জুমার নামাজ
শুক্রবার ছুটির দিন থাকায় গাজীপুরসহ আশপাশের অঞ্চলগুলো থেকে বিপুল সংখ্যক মুসল্লী জুমার নামাজ আদায় করেন। বাংলাদেশের কাকরাইল মসিজদের খতিব হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ জোবায়ের জুমার নামাজের ইমামতি করেন। বাদ আসর বয়ান করবেন ভারতের মাওলানা মোহাম্মদ জোয়াহের। বাদ মাগরিব বয়ান করবেন দিল্লির হযরত মাওলানা মোহাম্মদ সাদ। ইজতেমা ময়দান ছাড়াও আশপাশের রাস্তাঘাট, বিভিন্ন ভবনের ছাদ, কারখানা চত্বর সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান চত্বরে অবস্থান নিয়ে মুসল্লীরা নামাজ আদায় করেন।
বয়ান ও অনুবাদ
বিশ্ব ইজতমোয় বাংলাদেশ ও ভারতের তাবলীগ মারকাজের শুরা সদস্য ও বুর্জগরা বয়ান পেশ করবনে। মূল বয়ান উর্দূতে হলেও বাংলা, ইংরেজী, আরবী, তামিল, মালয়, র্তুকি ও ফরাসসিহ বিভিন্ন ভাষায় তাৎক্ষণকি অনুবাদ করা হয়। ইজতমোয় বিভিন্ন ভাষাভাষি মুসল্লীরা আলাদা আলাদা বসনে এবং তাদরে মধ্যে একজন করে মুরব্বি মূল বয়ানকে তাৎক্ষণকি অনুবাদ করে শোনান। এদিকে ইজতেমা শুরুর দিন শুক্রবার হওয়ায় ইজতেমা মাঠে জুমার নামাজে অংশ নিতে অনেক মুসল্লি সকাল থেকেই নামাজের আগ পর্যন্ত ইজতেমাস্থলে আসেন। বয়ান, কারগুজারি, তাশকিল, তালিম, তিলাওয়াত, জিকির ও সালাতে ব্যস্ত সময় পার করেন তারা। ইজতমোয় যোগদানকারী মুসল্লি ছাড়াও জুমার নামাজে অংশ নেন গাজীপুরসহ আশপাশের এলাকার লাখ লাখ মুসল্লি।
জুমার নামাজে ভিআইপিরা
শুক্রবার ইজতেমা ময়দানে জুমার নামাজ আদায় করতে রাজধানী ঢাকা থেকে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক নেতৃবর্গসহ সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের ভিআইপি অতিথিরা ইজতেমা ময়দানে যোগ দেন।
তিন মুসল্লীর মৃত্যু
টঙ্গী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ তালুকদার জানান, টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে এসে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে ওই তিনজনের মৃত্যু হয়। তারা হলেন, কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর থানার চকলারপাড় গ্রামের নূরুল ইসলাম (৭২) ও সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ থানার রনকেলী গ্রামের জয়নাল আবেদীন (৫৫)। বাদ ফজর ইজতেমা ময়দানে তাদের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নাটোরের সিংড়া থানার গোটিয়া এলাকার মামুদ আলীর ছেলে ফরিদ উদ্দিন (৭২) মারা যান। ইজতেমাস্থালেই তাদের জানাজা হয়েছে। এরই মধ্যে তিনজনের মরদেহ নিজ নিজ এলাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান ওসি। ইজতেমায় থাকা চিকিৎসকের বরাত দিয়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ফরিদ উদ্দিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে হৃদরোগে আক্রান্ত হন, পরে রাত পৌণে ১১টার দিকে নুরুল ইসলাম এবং মধ্যরাত ১টার দিকে জয়নালের মৃত্যু হয়।
৪০ জন হকার আটক
পুলিশ কর্মকর্তা ফিরোজ তালুকদার জানান, ইজতেমার ময়দানের আশপাশ থেকে ৪০ জন হকার আটক করা হয়েছে। শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে তাদের আটক করা হয়। বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের আশপাশে বসে পসরা সাজিয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বিভিন্ন পণ্য ও খাদ্য সামগ্রী বিক্রির অভিযোগে ৪০ জন হকারকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ভীড় ও শীতের প্রকোপ
৬নং খিত্তার মুসল্লী নূরুল ইসলাম বলেন, এ বছর মাত্র ১৭ জেলার মুসল্লী অংশ নেওয়ায় রাস্তাঘাটে ঠাসাঠাসি কম। টয়লেট, গোসল, রান্নাবান্না প্রভৃতিস্থানে দীর্ঘ লাইনের প্রয়োজন হয়না। বৃহস্পতিবার রাতে শীতের প্রকোপ একটু বেশি ছিল।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা
গাজীপুর ট্রাফিক পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. শাখাওয়াৎ হোসেন জানান, দুই পর্বে দেড় হাজার ট্রাফিক পুলিশ সদস্য ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকায় দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া সার্বিক নিরাপত্তার জন্য এবার বিভিন্ন স্থানে বসানো হয়েছে ৬০টি ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ও এম্বুলেন্স এর আওতা মুক্ত থাকবে। ইজতেমা মাঠের সার্বিক নিরাপত্তায় পুলিশ ও র্যাব ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করেছে। সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বিক নিরাপত্তা মনিটরিং করছেন কন্ট্রোল রুম থেকে। খিত্তায় খিত্তায় সাদা পোষাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করছেন। তিনি জানান, পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা ৫টি করে স্তরে বিভক্ত হয়ে ইউনিফর্ম ও সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া বাইনোকুলার, মেটাল ডিটেক্টর, নৌ-টহল, চেকপোষ্ট স্থাপন করে নিরাপত্তা বজায় রেখেছেন। র্যাবের হেলিকপ্টার টহল দিতে দেখা গেছে। স্থাপন করা হয়েছে সিসি ক্যামেরা, র্পযবক্ষেণ টাওয়ার।
