ডুমুরিয়া শহীদ স্মৃতি মহিলা মহাবিদ্যালয়ে ৫টি পদে শিক্ষক নিয়োগে বিএনপি নেতা মোল্যা আবুল কাশেম অর্ধকোটি টাকা আয়ের মিশন হাতে নিয়ে মাঠে নেমেছেন। এ কাজে সহযোগিতার রয়েছেন কলেজ অধ্যক্ষ ও ডুমুরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা ও কলেজ পরিচালনা পর্ষদের এক সদস্য। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন প্রার্থীর কাছ থেকে নিয়োগ দেয়ার নিশ্চয়তায় অগ্রিম অর্থও গ্রহণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ সকল বিষয় জানতে পেরে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি স্থানীয় সংসদ সদস্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। নিয়ম অনুযায়ী জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি হিসেবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সামছু দ্দৌজা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এদিকে কলেজ অধ্যক্ষ শেখ শহিদুল ইসলাম ওই পদগুলোতে নিয়োগ পরীক্ষা নেয়ার জন্য আগামী ১৩ অক্টোবর দিন ধার্য করেছেন।
শহীদ স্মৃতি মহিলা কলেজ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কলেজের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, ভূগোল, পদার্থ বিদ্যা, উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপনন এবং বাংলা বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগের জন্য মাস ছয়েক আগে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। সেই বিজ্ঞাপনের আলোকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে ৯ জন, ভূগোল বিষয়ে ২২ জন, পদার্থ বিদ্যা বিষয়ে ৩২ জন, উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপনন বিষয় ১৬ জন এবং বাংলা বিষয় ১৮ জন প্রার্থী আবেদন করেন।
একটি সূত্র জানায়, নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আগেই কলেজ পরিচালনা পর্ষদের কথিত প্রতিষ্ঠাতা সদস্য জেলা বিএনপির নেতা মোল্যা আবুল কাশেম ও কলেজ অধ্যক্ষ শেখ শহিদুল ইসলাম একাধিক প্রার্থীর কাছ থেকে তাদের নিয়োগ নিশ্চিত করতে কয়েক লাখ টাকা অগ্রীম উৎকোচ গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয় আবেদনকারি প্রশান্ত কুমার রপ্তান ও সুবির নন্দন রায়, উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপনন বিষয় চিন্ময় কুমার রাহা ও সনজিত কুমার বিশ্বাস, ভুগোল বিষয়ে সুনিল মন্ডল, তরুণ বিশ্বাস ও কামরুন নাহার, পদার্থ বিদ্যা বিষয় শেখ শামিউল নেওয়াজ ও প্রশান্ত কুমার রপ্তান, বাংলা বিষয় রোজিনা খাতুন, হৃদয় বিশ্বাস, এসএম আনোয়ারুল বিশ্বাসসহ বিভিন্ন প্রার্থীর কাছ লাখ লাখ টাকা অগ্রিম গ্রহনের অভিযোগ উঠেছে। আবার কিছূ কিছু প্রার্থীকে বলে দেয়া হয়েছে যেই নিয়োগ পাক তাকে ১০ লাখ টাকা দিতে হবে। এদিকে এ নিয়োগকে কেন্দ্র করে কলেজ গভর্নিং বডির সদস্যদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম অসন্তোষ। অভিভাবক শ্রেনীর সদস্যরা নিয়োগ বাণিজ্য ঘটনায় ক্ষুব্ধতা প্রকাশ করে তারা যোগ্য প্রার্থী নিয়োগের লক্ষে আগামী ১৩ অক্টোবর তারিখে অনুষ্ঠিতব্য নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিতের দাবি জানিয়েছেন কলেজ গভার্নিং বডির সভাপতির কাছে। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগের জন্য সচ্চতার মাধ্যমে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠান এবং প্রার্থী নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন তারা।
এ সকল অভিযোগের প্রেক্ষিতে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি স্থানীয় সংসদ সদস্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ক্ষুব্দতা প্রকাশ করেন। তিনি পরিচালনা পর্ষদের অন্যান্য সদস্য যারা অর্থ গ্রহণের প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত তাদেরকে নিবৃত থাকতে অনুরোধ জানান। কিন্তু নিজ দলীয় লোক এ কাজে সহযোগিতা করার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠায় তিনি রাগে ও ক্ষোভে সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেন। নিয়ম অনুযায়ী জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি হিসেবে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে সভাপতি মনোনীত করা হয়। তাকে দিয়ে শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সাক্ষাতকার পত্র প্রার্থীদের নিকট প্রেরণ করা হয়। আগামী ১৩ অক্টোবর এই সাক্ষাতকারের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা হওয়ার কথা রয়েছে।
এ বিষয়ে কলেজ অধ্যক্ষ শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, শিক্ষক নিয়োগ বিষয়ে টাকা লেনদেনের অভিযোগ সঠিক নয়। ভিত্তিহিন অভিযোগ তোলা হচ্ছে। সচ্ছতার মাধ্যমে যাতে যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ পায় আমরা সেই পদক্ষেপ নিচ্ছি।
এ বিষয়ে বিএনপি নেতা মোল্যা আবুল কাশেমের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয় তিনি শারিরীক ভাবে খুব অসুস্থ্য। কথা বলতে পারবেন না।
কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সামছু দ্দৌজা বলেন, কলেজে শিক্ষক নিয়োগে অর্থ গ্রহণের বিষয়টি আমাকে কলেজের পরিচালনা পর্ষদেও কয়েকজন সদস্য জানিয়েছেন। আমি নিয়োগ পরীক্ষা নিতে রাজী ছিলাম না। কিন্তু কলেজের শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জটিলতা নিরসনে শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন করতে প্রতিমন্ত্রী মহোদয় নির্দেশ দেয়ায় কলেজ অধ্যক্ষকে প্রার্থীদেরকে সাক্ষাতকার পত্র প্রেরণের জন্য বলি।
-আঃ লতিফ মোড়ল, ডুমুরিয়া, খুলনা
(13)