এতে করে ৬টি মৌজা রেখেই কেসিসি তাদের সীমানা সম্প্রসারণ প্রক্রিয়া শেষ করার জন্য গ্রীন সিগনাল দিয়েছেন। এ প্রক্রিয়ায় চললে চলতি বছরেই কেসিসি’র সীমানা নির্ধারণ প্রস্তাব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় অনুমোদন সাপেক্ষে গেজেট প্রকাশ হতে পারে বলে সংশি¬ষ্টরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
কেসিসি’র প্রস্তাবিত ২৬টি মৌজার ভিতরে আলাইপুর, সাচিবুনিয়া, বিল ডাকাতিয়া, গিলাতলা, আটরা ও শ্যামগঞ্জ এ ৬টি মৌজা কেসিসি’র অর্ন্তভুক্ত হবে না মর্মে স্থানীয় সংসদ সদস্যদ্বয় মতামত দিয়েছেন। বাকী ২০টি মৌজার ব্যাপারে কোন মত পার্থক্য নেই বলে তাঁরা জানিয়েছেন। ২০টি মৌজার মধ্যে ১৫টি সম্পূর্ণ ও ৫টি মৌজা আংশিক কেসিসি’র অর্ন্তভুক্ত হলো।
খুলনা সিটি কর্পোরেশন(কেসিসি) এলাকা সংলগ্ন কেএমপি’র নতুন গঠিত তিনটি থানা(লবণচরা, হরিনটানা ও আড়ংঘাটা থানা) ও পুরাতন দু’টি থানার আংশিক( দৌলতপুর ও খানজাহান আলী) এলাকার সাথে সামঞ্জস্য রেখে ২৬টি মৌজা (ক্যান্টনমেন্ট এলাকা বাদে) সম্পূর্ণ ও ১টি মৌজার আংশিক (অবশিষ্ট অংশ আগেই কেসিসির অর্ন্তভুক্ত হয়েছে) মোট ২৬টি মৌজা কেসিসি’র অর্ন্তভুক্তকরণের বিষয়ে গত ৭ নভেম্বর’১৩ কেসিসি’র তৃতীয় সাধারণ সভায় সিদ্ধান্ত হয়।
গত ২৬ডিসেম্বর’১৩ চতুর্থ সাধারণ সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। প্রস্তাবিত ২৬টি মৌজায় বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন প্রকল্প গড়ে উঠেছে। এছাড়া প্রস্তাবিত এলাকার মধ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, পল¬ী বিদ্যুৎ, বিকেএসপি, খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, পিডিবি, স্মৃতিসৌধ, সমাজসেবা অধিদপ্তর, বিভাগীয় আবহাওয়া অফিস, কৃষি খামার, জেলখানা, পাইকারী মৎস্য বাজার, কেডিএ কর্তৃক গৃহীত আহসানাবাদ আবাসিক প্রকল্পসহ একাধীক আবাসিক ও শিল্প এলাকা, ক্যান্টনমেন্ট, চিড়িয়াখানা, আরআরএফ, কোষ্ট গার্ড আবাসন প্রকল্পসহ ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রায় ৩০টির অধিক আবাসিক প্রকল্প বাস্তবায়ন ও বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।
আগামী কয়েক বছরের মধ্যে উক্ত এলাকাসমূহ আরো ঘন বসতিপূর্ণ শিল্প ও বাণিজ্যিক এলাকায় পরিণত হবে।
প্রস্তাবিত এলাকার মধ্যে তিন চতুর্থাংশ অধিবাসী পূর্ণ বয়স্ক নারী ও পুরুষ। যার মধ্যে অকৃষিজীবী শতকরা ৭৫ ভাগের উর্দ্ধে। প্রস্তাবিত এলাকাসমূহ খুলনা সিটি কর্পোরেশনের অর্ন্তভূক্তির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অনুকুল পরিবেশ পরিলক্ষিত হয়েছে। সার্বিক বিষয় পর্যালোচনান্তে উক্ত এলাকায় সর্বাধিক সুবিধাদি প্রদানের জন্য প্রস্তাবিত এলাকাসমূহ কেসিসি’র অর্ন্তভূক্ত করা প্রয়োজন বলে সভায় সিদ্ধান্ত হয়।
