ডুমুরিয়ায় প্রতারনার ফাঁদে পড়ে এক যুবতী সর্বস্ব খুঁইয়ে এখন বিচারের আশায় পথে পথে ঘুরছে। আত্মীয়-স্বজন, জাত, ধর্ম ভুলে সে সুখের সংসার বাঁধলেও বিয়ের দু’বছর যেতে না যেতেই প্রায় দশ লক্ষ টাকার মালামাল আটকে রেখে প্রেমিক স্বামী তাকে তাড়িয়ে দিয়েছে।
এ ব্যাপারে ওই যুবতী ডুমুরিয়া উপজেলাসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছে।
লিখিত অভিযোগ ও ভুক্তভোগী যুবতী জানান, আমি মোংলা পৌরসভার মরশেদ লেন এলাকার খ্রিস্টান পল্লীর বাসিন্দা। প্রায় তিন বছর পূর্বে আমি একটি বে-সরকারি (ইউ এস এ আর ডি) সংস্থার উপজেলা কো-অর্ডিনেটার হিসাবে ডুমুরিয়ায় যোগদান করি। চাকুরীর সুবাদে উপজেলা বিআরডিপি অধিদপ্তরের ইরোস্পো প্রকল্পের আরডিও আবু সুফিয়ান বিশ্বাসের সাথে আমার পরিচয় হয়। তিনি নড়াইল জেলা সদরের বিছালী ইউনিয়নের চাকই এলাকার বাসিন্দা। কিছুদিন পরেই সে আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। তখন আমি আমার জাত, ধর্ম ও অন্যান্য অসুবিধার কথা বলি।
এরপরেও সে আমার সাথে সম্পর্ক গড়তে চাই এবং আমিও সাড়া দেই। তখন আমি আত্মীয় স্বজন, ধর্ম-জাত ভুলে গত ৩০ জানুয়ারী’১৪ সালে আমরা রেজিঃ বাবিন মুলে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হই এবং ডুমুরিয়ায় একটি ভাড়া বাড়িতে আমরা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে সংসার করি। আমাদের সংসারের সকল মালামাল, বাসা-ভাড়া, কেনাকাটা সবই আমার বেতনের টাকায় খরচ করতাম। দুই বছরে প্রায় দশ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে আমার।
সর্বশেষ গত ১০ জানুয়ারী আমার বাবার মৃত্যু’র খবর পেয়ে মোংলায় যাই। সেখান থেকে ফিরে ডুমুরিয়ায় গিয়ে দেখি বাসায় কোন কিছুই নেই। বাড়ি মালিক জানান, সুফিয়ান বাসা ছেড়ে দিয়ে সব কিছু নিয়ে গেছে। এরপর তার মুঠোফোন ও অফিসে যোগাযোগ করে না পেয়ে আমি নড়াইলের বাড়িতে যাই। তখন বাড়ির লোকজন আমাকে স্বামী সুফিয়ান’কে ভুলে যেতে বলে এবং তার সাথে দেখা হবে না বলে জানিয়ে দেয়।
এরপর আমি গত ১৭ জানুয়ারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ডুমুরিয়া থানা ও উপজেলা বিআরডিপি অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছি। কিন্তু আমার প্রতারক স্বামী নিয়মিত অফিস করলেও কর্তৃপক্ষ কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহন করেননি। ওই যুবতী আরও জানান, ওই প্রতারকটি আমার জীবন শেষ করে দিয়েছে। আমার জমানো টাকা, বেতনের টাকাসহ সব কিছু নিয়ে, জাত-ধর্ম ত্যাগ করিয়ে একেবারেই জীবনটাই নষ্ট করে দিয়েছে।
আমি ওর উপযুক্ত বিচার চাই। এ ব্যাপারে আরডিও আবু সুফিয়ানের কাছে জানতে চাইলে তিনি সত্যতা স্বিকার করে জানান, সবই ঠিক আছে এখন আর ওর সাথে সংসার করবো না। আমি তাকে তালাক দিয়েছি।
ডুমুরিয়া উপজেলা বিআরডিপি অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, এ ধরনের একটি অভিযোগপত্র আমরা পেয়েছি। তবে আমাদের স্যার বদলি হওয়ায় কোন কিছু হচ্ছে না।
ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার (ওসি) এম মসিউর রহমান জানান, অভিযুক্ত আবু সুফিয়ান বিশ্বাস অফিসিয়াল ট্রেনিং-এ রয়েছে বলে শুনেছি। তদন্ত শেষে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা জানান, বিষয়টি নিয়ে উপজেলা মহিলা ও শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা সুরাইয়া সিদ্দিকা’র নিকট দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি তদন্ত রির্পোট দিলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
-আঃ লতিফ মোড়ল, ডুমুরিয়া, খুলনা
(25)