শনিবার মধ্যরাত পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা যোগাযোগ করেও সৃষ্ট জটিলতা নিরসন করতে পারেনি। ফলে চূড়ান্ত তালিকার জন্য আরও একটি দিন অপেক্ষা করতে হবে নির্বাচন পরিচালনাকারী এ প্রতিষ্ঠানটিকে।
ইসির করা খসড়া তালিকায় দেখা যায়, ২৩৫টি পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সংখ্যা ২৩৯টি। কিন্তু দলের পক্ষ থেকে প্রতিটি পৌরসভায় একক প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। সে হিসেবে মেয়র পদ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ার কথা ২৩৫টি।
এদিকে তালিকায় বিএনপির ২৩৪ জনের কথা বলা হয়েছে। বিএনপি প্রতিটি পৌরসভায় একক প্রার্থী দিয়েছে। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা ৫০৯টি।
ইসির হিসাবে, প্রতিটি পৌরসভায় একজন করে দলীয় প্রার্থী থাকলেও খুলনার পাইকগাছায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সংখ্যা ৩ জন, বরগুনার বেতাগীতে ২ জন এবং মাগুরায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সংখ্যা ২ জন।
মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়র পদে ১ হাজার ২২৩ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। মনোয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের প্রথম দিন শনিবার পার করেছে ইসি। তবে এখনও যাচাই-বাছাইয়ের কোনো তথ্য ইসিতে আসেনি।
ইসি সূত্র জানায়, আগ্রহী প্রার্থীরা ৩ ডিসেম্বর মনোয়নপত্র দাখিল করেন। কিন্তু ইসি ২৮ ঘণ্টা পর ৪ ডিসেম্বর দাখিলকৃতদের তথ্য প্রকাশ করে। ২৩৫টি পৌরসভায় মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের দাখিল করা মনোনয়ন সংখ্যা প্রকাশ করতে সক্ষম হয়। তবে দলভিত্তিক তথ্য দিতে পারেনি ইসি। পরে নির্বাচন পরিচালনাকারী কর্তকর্তাদের কাছে ইসি সচিব সিরাজুল ইসলাম দলভিত্তিক তথ্য চাইলে শনিবার তথ্য সংগ্রহে তোড়জোড় শুরু হয়। ইসির কয়েকজন পদস্থ কর্মকর্তা শনিবার দিনভর যাচাই-বাছাই করে। মধ্যরাতে খসড়া তালিকা প্রকাশ করলেও সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সংখ্যা ৪ জন বেশি হয়। এতে বেকাদায় পড়ে ইসি।
এ বিষয়ের ইসির উপ-সচিব সামসুল আলম দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। কিন্তু কিছু তথ্যে গড়মিল পাওয়া যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের প্রতিটি পৌরসভায় একজন করে প্রার্থী থাকলেও কয়েকটিতে একের অধিক হয়েছে। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।’
সূত্র জানায়, দলীয় প্রধানের স্বাক্ষর জাল করে মনোয়নপত্র দাখিল করার কারণে এমনটি হয়েছে। তবে অনেকে দল থেকে আগে প্রত্যায়ন নিয়ে ৩ ডিসেম্বরের আগে মনোয়নপত্র দাখিল করেছেন। আবার কেউ কেউ দলের সর্বশেষ তালিকা অনুযায়ী শেষ দিন ৩ ডিসেম্বর মনোয়ণপত্র দাখিল করেছেন। এ কারণে বেশি হতে পারে।
শুক্রবার ইসির পরিচালক (জনংযোগ) আসাদুজ্জামান দ্য রিপোর্টকে জানান, তিন পদে ১৩ হাজার ৬৮৯ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এদের মধ্যে মেয়র পদে ১ হাজার ২২৩ জন, সংরক্ষতি মহিলা কাউন্সিলর পদে ২ হাজার ৬৬৮ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৯ হাজার ৭৯৮ জন।
মনিটরিং কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলা
মনোনয়নপত্র দাখিল, যাচাই-বাছাই, আপিল ও প্রত্যাহার, ফলাফলসহ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ এবং মনিটরিংয়ের জন্য ইসির ১৪ জন শীর্ষ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়েছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। এ লক্ষ্যে তাদের সাপ্তাহিক ছুটিও বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু শুক্র ও শনিবার তাদের মধ্যে হাতেগোনা দুয়েকজন ছাড়া কেউ-ই সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেননি। যারা এসেছেন তারাও অনেকটা দায়সারাভাবে দায়িত্ব পালন করে অফিস ত্যাগ করেছেন। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন নির্বাচন পরিচালনা শাখা। পরে বাধ্য হয়ে নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপ-সচিব সামসুল আলম কর্মকর্তাদের তালিকা ধরে ধরে ফোন দিয়ে অফিসে আসতে অনুরোধ করেন।ফোন পেয়ে সন্ধ্যার দিকে দু’একজন এলেও অধিকাংশ কর্মকর্তা বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে আসেননি।
ইসির উপ-সচিব সামসুল আলম স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনায় জানানো হয়েছিল, ২৩৫টি পৌরসভা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিল, যাচাই-বাছাই, আপিল ও প্রত্যাহার ও ফলাফলসহ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ এবং মনিটরিংয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তথ্য সংগ্রহ করে নির্বাচন পরিচালনা-২ শাখার যুগ্ম সচিবের কাছে প্রদান করবেন। তাই ৪, ৫ ও ৬ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও জাতীয় পরিচয় নিববন্ধন অনুবিভাগ অফিস সময়ের পর ও সরকারি ছুটির দিনে অফিসে অবস্থান করে সার্বিক সহযোগিতা করবেন। কিন্তু শুক্র ও শনিবার দু’দিনই ইসিতে শুনশান পরিবেশ বিরাজ করেছে। দেশব্যাপী এতো বড় নির্বাচন হলেও ৫ কমিশনার ও নির্বাচন কমিশন সচিব একবারের জন্যও ইসিতে ঢু মারেননি। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিম্ন পদস্থ কর্মকর্তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘স্যাররা অফিসে আসলে কাজ করতে ভালো লাগে। বাধ্য হয়ে সকাল থেকে কাজ করলেও অফিসে প্রাণচঞ্চলতা নেই।’
অপর এক কর্মকর্তা দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘যাগো কাম করার কথা তাগো কেউ-ই আসেনি। আমাগো এনে বসিয়ে রাখছে। সকাল থেকে এতিমের মতো বসে আছি।’
উপ-সচিব সামসুল আলম দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘এতো বড় নির্বাচন সব কর্মকর্তা একত্রে দায়িত্ব পালন না করলেও সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে যায়। এতে সময়ের তথ্য সময়ে দেওয়া যায় না। আপনারা তথ্যের জন্য অপেক্ষা করলেও দিতে পারছি না।’
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বাছাই চলবে ৫ ও ৬ ডিসেম্বর এবং প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৩ ডিসেম্বর। ১৪ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ। ৩০ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ। এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে মেয়র পদে ভোটগ্রহন হচ্ছে। তবে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন আগের মতোই নির্দলীয় থাকবে।
(1)