এমতাবস্থায় কেসিসি’র ২০১৩ সালের ৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ৩য় সাধারণ সভায় ও একই বছর ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ৪র্থ সাধারণ সভায় সিদ্ধান্তের আলোকে প্রস্তাবিত ২৬টি মৌজার সম্পূর্ণ ও আংশিক এলাকাসমূহ কেসিসি’র অর্ন্তভূক্তকরণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়।
গত ২৬ নভেম্বর’১৪ স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সহকারি সচিব জসীম উদ্দীন হায়দার স্বাক্ষরিত চিঠিতে সীমানা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের মতামত চাওয়ার জন্য খুলনা জেলা প্রশাসককে বলা হয়।
সে মতে জেলা প্রশাসক খুলনা-৪, ৫ ও ১নং আসনের সংসদ সদস্যদেরকে চিঠি দেন। তারই আলোকে তাঁরা ধারাবাহিকভাবে তাদের মতামত পেশ করেন। ১নং আসনের সংসদ সদস্য পঞ্চানন বিশ্বাস তার চিঠিতে বলেন, তাঁর নির্বাচনী এলাকার বটিয়াঘাটা উপজেলার ৯টি মৌজা খুলনা সিটি কর্পোরেশনের অর্ন্তভুক্তকরণের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত মৌজাগুলো হচ্ছে হরিণটানা, ডুবি, খোলাবাড়িয়া, মাথাভাঙ্গা, আলুতলা, ঠিকরাবাদ, সাচিবুনিয়া, কৃষ্ণনগর ও রাজবাধ। এর মধ্যে হরিণটানা, ডুবি, খোলাবাড়িয়া, মাথাভাঙ্গা, আলুতলা, ঠিকরাবাদ, কৃষ্ণনগর মৌজাসমূহ কেসিসি’র আওতায় নেয়া যেতে পারে। তবে আলাইপুর মৌজার আলাইপুর গ্রামটি রাজবাধের উত্তর পাশে বটিয়াঘাটা উপজেলার মধ্যে থাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে রাজবাধ মৌজাটি বটিয়াঘাটা উপজেলার মধ্যে থাকা জরুরী।
তাছাড়া রাজবাধ ও সাচিবুনিয়া মৌজায় দরিদ্র লোকের বসবাস বিধায় ওই মৌজা দু’টি কেসিসি’র অর্ন্তভুক্ত করা ঠিক হবে না। তবে ভৌগলিক কারণে ও আইন শৃংখলা রক্ষার্থে সাচিবুনিয়া মৌজার প্রস্তাবিত এসএস ৮০৫ থেকে ৮১৭ দাগসমূহ (হাতিয়া নদীর পূর্ব পাশ) কেসিসির আওতায় নেয়া যেতে পারে। গত ১৪ অক্টোবর’১৫ জেলা প্রশাসকের নিকট সংসদ সদস্য তার মতামত পেশ করেন।
এদিকে খুলনা ৪ আসনের সংসদ সদস্য এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা গত ৩ ডিসেম্বর’১৫ তার মতামত জেলা প্রশাসকের নিকট পেশ করেন। তিনি বলেন, তার নির্বাচনী এলাকা দিঘলিয়া উপজেলার ৪টি মৌজা কেসিসি’র আওতায় নেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত মৌজাগুলো হচ্ছে আড়ংঘাটা, তেলিগাতী, দেয়ানা(আংশিক) ও যোগীপোল। তিনি এ প্রস্তাবে কোন দ্বিমত পোষণ করেননি।
অন্যদিকে খুলনা-৫ নং আসনের সদস্য সদস্য এবং মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দের একান্ত সচিব মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান গত ৯ সেপ্টেম্বর’১৫ জেলা প্রশাসকের নিকট মতামত পেশ করেন। মতামতে উলে¬খ করা হয়, তাঁর নির্বাচনী এলাকা ডুমুরিয়া উপজেলার ৭টি মৌজা কেসিসি’র অর্ন্তভূক্ত হওয়া নিয়ে আপত্তি রয়েছে। মৌজাগুলো হচ্ছে চক আসানখালি, চক মথুরাবাদ, বিল পাবলা, বিল শলুয়া, লতা পাহাড়পুর, রংপুর ও ধাইগ্রাম। এছাড়া ফুলতলা উপজেলার বিল ডাকাতিয়া ও মশিয়ালী মৌজা দু’টি নিয়েও রয়েছে আপত্তি।
