গাজী আব্দুল কুদ্দুস, ডুমুরিয়াঃ ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর বধ্যভূমিতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক ইতিহাস লেখার জন্য নির্মিত স্মৃতিফলকের কাজ শেষ হওয়ার আগেই ভেঙে পড়েছে। শুক্রবার সকালে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ বধ্যভূমির আঙিনায় মুক্তিযোদ্ধাদের ইতিহাস লেখার জন্য ২৫ টি স্মৃতিফলক নির্মাণ করেন। কিন্তু সেগুলো অর্ধেক কাজ করে রেখে দেওয়াে কারণে ইতিমধ্যে ৭টি ফলক ভেঙে পড়েছে। বাকী গুলো নড়বড়ে অবস্থা। এদিকে স্বাধীনতার ৫২বছর এবং চুকনগর বধ্যভূমি নির্মানের ১৭বছর অতিবাহিত হলেও আজও একটি পূর্ণাঙ্গ স্মৃতিসৌধ ও কমপ্লেক্স নির্মান করা সম্ভব হয়নি।
জানা যায়, ১৯৭১সালের ২০শে মে রোজ বৃহস্পতিবার মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী হানা দেয় ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগরের মালতিয়া গ্রামে। সেদিন গুলি ও জবাই করে প্রায় ১০হাজার নারী পুরুষ ও শিশুকে হত্যা করেছিল পাক বাহিনী। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর স্থানীয় প্রশাসন বধ্যভূমির স্থান চিহিৃত করে। দেশের মধ্যে যে কয়টি বধ্যভূমি রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম ‘চুকনগর বধ্যভূমি’।
খুলনা শহর থেকে প্রায় ৩২কিলোমিটার পশ্চিমে ডুমুরিয়া উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়নের চুকনগরে একটি বধ্যভূমির স্মৃতিস্তম্ভ নির্মান করা হয়েছিল ২০০৬সালে। কিন্তু নামফলক বা সাইনবোর্ড চোখে পড়ে না। উপজেলা প্রশাসন ও চুকনগর গণহত্যা ১৯৭১ স্মৃতিরক্ষা পরিষদের উদ্যোগে এখানে গণহত্যার দিন ২০মে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস, বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবসে ফুল দেওয়া অনুষ্ঠান হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৫ সালে বধ্যভূমির জন্য এখানে ৭৮শতক জমি ক্রয় করে সরকার। ২০০৬সালে ৩২শতকে তাদের পুণ্য স্মৃতিতে স্তম্ভ তৈরি করা হয়। এরপরে ২০২০সালের ১৮অক্টোবর নতুনভাবে বধ্যভূমির পূর্ণতা দেয়ার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগে পত্র প্রদান করেন খুলনা গণপূর্ত বিভাগ-২এর নির্বাহী প্রকৌশলী।
১৯৭১সালের ২০মে চুকনগরে হয়েছে ইতিহাসের সর্ববৃহৎ বর্বরতম হত্যাযজ্ঞ। পাকিস্তানীদের হাত থেকে জীবন ও সম্মান বাঁচাতে এবং যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে খুলনার আশপাশ বিভিন্ন জেলা, উপজেলার অন্তত প্রায় ১লাখ মানুষ চুকনগর থেকে সাতক্ষীরা হয়ে ভারতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তারা খুলনা শহর, বাগেরহাট, বটিয়াঘাটা, দাকোপ, ডুমুরিয়া, ফুলতলাসহ বিভিন্ন উপজেলার মানুষ ছিল। সেদিন হাজার হাজার মানুষ ভারতে আশ্রয় নিতে ঘর-বাড়ি ছেড়েছিলেন। তাদেরই একাংশ ১৯মে রাতে চুকনগরে থেমে ছিলেন। এমন সময় পাক বাহিনী ও রাজাকাররা নিরস্ত্র মানুষকে অবিচারে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছিল সেদিন।
চুকনগর গণহত্যা ১৯৭১স্মৃতিরক্ষা পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ এবিএম শফিকুল ইসলাম বলেন, স্বাধীনতার ৫২বছর পরও বধ্যভূমিতে স্মৃতিসৌধ ও পূর্ণাঙ্গ কমপ্লেক্স তৈরি করা হয়নি। তার দুঃখ, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিল পত্রের ১৫খণ্ডের কোথাও চুকনগরের ইতিহাস নেই। প্রতি ২০মে নিজেরা যতটুকু পারি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাই। সরকারি প্রতিশ্রুতি কখনোই পূরণ হয় না। কেবল স্মৃতিসৌধের মূল স্তম্ভটি হয়েছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও)মোঃ শরীফ আসিফ রহমান বলেন, যতদ্রুত সম্ভব চুকনগর বধ্যভূমির পূর্ণতা দেওয়া হবে। সে জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কাজ করছে। তাছাড়া অল্পদিনের মধ্যে স্মৃতিফলক নির্মান কাজ আবার শুরু করা হবে।
(0)