সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: দীর্ঘ তিন মাস বন্ধ থাকার পর আজ খুলে দেওয়া হলো সুন্দরবনে। শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে পর্যটক ও জেলে বাউয়ালিদের জন্য উন্মুক্ত হওয়ার পরই উপকূলের জেলে ও পর্যটকদের মধ্যে উচ্ছাস দেখা গেছে।
নিষেধাজ্ঞা প্রত্যহারের প্রথম দিনে পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালিনী ফরেস্ট স্টেশন থেকে ১৪টি ট্রলারের পাশ নিয়ে নীলডুমুর ঘাট দিয়ে ১৮৩ জন পর্যটক সুন্দরবনে প্রবেশ করেছে। এছাড়া ৩০০ বিএলসি’র পাশ নিয়ে ৭৫০ জেলে সুন্দরবন প্রবেশ করেছে।
সুন্দরবনে প্রবেশের সময় আজিজুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম, শাহজাহান ইসলাম, আজগার শেখ, ফারুক হোসেনসহ অনেক জেলের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা যায়।
যশোর থেকে সুন্দরবন ঘুরতে আসা লিটন আহমেদ বলেন, অনেক দিন যাবত বন্ধুরা মিলে সুন্দরবন ভ্রমণের পরিকল্পনা করেছিলাম। সুন্দরবনের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় আসা হয়নি। আজ বন্ধুরা মিলে সুন্দরবন এসে ভালো লাগছে।
গাবুরা ইউনিয়নের জেলে আসাদুল ইসলাম বলেন, এই তিন মাস মাছ, কাঁকড়ার পাশ বন্ধ করে দেওয়ার পরে আমরা সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল মানুষ খুবই বিপদে ছিলাম। এলাকার বহু মানুষ সমিতি ও সুদের টাকার ঋণে জড়িয়ে পড়েছি। ৭ দিনের পাশ নিয়ে মাছ ধরতে সুন্দরবনে যাচ্ছি। মাছ পেলে ঋণের টাকা শোধ করবো।
বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের জেলে হানিফ গাজী বলেন, তিন মাস পরে সুন্দরবনের দ্বার খুলছে এতে আমাদের ঈদের আনন্দ লাগছে।
সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোলিনী ট্যুরিস্ট ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল হালিম বলেন, গত তিন মাস সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল এই তিন মাস আমাদের ট্রলার ঘাটে বসিয়ে রেখে নোনা পানির কারণে ট্রলারে নিচের তক্তা সব নষ্ট হয়ে গেছে। পাস ছাড়বে এমন খবর শুনে সমিতি থেকে সুদের টাকা নিয়ে ট্রলার মেরামত করছি। এর আগে কখন পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি। আমাদের খুবই কষ্টে দিন কেটেছে।
এবিষয়ে বুড়িগোয়ালিনী ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে স্টেশন কর্মকর্তা বলেন, সরকারি আদেশে গত তিন মাস সুন্দরবনের সকল প্রকার প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা ছিল। আজ থেকে সুন্দরবনের দ্বার উন্মুক্ত করা হয়েছে। প্রথম দিনই বুড়িগোয়ালিনী ফরেস্ট স্টেশন থেকে ১৪টি ট্রলারের পাশ নিয়ে নীলডুমুর ঘাট দিয়ে ১৮৩ জন পর্যটক সুন্দরবনে প্রবেশ করেছে। এছাড়া ৩০০ বিএলসি’র পাশ নিয়ে ৭৫০ জেলে সুন্দরবন প্রবেশ করেছে।
তিনি আরো বলেন, সুন্দরবনের মধ্যে যে সমস্ত নির্ধারিত অভয়ারণ্য এলাকা আছে সেখানে মাছ কাঁকড়া সংগ্রহ করতে পারবেন না জেলেরা। বনবিভাগের নিয়ম অনুযায়ী যে নদী বা খালগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সেখানেই তারা মাছ, কাঁকড়া সংগ্রহ করতে পারবেন।
সাতক্ষীরা জোন ট্যুরিস্ট পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, গত তিন মাস সুন্দরবনে পর্যটক প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা আজ থেকে উঠে গেছে। আজ সকাল থেকে অনেক পর্যটক সুন্দরবনে প্রবেশ করেছে। আমরা ট্যুরিস্ট পুলিশ পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা ও সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি।
গত ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তিন মাস সুন্দরবনে পর্যটকসহ সব ধরনের বনজীবীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বন বিভাগ।