ভুক্তভোগী পরিবার ও পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, ডুমুরিয়া উপজেলা সংলগ্ন যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার দশ কাউনিয়া গ্রামের অতি দরিদ্র প্রদীপ দাসের গর্ভবতী স্ত্রী শ্যামলী দাসীর (৩০) গত শুক্রবার বিকেলে প্রসব যন্ত্রনা শুরু হয়। তখন স্বামী প্রদীপসহ অন্যান্যরা তাকে চুকনগর বাজারস্থ হালিমা মেমোরিয়াল ক্লিনিকে নিয়ে যান। এ সময় ক্লিনিক মালিক কথিত ডাক্তার মোঃ কামাল হোসেন সিজার অপারেশনের পরামর্শ দেন এবং খরচ বাবদ পাঁচ হাজার টাকা ঠিক করেন। পরের দিন শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ডাঃ কামাল ও তার স্ত্রী রওশন-আরা বেগম, সেবিকা তাসমিরা খাতুনসহ তিনজনে মিলে সিজার অপারেশন শুরু করেন। কিছুক্ষণ পরে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হলেও কথিত ডাক্তারদের ভুল চিকিৎসা ও অতিরিক্ত রক্ত-ক্ষরনে প্রসুতি মা শ্যামলী দাসী মারা যান। এ ঘটনায় নিহতের স্বামী প্রদীপ দাস বাদি হয়ে রোববার ডুমুরিয়া থানায় অভিযুক্ত তিনজনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা যার নং ০১, দায়ের করেন। পরে থানা পুলিশ ওই ক্লিনিকে অভিযান চালিয়ে রওশন-আরা ও তাসমিরাকে গ্রেফতার, একটি এ্যাম্বুলেন্স যার নং-ঢাকা মেট্রো চ ৫১-০৭৩৮ জব্দ এবং ক্লিনিকটি সিলগালা করেন। এ ব্যাপারে নিহত গৃহবধু’র স্বামী প্রদীপ জানান, আমার স্ত্রীর ব্যাথা ওঠার সাথেই ওই ক্লিনিকে নিয়ে যাই। তখন ডাঃ কামাল আমাদের বলেন, রোগীর সিজার করতে হবে। ঢাকা থেকে বড় ডাক্তার এনে এটা করতে হবে। আমার সাথে পাঁচ হাজার টাকা চুক্তি হয়। কিন্তু অপারেশনের সময় আমরা গেটে বসে ছিলাম, তখন বাহিরের কোন ডাক্তারকে ভিতরে যেতে দেখিনি। ওরা তিনজন মিলে আমার স্ত্রীকে মেরে ফেলেছে। ডুমুরিয়া থানার ওসি এম মসিউর রহমান জানান, প্রসুতি নিহতের ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের শেষে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং মুল হোতা কথিত ডাক্তার কামাল পালিয়ে গেছে। এ ছাড়া ক্লিনিক থেকে একটি এ্যাম্বুলেন্স জব্দ করা হয়েছে এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা’র নেতৃত্বে এক ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা শেষে ক্লিনিকটি সিলগালা করা হয়েছে। তা ছাড়া ক্লিনিক মালিক কামালের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ ব্যাপারে চুকনগর বাজারের কয়েকজন অভিযোগ করে জানান, আমাদের এখানে হুটহাট করে ক্লিনিক গড়ে তোলা হয়েছে। এদের কোন বৈধতা নেই। এদের বিরুদ্ধে আমরা উপজেলা হাসপাতাল ও জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও কোন কাজ হয়নি। ক্লিনিকে রোগীর মৃত্যু এটা নতুন কোন ঘটনা নয়। এর আগেও বহু রোগী মারা গিয়েছে। সাময়িক ভাবে ক্লিনিক বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওপরের কর্মকর্তারা উৎকোচ নিয়ে আবারও ক্লিনিক চালু করে দেন। এ ব্যাপারে এনজিও সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ও তালা ভুমিজ ফাউন্ডেশন পক্ষ থেকে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি করেন। বাংলাদেশ দলিত পরিষদ(বিডিপি) খুলনা জেলা কমিটি সাধারন সম্পাদক সুধাংশু মার্টিন দাস এবং এনজিও সংস্থা পরিত্রাণের প্রোগ্রাম অফিসার উজ্জল দাস বলেন, আমরা এ দলিত প্রসুতির অপচিকিৎসার নামে হত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি করছি।
-আঃ লতিফ মোড়ল, ডুমুরিয়া, খুলনা
(14)