সূত্রে জানাগেছে, যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলায় এখনও বিলুপ্তি প্রায় কালোমুখো হনুমান বসবাস করে। খাদ্যের সন্ধ্যানে অনেক হনুমান কেশবপুর থেকে বিভিন্ন সময় তালাসহ নানাবিধ এলাকায় চলে আসে। এমনি একটি হনুমান বৃহস্পতিবার তালা উপজেলার সুভাষিণী বাজারে চলে আসে।
তালার তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারন সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার সকালে বিপথগামী একটি হনুমান সুভাষিণী এলাকায় এসে বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করে। একপর্যায়ে হনুমানটি বাজারের পার্শ্ববর্তি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. কামরুজ্জামানের বাড়ির পাশে একটি গাছে অবস্থান নেয়। এখান থেকে হনুমানটি মো. কামরুজ্জামানের বাড়ির দ্বিতীয় তলার জানালায় লাগানো থাই গ্লাসে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখে ওই গ্লাসের উপর লাফিয়ে পড়ে। এতে গ্লাসটি ভেঙ্গে যায় এবং ভাঙ্গা গ্লাসের আঘাতে হনুমানটির পেট অনেকখানি কেটে যায়। পরে আ.লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম গুরুতর আহত হনুমানটি উদ্ধার করে একটি ভ্যানযোগে তালা প্রাণি সম্পদ অফিসে পাঠিয়ে দেন। রফিকুল ইসলাম আরও জানান, হনুমানটি চিকিৎসার জন্য উদ্ধার থেকে শুরু করে ভ্যানে তালায় পাঠানো পর্যন্ত পুরো সময় পশু সূলভ আচরন না করে অকল্পনীয় সহযোগীতা এবং মানুষের মত স্বাভাবিক আচরন করে।
তালা উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিসের ভ্যাটোরিনারী সার্জন ডা. মো. শাহিনুর ইসলাম জানান, গ্লাসের আঘাতে ৫/৬ বছর বয়সের পুরুষ হনুমানটির পেট প্রায় ১০ ইঞ্চি মত কেটে যায়। বৃহস্পতিবার হনুমানের পেটে সেলাইসহ চিকিৎসা করা হয়। তিনি আরও বলেন, এখানে হনুমানটির উন্নত চিকিৎসা, খাদ্য প্রদান ও থাকার ভাল ব্যবস্থা নেই। এছাড়া এখানে হনুমানটিকে নিয়ন্ত্রনে রেখে চিকিৎসা করা অনিশ্চিত। যে জন্য খুলনার বন্য প্রাণি সংরক্ষন কর্তৃপক্ষ এটাকে উদ্ধার করে নিয়ে চিকিৎসা করালে প্রাণিটির জন্য ভাল হবে। বর্তমানে ডা. শাহিনুর ইসলাম নিজ উদ্যোগে হনুমানটির খাদ্য ও থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এছাড়া, ঘটনার সংবাদ পেয়ে তালা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার নিজ উদ্যোগে শুক্রবার হনুমানটিকে খাদ্য দিয়েছেন ও চিকিৎসার খোজ নিয়েছেন।
ডা. শাহিনুর ইসলাম জানান, দুই দিনের চিকিৎসায় হনুমানটির অবস্থার বেশ উন্নতি হয়েছে। চিকিৎসা শেষ করতে ১৫দিন লাগবেÑ বিষয়টি জানানোর পর হনুমানটি দুইদিন ধরে প্রাণি সম্পদ অফিসেই অবস্থান করছে। চিকিৎসা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এখান থেকে হনুমানটি যাবে বলে- মনে হচ্ছে না। তবে, ১৫দিন ধরে হনুমানটির প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেবার সক্ষমতা থাকলেও এই কয়দিন প্রাণিটির থাকা, খাদ্য প্রদান ও চিকিৎসা শেষে অবমুক্ত করার তেমন সুযোগ অত্র অফিসে নেই। এজন্য তিনি বন্য প্রাণি সংরক্ষন অফিসের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এবিষয়ে তালা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার ও নির্বাহী অফিসার মো. মাহবুবুর রহমান জানান, প্রাণিটি টানা দুইদিন তালা প্রাণি সম্পদ অফিসে অবস্থান করছে। প্রাণিটির প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিশ্চিত ও সুস্থ্য হবার পর যথাযথ স্থানে ছেড়ে দেবার জন্য পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এদিকে ঘটনাস্থলে যেয়ে জানাগেছে, অফিস বন্ধ থাকায় শুক্রবার সারাদিন অসুস্থ্য হনুমানটি উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিসের গেটের সামনে শুয়ে আছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় তালা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার নিজ উদ্যোগে প্রাণিটির খাদ্য দিয়েছেন। এসময় তালা সদর ইউপি চেয়ারম্যান সাংবাদিক এস.এম. নজরুল ইসলাম, তালা বাজার বনিক সমিতির সভাপতি সাংবাদিক মীর জাকির হোসেন, সাংবাদিক এম. এ ফয়সাল ও বি.এম. জুলফিকার রায়হান তাঁর সাথে ছিলেন। এছাড়া তালা উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বেগম জেবুন্নেছা খানমসহ এলাকার কতিপয় উৎসুক জনতা অসহায় প্রাণিটির প্রতি সদয় হয়ে বিভিন্ন খাদ্য প্রদান করেছেন। এসময় কাটা স্থান দেখতে চাইলে হনুমানটি শুয়ে উপস্থিত নেতৃবৃন্দকে কাটা স্থান দেখায়। বন্য প্রাণি হনুমানের এমন সূলভ আচরে প্রত্যক্ষদর্শীরা হতবাক হয়ে যায়!
-বি. এম. জুলফিকার রায়হান, তালা, সাতক্ষীরা
(2)