বহুল কাক্সিক্ষত পদ্মা বহুমুখী সেতুতে সড়ক ও রেল একই সঙ্গে চলাচলের কথা ছিল। কিন্তু সড়ক অংশ চালু হলেও উদ্বোধন হয়নি রেল চলাচলের। ফলে দক্ষিণবঙ্গের মানুষ পাচ্ছে না পদ্মা সেতুর পূর্ণ সুফল। তবে চলতি বছরের জুন থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে পদ্মা সেতু দিয়ে চলবে ট্রেন। ফরিদপুরের ভাঙ্গায় নির্মাণ করা হচ্ছে বিশ্বমানের জংশন। আগামী জুনে এটি ব্যবহার উপযোগী করার লক্ষ্যে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ।
জংশনটিতে থাকছে যাত্রীদের সেবার পাশাপাশি দ্রুতগতির রেল ব্যবস্থাপনা। তাই বিশেষ কম্পেকশনে তৈরি পুরো এলাকাটিতেই পরিকল্পিতভাবে ড্রেনেজ, প্ল্যাটফর্ম, সারি সারি রেল ট্র্যাক, গ্যাংহার্ট, চার রকমের ডরমিটোরি, বেরাক, রেস্টহাউস, অফিস বিল্ডিং, প্রকৌশলী-টিটিসহ জরুরি কর্মীদের বাসস্থানসহ নানা অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে। আগামী জুনে জংশনটি ব্যবহার উপযোগী করার টার্গেট নিয়ে চলছে কর্মযজ্ঞ।
২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথমার্ধেই হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনের প্রচরণায় প্রভাব ফেলতে ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের ভোট নিজেদের দিকে টানতে তার আগেই আংশিক উদ্বোধন হবে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প। যদিও যশোর পর্যন্ত পুরো প্রকল্প উদ্বোধন হবে ২০২৪ সালের জুনে। আর এ বছর চালু হবে ফরিদপুরের ভাঙ্গা জংশন পর্যন্ত। ঢাকা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রেল সংযোগ নিরবিচ্ছিন্ন ও দ্রুতগামী করতে ঢাকা-যশোর ১৬৯ কিলোমিটারের এই রেললাইন নির্মিত হচ্ছে। এই পুরো প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে ৭৩ শতাংশ। দ্রুত কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এ রুটটি চারটি অংশে ভাগ হয়ে কাজ চলছে।
ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে গেন্ডারিয়া স্টেশন পর্যন্ত পুরাতন লাইন বদলে ফেলে নির্মাণ করা হচ্ছে ডাবল লাইনের তিন কিলোমিটার ডুয়েল গেজ রেলপথ।
এ কাজ দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার জন্যে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেল চলাচল বন্ধ করে তিনমাসের মধ্যে পুরো কাজ শেষ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
দ্বিতীয় অংশে রাজধানীর গেন্ডারিয়া স্টেশন থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৩৬ দশমিক ৬৩ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। এ অংশে নির্মিত হচ্ছে ৪টি স্টেশন।
তৃতীয় অংশে কাজ চলছে মাওয়া স্টেশন থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা জংশন পর্যন্ত। এ রুটের দৈর্ঘ্য ৪২ কিলোমিটার। এ অংশে ব্রডগেজ রেলপথ এবং ৫টি স্টেশন নির্মাণ হচ্ছে। সর্বশেষ অর্থাৎ চতুর্থ অংশে ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত ৮৬ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ নির্মিত হচ্ছে। এ রুটে নির্মিত হচ্ছে নতুন করে ১০টি স্টেশন।
তথ্যমতে, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প (পিবিআরএলপি) বাংলাদেশ সরকারের একটি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কনষ্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালটেন্ট (সিএসসি) এর তত্ত্বাবধানে স্বনামধন্য চাইনিজ ঠিকাদার কোম্পানি চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড (সিআরইসি) এর মাধ্যমে দীর্ঘস্থায়িত্ব ও গুণগত মান বজায় রেখে এই প্রকল্পটি যথাযথভাবে বাস্তবায়নের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে।
জানতে চাইলে পদ্মা বহুমুখী সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, পদ্মায় দুটি সেতু। নিচে রেলসেতু, ওপরে ছয় লেনের সড়কপথ। ট্রেন যাবে ১৬০ কিলোমিটার গতিতে। এটা ট্রান্সএশিয়ান রেলওয়ের একটা অংশ। পদ্মা সেতু দক্ষিণ এবং পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার উন্নয়নের সঙ্গে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ২০২৩ সালেই পদ্মা সেতু দিয়ে চলবে ট্রেন: পদ্মা রেল সংযোগের পুরো প্রকল্পটি ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এর আগেই উদ্বোধন করা হবে পদ্মা সেতুতে রেল চলাচল।
এদিকে পদ্মা সেতুর অর্ধেক অর্থাৎ সাড়ে ৩ কিলোমিটার রেললাইন বসানো হয়ে গেছে। রেলপথের কংক্রিটের স্লিপার বসানোর বাকি কাজও দ্রুতগতিতে বসানোর কাজ চলছে। মাওয়া ও জাজিরা উভয় প্রান্তেই দ্রুত কাজ শেষ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রকল্পের দেশি-বিদেশি কর্মীরা।
মূল সেতুতে রেললাইন স্থাপনে কাজের অগ্রগতি ৫১ শতাংশ। আগামী জুনে সেতুতে পুরো রেললাইন স্থাপনের টার্গেট রয়েছে। কর্তৃপক্ষের আশা, নির্ধারিত সময়ের আগেই রেললাইন স্থাপন কাজ শেষ হবে।
কাজের অগ্রগতির বিষয়ে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক-১ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাঈদ আহমেদ বলেন, যেভাবে কাজ করা হচ্ছে শত বছরেরও বেশি সময়ের স্থায়ীত্ব হবে। পাথরবিহীন এ রেললাইন তৈরির কাজে ১১ হাজার ১৪০টি স্লিপার স্থাপন করা হবে। এর জন্য চারটি দলে ভাগ হয়ে ২০০ কর্মী নিরলসভাবে কাজ করছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, উত্তরে রাজবাড়ী-ফরিদপুর, দক্ষিণে বরিশাল, পশ্চিমে যশোর-খুলনা, আর পূর্বে রাজধানী ঢাকার রেলপথ পদ্মা সেতু হয়ে এই রেল জংশনে মিলিত হবে। দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নির্মাণাধীন দেশের অত্যাধুনিক এই রেল জংশনের বিশটি ভবনসহ সব অবকাঠামোই এখন দৃশ্যমান। কাজের অগ্রগতি ৫০ শতাংশ।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নে এখন পর্যন্ত ব্যয় হচ্ছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে নতুন চার জেলা (মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল) অতিক্রম করে যশোরের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে। ২০২৪ সালের জুনে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। একই সঙ্গে বিদ্যমান ভাঙ্গা-রাজবাড়ী থেকে কুষ্টিয়া রেলপথ ব্যবহার করতে পারবে ফরিদপুরসহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের মানুষ। ফলে কম খরচেই পণ্য ও যাত্রী চলাচল হবে ঢাকার সঙ্গে।
(1)