তবে সব থেকে বেশি দেখা যায় অস্টিয়োআর্থারাইটিস। এটি ডিজেনেরেটিভ আর্থারাইটিস। কার্টিলেজ ক্ষয়ে গিয়ে এ ধরনের আর্থারাইটিস হয়। মূলত হাঁটু ও হিপ জয়েন্টে দেখা দেয়। গোড়ালিতেও হয়।
অস্টিয়োআর্থারাইটিসে দুটি হাড়ের মধ্যের ফ্লুইড শুকিয়ে গিয়ে হাড় দুটি কাছাকাছি চলে আসে। হাড় ছোট হয়ে যায়। হাড়ে হাড়ে ঘর্ষণ হয়। তার থেকেই প্রবল ব্যথা হয়। পা ধনুকের মতো বেঁকে যায়।
রিউম্যাটয়েড অটো ইমিউন ডিজিস। এতে অনেকগুলো জয়েন্টে এক সঙ্গে ব্যথা হয়। হাত-গোড়ালি-কাঁধ-কব্জি-পা-কোমর-শিরদাঁড়া— বিভিন্ন অংশের জয়েন্টে ব্যথা শুরু হয়।
গাউট আর্থারাইটিসেও গোড়ালি-সহ বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা হয়। পায়ের বুড়ো আঙুল লাল হয়ে যায়।
প্রচলিত ধারণা, আর্থারাইটিস বয়স্কদের হয়। ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে আর্থারাইটিস খুব বেশি হয়। তাই বলে কম বয়সীদের হয় না, তা কিন্তু নয়। যে কোনও বয়সেই আর্থারাইটিস হতে পারে। ছোটদের মধ্যে দেখা দেয় রিউম্যাটিক আর্থারাইটিস। বড়দের অস্টিয়োআর্থারাইটিস ছাড়াও রিউম্যাটয়েড, গাউট ইত্যাদি আর্থারাইটিস হতে পারে।
কেন হয় আর্থারাইটিস
আগে কোনও আঘাত পেলে পরে আর্থারাইটিসের আশঙ্কা থাকে। আঘাতের জায়গায় মাইক্রোফ্র্যাকচার হয়। সেটাই পরবর্তীতে আর্থারাইটিস ডেকে আনে।
• ইনফেকশন থেকে আর্থারাইটিস হতে পারে।
• পারিবারিক ইতিহাস থাকলে আর্থারাইটিসের আশঙ্কা থাকে।
• বয়সের সঙ্গে সঙ্গে আর্থারাইটিসের আশঙ্কা বাড়ে।
• মেয়েরা আর্থারাইটিসে বেশি ভোগেন। আর্থারাইটিসে যাঁরা ভোগেন, তাঁদের ৬০ শতাংশ নারী। তবে গাউট আর্থারাইটিসে পুরুষেরা বেশি ভোগেন।
• লাইফস্টাইল-এর জন্যও আর্থারাইটিস হয়।
• ওজন বাড়লে আর্থারাইটিসের আশঙ্কা বাড়ে। বিশেষ করে অস্টিয়োআর্থারাইটিস খুব বেশি দেখা দেয়।
• হাঁটু বার বার মুড়তে হয়, এ রকম কোনও কাজ করলে হাঁটুর অস্টিয়োআর্থারাইটিসের আশঙ্কা বাড়ে।
• রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের স্বাভাবিক মাত্রা প্রতি ডেসিলিটারে পাঁচ মিলিগ্রাম। ইউরিক অ্যাসিড এর থেকে বেশি হলে গাউট আর্থারাইটিসের সম্ভাবনা বাড়ে।
• ফিজিয়োথেরাপিতে সবচেয়ে বেশি উপকার মেলে। তবে সমস্যা খুব বেশি হলে জয়েন্ট প্রতিস্থাপন করতে বলা হয়। দুটো হাড়ের মধ্যবর্তী যে ফ্লুই়ড শুকিয়ে গিয়ে আর্থারাইটিস হয়, আজকাল সেই ফ্লুইড ইনজেকশনের মাধ্যমে দেওয়া হয়। তাতে ছয় মাস মতো ভাল থাকেন রোগী।
• প্রয়োজন মতো শর্ট ওয়েভ ডায়াথার্মি, মোমের সেঁক দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
• সঙ্গে প্রয়োজন অনুযায়ী ওষুধ দেওয়া হয়।
• পাশাপাশি, নিজেকে সচল রাখার চেষ্টা করতে হবে। ব্যথায় কাবু হয়ে বসে পড়লে শয্যাশায়ী হয়ে পড়বেন। তাই ব্যথা কমার সঙ্গে সঙ্গে মনে জোর এনে নানা রকম এক্সারসাইজ করে শরীরকে সচল রাখতে হবে।
ভাল থাকতে হলে
• অস্টিয়োআর্থারাইটিস হলে হাঁটু মুড়ে বসবেন না।
• কমোড ব্যবহার করবেন।
• বাবু হয়ে বসবেন না।
• যে সব কাজ করলে জয়েন্টে চাপ পড়তে পারে, সেগুলো করবেন না।
• জয়েন্টে রক্ত চলাচল যাতে ভাল হয়, তার জন্য চিকিৎকের পরামর্শ মতো ব্যায়াম করতে হবে। ব্যথা না থাকলে তবেই ব্যায়াম করবেন। ব্যথা অবস্থায় ব্যায়াম করলে উল্টে ব্যথা বাড়ে।
• খুব বেশি ব্যথা হলে ঠাণ্ডা সেঁক দেবেন।
• ব্যথা সহ্যের মধ্যে চলে এলে তখন গরম সেঁক দেওয়া যেতে পারে।
• মাঝে মাঝেই গলায় ইনফেকশন হলে, ঠাণ্ডা খেলে গলা ব্যথা শুরু হলে, বা গাঁটে ব্যথা শুরু হলে আগেই চিকিৎসক দেখানো দরকার। তা হলে আগেভাগেই আর্থারাইটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
• আর্থারাইটিস হলে রেড মিট কম খাবেন। রেড মিট-এ ইনফ্লামেশন বাড়ে।
• আর্থারাইটিসে হিমোগ্লোবিন কমে যায়। তাই দুধ, ছানা, সবুজ শাকসব্জি ও মাছ খাবেন।
• অস্টিয়োআর্থারাইটিস নিয়ন্ত্রণ করতে ওজন কমাতে হবে। তাতে হাঁটুর ওপর চাপ কমবে।
• আর্থারাইটিসে আক্রান্ত হলে সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট ব্যায়াম করা দরকার। ৫ দিনে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করা যেতে পারে। একটানা না করে প্রতিবারে ১০ মিনিট করে ব্যায়াম করতে হবে। শারীরিক ভাবে সচল থাকলে আর্থারাইটিস কম কাবু করে। হাঁটা, সাইকেল চড়া বা সাঁতার কাটলে আর্থারাইটিসের ব্যথা কমে। পঙ্গুত্বকেও দূরে রাখা যায়।-ঢাকাটাইমস
(20)