যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার বাসিন্দা আবদুল্লাহ আল কুরদি তার স্ত্রী ও সন্তানদের মৃত্যুর খবর শুনে বলতে থাকেন, আমাকেও সন্তানদের সাথে কবর দাও। বৃহস্পতিবার রয়টার্সে প্রকাশিত এক সংবাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। বুধবার তুরস্ক উপকূলে ডুবে যাওয়া নৌকা থেকে জীবিত উদ্ধার আবদুল্লাহ বৃহস্পতিবার জ্ঞান ফিরে হাসপাতালের টিভিতে তিনি প্রথম ছোট ছেলে আইলানের মৃত্যুর খবর দেখেন। এরপর জানতে পারেন তার স্ত্রী ও বড় ছেলেও বেঁচে নেই। মৃত্যু হয়েছে পরিবারের মোট ১২ জন সদস্যের। সব হারিয়ে আবদুল্লাহর এখন একটাই আকুতি ‘আমাকেও সন্তানদের সাথে কবর দাও।’
এদিকে উবু হয়ে তুরষ্কের সৈকতে পড়ে থাকা উজ্জ্বল লাল টি-শার্টের সাথে নীল হাফপ্যান্ট পরা অজানা শিশুটির পরিচয় জানান বাবা আবদুল্লাহই। দুই সন্তান ও স্ত্রীকে সাথে নিয়ে আশ্রয়ের সন্ধানে নৌকায় চড়েছিলেন যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার বাসিন্দা আবদুল্লাহ আল কুরদি। বুধবার তুরস্ক উপকূলে এসে ডুবে যায় তাদের নৌকাটি। আশঙ্কাজনক অবস্থায় জীবিত উদ্ধারের পর বুধবার আবদুল্লাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
রয়টার্স জানায়, একের পর এক লাশের সন্ধান আসছিল আর উন্মাদের মতো আচরণ করছিলেন আবদুল্লাহ। এক সময় তিনি সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন। বিকেলের দিকে জ্ঞান ফিরে পেয়ে তিনি বারবার বলতে থাকেন, আমাকেও সন্তানদের সাথে কবর দাও। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আবদুল্লাহ তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে সিরিয়ায় নিজের যুদ্ধবিধ্বস্ত শহর কোবানিতে ফিরতে চান। কাদের জন্য আর ‘নিরাপদে’ থাকার জন্য ঝুঁকি নেবেন তিনি! হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, এটা তার ৩ বছরের ছেলে আয়লান আল কুরদি। যে জামা, যে জুতা পরে সে নিথর হয়ে বালিতে শুয়ে ছিল- মঙ্গলবার তিনি নিজ হাতে তাকে ওই পোশাক পরিয়েছিলেন। ওই নৌকায় তার স্ত্রী রাইহান ও ৫ বছর বয়সী ছেলে গালিপও ছিল। এরপর দিনের বিভিন্ন সময়ে মা-ছেলেসহ আরো ১১জনের লাশ উদ্ধার করে তুরস্কের পুলিশ।
অপরদিকে উবু হয়ে তুরষ্কের সৈকতে পড়ে থাকা আইলানের প্রাণহীন দেহ ইউরোপসহ সমগ্র বিশ্বে গভীর আবেগের জন্ম দিয়েছে। সারা বিশ্বের সামাজিক মাধ্যমে অসংখ্যবার ছবিটি দেখেছে মানুষ। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অনেক দেশের সংবাদমাধ্যম মৃত শিশুটির ছবি প্রথম পৃষ্ঠার একটি বড় অংশজুড়ে ছাপিয়েছে। এখন আইলানের এ হৃদয়বিদারক শেষ ছবিটির দর্শক, মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক সবাই পীড়াদায়ক ছবিটি অন্য সবাইকে দেখাতে চান; যাতে এটা সিরিয়ায় যুদ্ধ বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আবেদন তৈরি করতে পারে। নিউইয়র্কের টাইমসের সম্পাদকীয়ের শিরোনামটি হলো- ‘জীবন দিয়ে কঠোর ইউরোপীয়দের ভবিষ্যৎ বুঝিয়ে গেছে ছোট্ট আইলান।’ এ একটি ছবিই বলে দিচ্ছে ইউরোপজুড়ে অভিবাসন সংকট কতটা চরমে পৌঁছেছে। বিশ্বজুড়ে মানুষের বেদনার কারণ হয়েছে প্রাণহীন এই শিশু।