বাজার মূল্যও অনেক বেশী। এমনকি চাষাবাদের উন্নত কলাকৌশল ও কৃত্রিম প্রজনন প্রযুক্তি উদ্ভাবন হলে বিলপ্তী প্রায় দাতিনা মাছের প্রজাতি সংরক্ষন, উৎপাদন বৃদ্ধি সহ দেশীয় চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানী করে প্রচুর পরিমানে বৈদেশীক মুদ্রা অর্জন সম্ভব বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। উল্লেখ্য সারাবিশ্বে দাতিনা মাছের অসংখ্য প্রজাতি রয়েছে।
ভারত মহাসাগর ও পূর্ব আফ্রিকা অঞ্চলে দাতিনা মাছের উপস্থিতি বেশী লক্ষ করা যায়। আমাদের দেশে সাদা, লাল ও স্পটেড জাতের দাতিনা মাছ পাওয়া যায়। তবে সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় অঞ্চলে সাদা দাতিনা বেশী পাওয়া যায়।
দাতিনার বৈজ্ঞানিক নাম (Pomadasys Hasta) পোমাডাসিস হাস্তা, ইংরেজি নাম (Grunter Fish) গুন্টার ফিস। দাতিনা মাছের আমাদের দেশে তেমন কোন তথ্য নাই বললেও ভুল হবেনা। তবে ২০০২ সালের খুলনা বিশ্ব বিদ্যালয়ের এফএসআরটি ডিসিপ্লিনের এক সমিক্ষার তথ্যমতে দাতিনা মাছ সর্বোচ্চ ৩১ সেঃ মিঃ ও ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে।
এক্ষেত্রে স্থানীয়দের মতে দাতিনা মাছ ১ কেজিরও বেশি বড় হয়ে থাকে। এক সময় সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকার নদ-নদীতে প্রচুর পরিমাণে সাদা জাতের দাতিনা পাওয়া যেত। কালের বিবর্তনে জলবায়ুর পরিবর্তন, পরিবেশ বিপর্যয়, উন্নত চাষাবাদের কলাকৌশল, কৃত্রিম প্রজনন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও অভায়াশ্রমের অভাবে নোনা পানির সাদা প্রজাতির দাতিনা মাছ আজ অনেকটাই বিলুপ্তীর পথে।
সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উৎসের উপর নির্ভর করে চলছে চাষাবাদ। উপকূলীয় খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা এলাকায় প্রায় ২ লাখ হেক্টর জমিতে চিংড়ী চাষ হয়। প্রাকৃতিক উৎস থেকে নদীর জোয়ারের পানির সাথে দাতিনা মাছের যে পোনা গুলো ঘেরের ভিতরে পবেশ করে তা চিংড়ীর সাথে স্বাভাবিক ভাবেই বেড়ে ওঠে। সাধারণত এভাবেই ঘের গুলোতে চিংড়ীর সাথে দাতিনার চাষ হয়। এছাড়া এখনো পর্যন্ত আলাদা ভাবে দাতিনার চাষাবাদ শুরু হয়নি। পাশা-পাশি কৃত্রিম প্রজনন উদ্ভাবন না হওয়ায় পোনা সংকটের কারণে বৃদ্ধি পাচ্ছেনা চাষাবাদ ও উৎপাদন।
অথচ মাছটি সু-স্বাদু হওয়ায় দেশীয় বাজারে প্রচুর চাহিদা রয়েছে। মৎস্য আড়ৎদারী সমবায় সমিতির মোঃ জাকির হোসেন জানান, উৎপাদিত দাতিনা ঢাকা, চট্টগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। অন্যান্য মাছের তুলনায় দাতিনার মূল্য অনেক বেশী। বর্তমানে প্রতিকেজি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা দরে বিক্রয় হচ্ছে। এ ব্যাপারে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা এসএমএ রাসেল জানান, লোনা পানির সাদা মাছের প্রজাতি গুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক ভাবে দাতিনা একটি গুরুত্বপূর্ণ মাছ, এ মাছের অনেক সম্ভাবনা থাকলেও সঠিক চাষাবাদের অভাবে উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছেনা। মাছটি সংরক্ষণ ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে এখনো পর্যন্ত তেমন কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
তবে দাতিনার সম্ভাব্যতা যাচায়ের লক্ষে মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে একটি জরিপ কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে কাঁকড়া ও কুঁইচা’র ন্যায় দাতিনার জন্য আলাদা পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে মৎস্য অধিদপ্তরের এ কর্মকর্তা জানান।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, লোনা পানি কেন্দ্রের উর্দ্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ লতিফুল ইসলাম জানান, উপকূলীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্পন্ন বিভিন্ন মাছের উন্নত চাষাবাদের কলাকৌশল ও কৃত্রিম প্রজনন উদ্ভাবনের লক্ষে ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা কাজ করে যাচ্ছে।
ইতোমধ্যে নোনা টেংরা, পারশে ও কাঁকড়ার কৃত্রিম প্রজনন উদ্ভাবন সম্ভব হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অর্থনৈতিক দিক থেকে দাতিনারও অনেক গুরুত্ব রয়েছে। মাছটির চাষাবাদের উন্নত কলাকৌশল ও কৃত্রিম প্রজনন উদ্ভাবন হলে বিলুপ্তী প্রায় এ প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ ও উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। ফলে দেশীয় চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানী করে প্রচুর পরিমানে বৈদেশীক মুদ্রা অর্জিত হবে।
অন্যান্য প্রজাতির ন্যায় দাতিনার উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবনে ইনস্টিটিউটের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে বলে উর্দ্ধতন এ বিজ্ঞানী জানান।
এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে মৎস্য অধিদপ্তর ও মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এমনটাই প্রত্যাশা উপকূলবাসীর।
-মোঃ আব্দুল আজিজ, পাইকগাছা, খুলনা
(42)