সারাদেশে পৌরসভা নির্বাচনের ঘোষনায় তৃণমূল পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়েও মানুষের মাঝে সৃষ্টি হচ্ছে আগ্রহ। জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের সাধারণ মানুষসহ সম্ভাব্য প্রার্থীরাও এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। উৎসব, পার্বন, দলীয় সভা-সমাবেশে নিজের ক্ষমতা প্রদর্শণেরও চেষ্টা শুরু হয়েছে। অপরদিকে দলীয় মনোনয়নে প্রার্থী দেয়ার ঘোষনায় তা নতুন মাত্রা যোগ করেছে। দলীয় মনোনয়নের আশায় অনেকেই উপজেলা পর্যায় শুধু নয় জেলা পর্যায়ের নেতাদের সর্মথন আদায়ের চেষ্টায়ও পিছিয়ে নেই।
জানা যায়, উপজেলার ১ নম্বর ধামালিয়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা মাওলানা আবু জাফর এবারও নির্বাচন করবেন। যদিও তিনি একাধিক মামলার আসামী হয়ে হাজতবাস করে বর্তমানে জামিনে আছেন। এই ইউনিয়নটিতে জামায়াত বিএনপির সাংগঠণিক প্রভাব বেশী। এ ছাড়া আরও প্রার্থী হতে আগ্রহী জহুরুল ইসলাম, হুমায়ূন কবীর স্বপন, তৌহিদুজ্জামান রাতুল, গাজী আব্দুস সালাম ও সাইফুল ইসলাম সানা। ২ নম্বর রঘুনাথপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান বিএনপির ডুমুরিয়া উপজেলার সাবেক সভাপতি গাজী তফসির আহমেদ ছাড়াও চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে পারেন, সরদার আবু সালেহ, শাকুর হোসেন খান, খান খোরশেদ উকিল, নুর আহমেদ মুকুল ও মাসুদ হোসেন। ৩ নম্বর রুদাঘরা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা অধ্যাপক জিএম আমানুল্লাহসহ এই ইউনিয়নে প্রার্থী হতে পারেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মোস্তফা কামাল খোকন ও গাজী তৌহিদুজ্জামান। ৪ নম্বর খর্ণিয়া ইউনিয়নে বিএনপি নেতা শেখ দিদারুল হোসেন বর্তমান চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এবারও নির্বাচনে প্রার্থী হবেন। এছাড়া প্রার্থী হতে পারেন, মেহেদী হাসান বিপ্লব, শেখ হেফজুর রহমান, জামির হোসেন জোয়াদ্দার। ৫ নম্বর আটলিয়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা শেখ বদরুজ্জামান তছলিমসহ চেয়ারম্যানপদে প্রার্থী হতে পারেন, আব্দুল কাইয়ুম সরদার, এবিএম শফিকুল ইসলাম, প্রতাপ রায় ও ফারুক হোসেন। ৬ নম্বর মাগুরাঘোনা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আবুল কালাম সামসুদ্দিন ছাড়াও আরও যাদের চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে নাম শোনা যাচ্ছে তার মধ্যে সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবুল হোসেন ও চৌধুরী হামিদুর রহমান উল্লেখযোগ্য। ৭ নম্বর শোভনা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক সরদার আব্দুল গণি। তিনি গতবার দলীয় সর্মথন নিয়ে নির্বাচন করেন এবার দলীয় মনোনয়ন পাবেন বলে আশাবাদী। এছাড়াও প্রার্থী হতে পারেন, সুরঞ্জিত কুমার বৈদ্য, মণিন্দ্র নাথ মল্লিক, কেএম হযরত আলী, আমজাদ হোসেন, বিএনপি নেতা সাবেক চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বাচ্চু, মিজানুর রহমান লিটন। ৮ নম্বর শরাফপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেযারম্যান মো: রবিউল ইসলাম ছাড়াও প্রার্থী হতে পারেন, সাবেক চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ নুর উদ্দিন আল মাসুদ, মো: আব্দুর রব ও হেমায়েত উদ্দিন। ৯ নম্বর সাহস ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মো: মাহবুবুর রহমান ছাড়াও প্রার্থী হতে আগ্রহী সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল কুদ্দুছ, জয়নাল হোসেন, নজরুল ইসলাম, মশিউর রহমান লিটন, বিষ্ণু পদ মন্ডল ও এস এম মাসুদ। ১০ নম্বর ভান্ডারপাড়া ইউনিয়নটি ডুমুরিয়া উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শিক্ষাবিদ নারায়ন