ইজতেমায় ১৭ জেলার মুসল্লি
ইজতেমা পরিচালনা কমিটির সদস্য প্রকৌশলী মাওলানা মো. গিয়াস উদ্দিন জানান, এবার প্রথম দফার ইজতেমায় বাংলাদেশের ১৭টি জেলার মুসলমানরা ছাড়াও এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে ৯৩টি দেশের ৬ হাজার ১১২ জন মুসল্লি উপস্থিত হয়েছেন। শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ভারত, পাকিস্তানসহ এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ, আমেরিকাসহ ৯৩টি দেশের ৬ হাজার ১১২জন মুসল্লি অংশ নিয়েছেন। আগামী দুই দিনে এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে তিনি জানান।
ইজতেমার প্রথম পর্বে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার থেকেই তাবলিগ জামাতের সদস্যরা মালামালসহ তুরাগ তীরে হাজির হতে থাকেন। লাখ লাখ মুসলমানের ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনিতে সোনাবানের শহর টঙ্গী পরিণত হয় ধর্মীয় উৎসবের নগরীতে। ইজতেমা প্রাঙ্গণে প্রতিবারের মতোই তাবলিগের সদস্যদের জন্য স্থান নির্দিষ্ট করা হয়েছে। ১৭টি জেলার তাবলিগ সদস্যরা এবার ২৭টি স্থানে বিভক্ত হয়ে সম্মিলনের এই তিনদিন অবস্থান করবেন। এই নির্দিষ্ট এলাকাকে বলা হয় খিত্তা।
জেলাগুলো হলো- ঢাকা জেলার একাংশ, নারায়ণগঞ্জ, শেরপুর, মাদারীপুর, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, গাইবান্ধা, নীলফামারী, পঞ্চগড়, লক্ষ্মীপুর, সিলেট, নড়াইল, মাগুরা, চট্টগ্রাম, পটুয়াখালী, ভোলা ও ঝালকাঠি। এসবের মধ্যে ঢাকা জেলা ১ থেকে ৬ নং খিত্তায়, শেরপুর ৭নং খিত্তা, নারায়নগঞ্জ ৮ ও ১১ নং খিত্তা, নীলফামারী ৯নং খিত্তা, সিরাজগঞ্জ ১০নং খিত্তা, নাটোর ১২নং খিত্তা, গাইবান্ধা ১৩নং খিত্তা, লক্ষ্মীপুর ১৪ ও ১৫নং খিত্তা, সিলেট ১৬ ও ১৭নং খিত্তা, চট্টগ্রাম ১৮ ও ১৯নং খিত্তা, নড়াইল ২০নং খিত্তা, মাদারীপুর ২১নং খিত্তা, ভোলা ২২ ও ২৩নং খিত্তা, মাগুরা ২৪ নং খিত্তা, পটুয়াখালী ২৫নং খিত্তা, ঝালকাঠি ২৬নং খিত্তা এবং পঞ্চগড় ২৭নং খিত্তায় মুসল্লিরা অবস্থান নিয়েছেন।
যৌতুক বিহীন বিয়ে
ইসলামিক শরিয়া অনুযায়ি শনিবার বাদ আসর শতাধিক যৌতুকবিহীন বিয়ে অনুষ্ঠিত হবে। শুক্রবার সকাল থেকে ওইসব বিয়ের জন্য বয়ান মঞ্চের কক্ষেই বর-কনের নাম তালিকাভুক্ত চলছে।
ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প
ইজতেমা ময়দানে হামদর্দ, ইবনে সিনা, টঙ্গী ওষুধ ব্যবসায়ী সমিতি, আবেদা মেমোরিয়াল প্রাইভেট হাসপাতাল লিমিটেড, সি কে ডি এন্ড ইউরোলজিস্ট হসপিটাল, যমুনা ব্যাংক ফাউন্ডেশন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চিকিৎসা কেন্দ্র, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনসহ ৫৪টি ফ্রি মেডিকেল বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবার জন্য খুলেছে।
ইতিহাসে ইজতেমা
ইজতেমাসুত্রে জানা গেছে, ১৯৪৬ সালে প্রথম কাকরাইল মসজিদে ইজতেমার আয়োজন শুরু হয়। তারপর ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রামের হাজী ক্যাম্পে ও ১৯৫৮ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর লোকসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ১৯৬৬ সালে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে (বর্তমানস্থলে) স্থানান্তর করা হয়। পরে সরকারিভাবে তুরাগ তীরের ১৬০একর জমি স্থায়ীভাবে ইজতেমার জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়।
বিকল্প যাতায়াত
মুসল্লীদের পারাপারের জন্য ইজতমো ময়দানসংলগ্ন তুরাগ নদীর ওপর আট স্থানে আটটি ভাসমান সেতু স্থাপন করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেড এগুলো স্থাপন করেন।
ভ্রাম্যমাণ আদালত
গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. রাহেনুল ইসলাম জানান, টঙ্গীর ইজতেমোস্থল ও আশপাশের এলাকায় ইজতমো চলাকালে প্রতিদিন তিনটি পালায় সড়ক-মহাসড়কে অবধৈ দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদ কাজে নিয়োজিত রয়েছে। এছাড়াও হোটলে, রেস্তোরাঁ, বিভিন্ন দোকানে খাবারের মান ও মেয়াদ পরীক্ষা করতে আরো ১০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে। এজন্য গাজীপুরে ১৪ জনসহ বিভিন্ন জেলার ২৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওইসব আদালত পরিচালনা করছেন।
(2)