বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টার দিকে নগরীর খান জাহান আলী সড়কের সরকারি সুন্দরবন মহাবিদ্যালয়ের পাশের একটি ড্রেন থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে। গলিত লাশ থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছিলো।
সন্ত্রাসীরা নির্মমভাবে হত্যার পর মশিউরের লাশ ড্রেনে ফেলে রেখে যায় বলে ধারণা করছে পুলিশ। নিহত মশিউর রহমান দাকোপ উপজেলার ধোপাদি গ্রামের শাহ আলম হাওলাদারের ছেলে। মশিউর রহমানের স্ত্রী ও আট মাসের একটি ছেলে আছে।
তিনি নগরীর গগনবাবু রোডের একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। মশিউর খুলনা আইন মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং খুলনা জজ কোর্টের আইনজীবী কামরুজ্জামানের সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। নিহত মশিউরের স্ত্রীও আইন বিষয়ে লেখাপড়া করছেন বলে জানা গেছে।
মশিউরের ছোট চাচা মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, গত ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যার পর থেকে মশিউরকে পাওয়া যাচ্ছিল না। ওইদিন সন্ধ্যায় মশিউর তার স্ত্রী ও বাবার সঙ্গে কিছুণ মোবাইলে কথা বলেন। এর পর থেকে তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজির পর মশিউরকে না পেয়ে ৭ জানুয়ারি খুলনা সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন মশিউরের বাবা শাহ আলম হাওলাদার। র্যাব-৬কেও মশিউরের নিখোঁজের ঘটনাটি জানানো হয়। এরপর ৮ জানুয়ারি রাত একটার দিকে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে মশিউরকে ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য ছোট ভাই কামরুলের কাছে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। ৯ জানুয়ারি সন্ধ্যায় বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার সোনাতনিয়া সেতুর ওপরে অপহরণকারীদের ২০ হাজার টাকা দেয়া হয়।
১১ জানুয়ারি খুলনার রূপসা সেতুর নিচে আরও ৩০ হাজার টাকা দেয়া হয়। কথা ছিল ওইদিন রাতে মশিউরকে ছেড়ে দেয়া হবে। এদিকে অপহরণকারীদের সব কথোপকথনও রেকর্ড করা হয়। ওই দিনও মশিউরকে ছেড়ে না দেয়ায় মুক্তিপণের ব্যাপারটি র্যাব-৬ কে জানানো হয়। ১২ জানুয়ারি মঙ্গলবার রাতে র্যাব-৬-এর সদস্যরা টোপ ফেলে রামপালের সোনাতনিয়া সেতুর কাছ থেকে আজাদ নামের একজনকে হাতেনাতে আটক করেন।
খুলনা সদর থানার এসআই রাধে শ্যাম জানান, বেলা ১১ টার দিকে স্থানীয় বাসিন্দাদের খবরের ভিত্তিতে সুন্দরবন কলেজের সামনের ড্রেন থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় মশিউরের গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। তার হাত-পা দড়ি দিয়ে বাঁধা ছিল। মুখ ছিল থেতলানো। লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
খুলনা সদর থানার ওসি শফিকুল ইসলাম জানান, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে মশিউরের সঙ্গে প্রতিপরে বিরোধ চলছিল। গত ৫ জানুয়ারি বিকালে মশিউর নগরী থেকে অপহৃত হয়। এরপর আজাদ মল্লিক নামে একজন মোবাইল ফোনে মশিউরের পরিবারের নিকট ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এ ঘটিনাটি মশিউরের পরিবারের সদস্যরা র্যাব-৬ এর নিকট জানায়।
উক্ত মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে গত ১২ জানুয়ারি রাত ৮টার দিকে র্যাব সদস্যরা নগরী থেকে আজাদ মল্লিককে গ্রেফতার। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে খুলনা থানা পুলিশ নগরীর সরকারি সুন্দরবন আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের সামনের নালা থেকে হাত-পা বাঁধা বস্তাবন্দি অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করে। তার মুখ থেতলানো ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
ওসি বলেন, কয়েকদিন আগে হত্যা করায় লাশ বিকৃত হয়ে গেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের কারণে এ হত্যাকান্ড ঘটতে পারে। এছাড়া হত্যাকান্ডের পিছনে অন্য কোন কারণ আছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় আটককৃত আজাদকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আজাদকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করা যাবে।
(4)