শিল্পাঞ্চল খালিশপুরে ঈদের কেনাকাটা এখনও জমেনি। হতাশ হয়ে পড়ছে সহস্রাধীক ব্যবসায়ী। তারা চাতক পাখির মত চেয়ে আছে, কবে শ্রমিকরা মজুরি আর বোনাস পাবে।
ব্যবসায়ীদের দাবি, গত বছর এ সময় খালিশপুরে ঈদ বাজার পুরোদমে জমে উঠে। টেইলার্স গুলোতে পোশাক তৈরীর ওয়ার্ডার নেয়া হবে না মর্মে ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু এবার চিত্র ভিন্ন। এ অঞ্চলের অন্যতম বড় টেইলার্স সৌখিন টেইলার্স।
মালিক আরমান খান জানান, গত বছর এ সময় তারা দোকানে ঝুলিয়ে দেন, ২০ রমজান থেকে নতুন কোন পোশাক তৈরীর ওয়ার্ডার নেয়া হবে না। কিন্তু এবার চিত্র ভিন্ন। এবার চাঁদরাতের আগ পর্যন্ত তারা নতুন পোশাকের ওয়ার্ডার নিতে পারবেন বলে এখনও তেমনটি মনে হচ্ছে। এ অঞ্চলের অধিকাংশ মিলে সাপ্তাহিক মজুরী দেয়া হচ্ছে না।
শ্রমিক নির্ভর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাদের মজুরী আর বোনাসের পর বেচা বিক্রি জমবে বলে তিনি মনে করেন। রিকা টেইলার্সের টুকু বলেন, এবার তৈরীর পোশাকের দিকে ক্রেতাদের নজর যেন কম। তারা রেডিমেট পোশাকের দিকে ঝুঁকছে বলে এবার টেইলার্সে ভীড় বাট্টা গতবারের তুলনায় কম বলে তিনি মনে করেন।
রংধনু টেইলার্সের মালিক খলিলুর রহমান জানান, এখনও দর্জির দোকানে পুরো দমে ভীড় জমে ওঠেনি। তবে ২৫ রমজান নাগাদ দর্জির দোকানে ভীড় বাড়তে পারে বলে তিনি আশাবাদী। তিনি জানান, রমজানের প্রথমে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও টেইলার্সের কারিগররা ধর্মঘটে যায়। পরে মালিকরা তাদের দাবি মেনে নেয়ায় ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়। খান গার্মেন্টেস কাপড়ের দোকানের মালিক শাহাজান খান সাজু বলেন, তার দোকানে ক্রেতার চেয়ে বিক্রেতা বেশী।
অনেকটা ক্রেতা শূণ্য মার্কেটে শ্রমিকদের বকেয়া মজুরী পাওয়ার ওপর নির্ভর করছে। ক্রিসেন্ট জুট মিলের সাধারণ শ্রমিক বাবুল হোসেন জানান, গত শুক্রবার তাদের সাপ্তাহিক মজুরি দেয়া হয়নি। আর বোনাস কবে নাগাদ দেয়া হবে তা এখনও অনিশ্চিত। মজুরি না পাওয়ায় তিনি পরিবার পরিজনের জন্য ঈদের কেনাকাটা এখনও করতে পারেননি।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি খালিশপুর থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম অভি জানান, তারা এখন চাতক পাখির মত চেয়ে আছে শ্রমিকদের মুখের দিকে। কারণ গত বছর শ্রমিকদের মজুরি কবে নাগাদ দিবে তা আগেভাগে জানিয়ে দেয়া হয়। এবার তা না করার কারণে ব্যবসায়ীরা হতাশ।
নাসের ক্লথ স্টোরের মালিক সামসুজ্জোহা রীয়া বলেন, গত বারের চেয়ে বেচা বিক্রি কম। পোশাকের দাম ২০ থেকে ৩০% বেশী হওয়ায় ক্রেতারা এক দোকান থেকে অপর দোকানে ঘুরে বেড়াচ্ছে, কিন্তু তারা এখনও কেনাকাটা শুরু করেনি। মায়ের সাথে স্কুল ছাত্র তানভীর আসে বাজারে। সে একটি গেঞ্জি, শার্ট, প্যান্ট ও হাত ঘড়ি ক্রয় করেছে। তবে প্রতিটি পণ্যের দাম বেশী রাখা হয়েছে বলে তানবীরের মা জানান। তিনি জানান, এবার প্রতিটি পণ্যের দাম ১০ থেকে ২০% বেশী।
জননী গার্মেন্টসের মালিক বিপ্লব হোসেন বাবু জানান, গতবারের চেয়ে এবার ঈদ বাজার খারাপ। পন্যের দাম বেশী হওয়ায় ক্রেতারা অনেকে পোশাক না কিনেই বাসায় ফিরে যাচ্ছে। তাহের বস্ত্রালয়ের বখতিয়ার হোসেন জানান, এবার থ্রি পিস বেশী বিক্রি হচ্ছে। তবে আগামী শুক্রবার নাগাদ ঈদ বাজার জমবে বলে তিনি আশাবাদী।
জরিফ বস্ত্রালয়ের জরিফুল ইসলাম বলেন, এখনও খালিশপুরে ঈদ বাজার জমেনি। তবে ২৫ রোজার পর ঈদ বাজার জমবে বলে তিনি আশাবাদী। তার দোকানে থ্রি পিস ৭শ’ থেকে ২৫শ’ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এবার পোশাকে সৌন্দর্য বেশী। এ জন্য দামও একটু বেশী। জামাল স্টোরের মালিক জামাল হোসেন জানান, ১৮ রমজানের পর তার দোকানে ক্রেতাদের ঢল নামে।
অথচ এবার তার কোন খবর নেই। শ্রমিকরা নিয়মিত মজুরি আর বোনাস না পাওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে ঈদ বাজারে বলে তিনি মনে করেন। শাহিম ফ্যাশানের শাকিল আহমেদ বলেন, মিল শ্রমিকদের মজুরি-বোনাসের খবর নেই। আর এ জন্য তাদের বেচা কেনা এখনও জমেনি।
প্লাটিনাম মিল সিবিএ সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান জানান, গত সপ্তাহে তাদের মজুরি দেয়া হয়নি। বোনাসের খবর নেই। তবে গত বছর এর আগেই বোনাসের বিষয়টি জানিয়ে দেন কর্তৃপক্ষ। এবার তার কোন খবর নেই। তারা এখনও আন্দোলনের কর্মসূচী গ্রহণ না করলেও তাদের বকেয়া মজুরির দাবিতে বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম ও স্টার মিলের শ্রমিক পরিবারে ঈদের খুশি যেন মলিন হতে চলেছে।
-খলিলুর রহমান সমুন, খুলনা
(7)