চন্দ্র চন্দ বর্তমান সরকারের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান খান আলী মুনসুর উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন। উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে খান আলী মুনসুর নির্বাচিত হওয়ার পর উপ-নির্বাচনে মোল্লা কবীর হোসেন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। মোল্লা কবীর হোসেনসহ আরও যারা প্রার্থী হতে কাজ করছেন তারা হলেন, শফিকুল ইসলাম লিটু ( তিনি ৪ দলীয় জোট সরকার আমলে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও শপথ নিতে পারেননি), গোপাল চন্দ্র দে, শাহিনুর রহমান, অমিত কুমার বিশ্বাস, হিমাংশু কুমার মন্ডল, বিপুল কুমার মন্ডল। ১১ নম্বর ডুমুরিয়া ইউনিয়নটিতে বর্তমান চেয়ারম্যান বিএনপির উপজেলা সাধারণ সম্পাদক মোল্লা মোশাররফ হোসেন মফিজসহ আরও যারা প্রার্থী হতে আগ্রহী তারা হচ্ছেন, গাজী হুমায়ুন কবীর বুলু, সাবেক চেয়ারম্যান শেখ রবিউল ইসলাম, নজরুল ইসলাম খান, শাহনেওয়াজ হোসেন জোয়াদ্দার। ১২ নম্বর রংপুর ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান রাম প্রসাদ জোদ্দার, কিশোর কুমার, সাবেক চেয়ারম্যান সৌমিত্র মন্ডল, সাবেক চেয়ারম্যান বিমল বসাক। ১৩ নম্বর গুটুদিয়া ইউনিয়নে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী হচ্ছেন, বর্তমান চেয়ারম্যান মোস্তফা সরোয়ার, সাবেক চেয়ারম্যান ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি বিরাজ কান্তি মল্লিক, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী নুরুল ইসলাম, শিশির কুমার ফৌজদার, কবিতা রানী বিশ্বাস, সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শিলা রাণী মন্ডল , কাজী আব্দুল মজিদ, খলিলুর রহমান, সাইকুল ইসলাম। ১৪ নম্বর মাগুরখালী ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান বিমল কৃষ্ণ সানা, সাবেক চেয়ারম্যান কার্তিক চন্দ্র মন্ডল, অ্যাডভোকেট প্রীতিষ চন্দ্র মন্ডল, দীপ শেখর মন্ডল, অরুন গোলদার প্রার্থী হতে আগ্রহী।
ইতোমধ্যে এ সকল প্রার্থীদের অনেকেই ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও জাতীয় দিবসে পোস্টার ফেস্টুন টানানো আর্থিক অনুদান প্রদানের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন।
গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ডুমুরিয়ার ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে ৯টিতে বিএনপি প্রার্থী জয়ী হন। আওয়ামীলীগের আভ্যন্তরীন কোন্দলের কারণে অধিকাংশ দলীয় সর্মথিত প্রার্থীরা পরাজিত হন। আসন্ন নির্বাচনেও প্রতিটি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের একাথিক প্রার্থী প্রার্থী হতে চাইলেও বিএনপি বেশীরভাগ ইউনিয়নে একক প্রার্থী নিয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা বিএনপির সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান খান আলী মুনসুর বলেন, বিএনপি তথা ২০দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিতে মনোনয়ন ফরম বিতরণ করা হবে। যারা প্রার্থী হতে ইচ্ছুক তারা মনোনয়ন ফরম গ্রহণ করে দলের কাছে মনোনয়ন চাইবে। দল তৃণমূল পর্যায়ে ভোটের মাধ্যমে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দিবে।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ বলেন, প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেতে কেন্দ্রিয় নির্দেশনা পেলে সে অনুযায়ী প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হবে। এলাকায় প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা এবং আচরনগত দিক বিবেচনা করা হবে। এছাড়া দলীয় পুরাতন নেতৃত্বকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
-আব্দুল লতিফ মোড়ল, ডুমুরিযাা, খুলনা
(230)