ছেদে মধুমিতা পার্ক সংরক্ষণ কমিটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানালেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ২০ বছরেরও অধিক সময় যারা স্থাপনা নির্মাণ করে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিল সেসব সাধারণ ব্যবসায়ীরা।
উল্লেখ্য, পাইকগাছা পৌরসভার প্রাণ কেন্দ্রে খুলনা জেলা পরিষদের ১ একর আয়তনের একটি পুকুর রয়েছে। পুকুরের পানি এলাকার মানুষ সুপেয় পানি হিসেবে ব্যবহার করায় পুকুরটি মিষ্টি পুকুর নামে পরিচিত। ১৯৮০ সালের দিকে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ও খুলনা জেলা প্রশাসকের সার্বিক সহযোগিতায় পুকুরটির চারিপাশে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ এবং পার্কের আদলে পুকুরের পাড়ে পাঁকা রাস্তা ও বসার জন্য বেঞ্চ নির্মাণ করা হয়। ফলে এটি মধুমিতা পার্ক নামে এলাকায় পরিচিত হয়ে ওঠে। সেই থেকে এখনো পর্যন্ত এলাকার মানুষ এটিকে মধুমিতা পার্ক ও মিষ্টি পুকুর নামে জেনে আসছে।
এদিকে ১৯৯৫-৯৬ সালের দিকে এলাকার কতিপয় ব্যবসায়ীরা জেলা পরিষদের নিকট থেকে পুকুরের পাড় ইজারা নিয়ে মার্কেট গড়ে তোলে। এর ফলে সুপেয় পানি ও মধুমিতা পার্কের চিত্তবিনোদন ব্যবস্থা বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় ২০০৫ সালে স্থানীয় আইনজীবী জিএ সবুর, আবু সাঈদ, আব্দুর সাত্তার মালী ও প্রশান্ত মন্ডল সহ অনেকেই বাদী হয়ে জনস্বার্থে মার্কেটের সকল কার্যক্রম বন্ধ ও উচ্ছেদের দাবীতে সিনিয়র সহকারী জজ আদালত পাইকগাছায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটি পরবর্তীতে উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ায়। হাই কোর্টে একটি রীট পিটিশন দাখিল করা হয় যার নং- ৩৫৯০/০৫।
উচ্চ আদালত মধুমিতা পার্কের অভ্যন্তরে অবৈধ নির্মাণ কাজ বন্ধের আদেশ দেন। এ আদেশ বাস্তবায়ন না হওয়ায় পরবর্তীতে মধুমিতা পার্ক সংরক্ষণ কমিটি বিজ্ঞ উচ্চ আদালতে কোর্ট অব কমেন্ট পিটিশন দাখিল করেন, যার নয়- ১০২/২২। পিটিশনের কয়েক দফা শুনানী আন্তে চলতি বছরের ১৩ মার্চ বিজ্ঞ উচ্চ আদালত মামলার বিবাদীদ্বয়কে ২০ দিনের মধ্যে মধুমিতা পার্কের সকল স্থাপনা উচ্ছেদ করে পার্কটিকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য আদেশ দেন। সর্বশেষ আদালতের আদেশ মোতাবেক শনিবার সকালে স্কেভেটর দিয়ে অবৈধ স্থাপনা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া হয়। আদালতের আদেশ মোতাবেক স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে বলে জানান, খুলনা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উপ-সচিব এমএম মাহমুদুর রহমান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আল-আমিন ও আশাশুনি ফায়ার স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা আবুল কালাম মোড়ল। এদিকে স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন মধুমিতা পার্ক সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি এ্যাডঃ এফএমএ রাজ্জাক। তবে এ উচ্ছেদের ফলে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন বলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনেকেই জানান।
(4)