বিধ্বস্ত বাঁধ নির্মাণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে সরকারি বেসরকারিভাবে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ করা হলেও ভোগান্তি কমেনি উপকূলবাসীর। মাত্র আধাঘণ্টার তাণ্ডব, এতেই লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় উপকূল। প্রবল তোড়ে বেড়িবাঁধ উপচে এবং ভেঙে পানি ঢুকে চেনা জনপদ মুহূর্তে পরিণত হয় অচেনা এক ধ্বংসস্তূপে।
সিডরের দিন জলোচ্ছ্বাসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল বাগেরহাটের সুন্দরবন সংলগ্ন শরণখোলা উপজেলা। সেখানকার সাউথখালী ইউনিয়নের ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য জাকির হোসেন বলছেন, সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাটগুলো অনেকটাই মেরামত করা হয়েছে। তবে দুই একটি স্থানে এখনও মেরামত দরকার।
জাকির বলেন, তিনি যে ওয়ার্ডের সদস্য, সিডরের আঘাতে শুধুমাত্র এই একটি এলাকা থেকে ৭৭৮ জন মারা গেছেন। সেই ক্ষতি এখনও তারা পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেননি।
এছাড়া আগে যেসব জমিতে ধান চাষ হতো, তার অনেক জমিই নদীতে ভেঙে গেছে। সুন্দরবনের ওপর গ্রামের অনেকেই নির্ভরশীল ছিল। মাছ ধরা, গাছ কাটা ইত্যাদির পারমিট না পাওয়ায় তারা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। কাজের খোঁজে অনেকেই ঢাকা, খুলনা, বরিশালসহ বিভিন্ন শহরে চলে গিয়েছেন।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, সেদিন শুধু বরগুনা জেলাতেই এক হাজার ৩৪৫ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। এখনও নিখোঁজ রয়েছে ১৫৬ জন। তবে বেসরকারি হিসাবে নিহতের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার এবং আহতের সংখ্যা ২৮ হাজার ৫০ জন।
ঝালকাঠিতে বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় লক্ষাধিক পরিবার। কৃষি, মৎস্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, বাঁধ, ঘরবাড়ি, গাছপালাসহ বিভিন্ন সেক্টরে প্রায় ছয়শ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগে ব্যাপক ত্রাণ তৎপরতা চালানোসহ দুর্গতদের পুনর্বাসনে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত হয়নি।
সিডরের ভয়াল তাণ্ডবে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ৯৪ জন মানুষের প্রাণহানি ঘটে। আজও নিখোঁজ রয়েছে সাত জেলে ও এক শিশু। আহত হয়েছে ১৬৭৮ জন। এর মধ্যে ৯৬ জন প্রতিবন্ধী হয়ে গেছেন। বিধবা হয়েছেন ১২ গৃহবধূ। এতিম হয়েছে ২০ শিশু। সম্পূর্ণভাবে ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে ১২ হাজার ৯০০ পরিবার। আংশিক বিধ্বস্ত হয় ১৪ হাজার ৯২৫টি ঘরবাড়ি।
(4)