তবে ওই উপজেলার শিরোমনি, গিলাতলা, আটরা ও শ্যামনগর মৌজা অর্ন্তভূক্তির ব্যাপারে কোন আপত্তি নেই বলে উলে¬খ করা হয়। এদিকে সংসদ সদস্যদের মতামতে উলে¬খিত ১৭টি মৌজার সাথে সংযুক্তকরণের জন্য জেলা প্রশাসক মোস্তফা কামাল আরো ৩টি মৌজা সংযুক্ত করে দেন। মৌজা তিনটি হলো হরিণটানা থানার সম্পূর্ন(চক মথুরাবাদ), আড়ংঘাটা থানার আংশিক বিল পাবলা (বাইপাশের পূর্ব পার্শ্বের অংশ), খানজাহান আলী থানার আংশিক মশিয়ালী (বাইপাশের পূর্ব পাশের অংশ তবে ক্যান্টনমেন্ট এলাকা বাদে)। এ নিয়ে ২০টি মৌজা কেসিসির আওতায় আসলো। গত ৩০ ডিসেম্বর’১৫ জেলা প্রশাসক স্থানীয় সরকার বিভাগ সচিবের নিকট প্রতিবেদন প্রেরণ করেন।
বর্তমানে কেসিসি’র আয়তন সাড়ে ৪৫ দশমিক ৬৫ বর্গ কিলোমিটার। এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে কেসিসি’র আয়তনের সাথে আরো প্রায় ৪৪ বর্গ কিলোমিটার আয়তন যোগ হবে। এতে করে কেসিসি’র আয়তন ৮০ বর্গ কিলোমিটার ছাড়িয়ে যাবে। কেসিসি সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৮ সাল থেকেই কেসিসি’র সীমানা বৃদ্ধির চেষ্টা চলছে। পার্শ্ববর্তী ২০টি মৌজার সম্পূর্ণ ও আংশিক অংশকে কেসিসি’র অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ২০০৭ সালের ২৯ নভেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে এর কার্যক্রম মন্ত্রণালয়ে সভা, চিঠি-আদান প্রদান, গেজেট প্রকাশের মধ্যে কার্যক্রম সীমাবদ্ধ ছিল। তালুকদার আব্দুল খালেক মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর সীমানা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নড়েচড়ে বসে।
এরই মধ্যে ৫ অক্টোবর’১৪ খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) নগরীর সীমান্তবর্তী এলাকায় লবণচরা, হরিণটানা ও আড়ংঘাটা নামে ৩টি নতুন থানা স্থাপন করে।এতে নতুন ৩টি থানা কেসিসি’র প্রস্তাবিত এলাকার মধ্যে নেই। ফলে সীমানা বৃদ্ধির প্রস্তাব সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়। কেএমপি’র নতুন ৩টি থানার সীমানার সাথে সমন্বয় করে প্রস্তাব পাঠানো হয়। যা এখন চূড়ান্ত প্রায়।
কেসিসির প্রধান রাজস্ব অফিসার আরিফ নাজমুল হাসান জানান, স্থানীয় সংসদ সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে তারা কেসিসি’র নতুন সীমানা চূড়ান্ত সম্পন্ন করেছেন। তাদের সক্ষমতা না থাকার কারণে প্রস্তাবিত বাকী মৌজা নিয়ে এখন আর কোন মত পার্থক্য না করে চূড়ান্ত সীমানা বাস্তবায়নে কাজ করে যাবেন। এখন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে গেজেট প্রকাশ হলেই তারা তাদের কার্য্যক্রম শুরু করবেন বলে জানান। কেসিসি’র ভারপ্রাপ্ত মেয়র আনিছুর রহমান বিশ্বাস বলেন, ২৬টি মৌজার মধ্যে ২০টি মৌজা ছাড় দিতে স্থানীয় সংসদ সদস্যরা মত দিয়েছেন। তাদের মতামতের ওপর ভিত্তি করেই কেসিসি সীমানা চূড়ান্ত করবে।
-খলিলুর রহমান সুমন, খুলনা
(948)