ডুমুরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠণের তোড়জোড় শুরু হযেছে। কমিটিতে স্থান পেতে সদ্য দলে যোগদানকারী ও সুবিধাবাদিরা ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেছেন।
এক্ষেত্রে উপজেলা পর্যায় থেকে শুরু করে জেলা পর্যায়ের নেতাদের সাথে দেনদরবারও শুরু করেছেন তারা । অন্যদিকে দীর্ঘদিনের ত্যাগী অনেক নেতাই বর্তমানে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন।
জানা যায়, ডুমুরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের ত্রিবার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশন ও সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় গত বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারী। ইতিমধ্যে ১১ মাস কেটে গেছে। ওই সম্মেলনে উপজেলা সভাপতি হিসেবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এবং অধ্যক্ষ নূর উদ্দীন আল মাসুদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সে সময়ে নেতৃবৃন্দ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদ্বয়কে পূর্ণাঙ্গ নামের তালিকা তৈরী করে জেলা কমিটির নিকট পাঠাতে বলেন। মাস দেড়েক আগে জেলা কমিটিকে কেন্দ্রিয় কমিটি অনুমোদন দিয়েছে।
এর পরই শুরু হয়েছে উপজেলা কমিটি গঠণের তোড়জোড়। আর এই সুযোগে সুবিধাবাদি অনেকেই উপজেলা কমিটিতে লোভনীয় পদ পেতে তোষামোদি শুরু করেছেন। কেউ ছুটে যাচ্ছেন সুদুর রাজধানীতে কেউ নিজের ক্ষমতা যোগ্যতা জাহিরের চেষ্টা করছেন জেলা ও মহানগর নেতৃবৃন্দের কাছে। যা আওয়ামীলীগের দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতাদের ভাবিয়ে তুলেছে। তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন এসকল ব্যক্তি যদি কমিটিতে স্থান পায় তবে অপমান অপদস্থ্য হতে হবে প্রতিনিয়ত।
আওয়ামীলীগের নাম প্রকাশে অনেক নেতা-কর্মী জানান, যারা বিগত চারদলীয় জোট সরকার আমলে ডুমুরিয়ার সংখ্যলঘু সম্প্রদায়ের নির্যাতনের রুপকার একটি বিশেষ পরিবারের অত্যন্ত আস্থাভাজন ছিলেন তারাও এখন আওয়ামীলীগের ছায়াতলে স্থান করে নিয়েছেন। তারা বর্তমানে নানা নামে নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করে সভাপতি প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এমপিকে তুষ্ট করার চেষ্টা করছেন। জনশ্রুতি রয়েছে ওই সকল ব্যক্তি বর্তমানে আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত হলেও স্থাণীয় বিএনপি নেতাদের সাথে তাদের বেশী সখ্যতা রয়েছে।
এসকল ব্যক্তি যদি আওয়ামীলীগের উপজেলা কমিটিতে স্থান পায় তবে ত্যাগী ও দলের জন্য নিবেদিত নেতা-কর্মীরা কোনঠাশা হয়ে পড়বেন।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, ডুমুরিয়া উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনেক ইউনিয়নে পূর্ণাঙ্গ কমিটিও গঠণ হয়েছে। উপজেলা কমিটি পাস হলেই সে সকল ইউনিয়ন কমিটি উপজেলা কমিটি অনুমোদনের জন্য জমা দেয়া হবে।
উপজেলার ১ নং ধামালিয়া ইউনিয়নে সভাপতি হিসেবে মোঃ শহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আব্দুস সালাম নির্বাচিত হন। ২ নং রঘুনাথপুর ইউনিয়নে সভাপতি হিসেবে খান সাকুর আহেমেদ ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শৈলেন্দ্র নাথ নির্বাচিত হন। ৩ নং রুদাঘরা ইউনিয়নে সভাপতি হিসেবে তাপস হালদার নিবার্চিত হলেও ও সাধারণ সম্পাদক পদে অমিমাংসিত থেকে যায়। ৪নং খর্ণিয়া ইউনিয়নে সভাপতি হিসেবে নারায়ণ মল্লিক ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শেখ আছাদুজ্জামান নির্বাচিত হন।
৫ নং আটলিয়া ইউনিয়নে সভাপতি হিসেবে এসএম মুস্তাফিজুর রহমান দুলু ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অ্যাডভোকেট প্রতাপ রায় নির্বাচিত হন। ৬ নং মাগুরাঘোনা ইউনিয়নে সভাপতি হিসেবে শেখ আবুল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আব্দুল হামিদ চৌধূরী নির্বাচিত হন। ৭নং শোভনা ইউনিয়নে সভাপতি হিসেবে মনিন্দ্র নাথ মল্লিক ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শিবু পদ গোলদার নির্বাচিত হন।
৮ নং শরাফপুর ইউনিয়নে সভাপতি হিসেবে নবদীপ দাশ ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আব্দুল গফ্ফার নির্বাচিত হন।
৯ নং সাহস ইউনিয়নে সভাপতি হিসেবে শেখ আব্দুল কুদ্দছ ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্মল দেবনাথ নির্বাচিত হন।
১০ নং ভান্ডারপাড়া ইউনিয়নে সভাপতি হিসেবে হিমাংশু বিশ্বাস ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মোল্লা আকরাম হোসেন নির্বাচিত হন। ১১ নং ডুমুরিয়া ইউনিয়নে সভাপতি হিসেবে খান নজরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আছফার হোসেন জোয়াদ্ধার নির্বাচিত হন। ১২ নং রংপুর ইউনিয়নে সভাপতি হিসেবে রাম প্রসাদ জোদ্দার ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আদিত্য কুমার মন্ডল নির্বাচিত হন। ১৩ নং গুটুদিয়া ইউনিয়নে সভাপতি হিসেবে বিরাজ কান্তি মল্লিক ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাজী নুরুল ইসলাম নির্বাচিত হন।
১৪ নং মাগুরখালী ইউনিয়নে সভাপতি হিসেবে বিমল কৃষ্ণ সানা ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সরোজ কুমার মন্ডল নির্বাচিত হন।
ডুমুরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সহ-সভাপতি শাহনেওয়াজ হোসেন জোয়াদ্দার বলেন, দলের জন্য যারা ক্ষতিকারক তাদেরকে কমিটি স্থান না দিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অনুরোধ করা হয়েচে। তাছাড়া খুব অল্প সময়ের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এমন ব্যক্তিকে কমিটিতে আসতে হবে যাতে ইউনিয়নের নেতাদের সাথে তাদের সুসম্পর্ক থাকবে।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ নুর উদ্দিন আল মাসুদ বলেন, দলের জন্য নিবেদিত ত্যাগি ও দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ যুবলীগ বা সহযোগি সংগঠণের সাথে যুক্তদের কমিটিতে স্থান দেয়া হবে। তাছাড়া বসন্তের কোকিল ও সুবিধাবাদিদের কমিটিতে স্থান দেয়া হবে না।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নারায়ন চন্দ্র চন্দ বলেন, উপজেলা কমিটিতে কোন বিতর্কিত ব্যক্তিকে স্থান দেয়া হবে না। যারা দলের জন্য আন্তরিক ব্যক্তি স্বার্থ না দেখে দলের স্বার্থ অধিক গুরুত্ব দেবে তাদেরকে কমিটিতে আনা হবে। তাছাড়া যারা সদালাপি ত্যাগি তাদেরকেই কমিটিতে আনা হবে। তিনি বলেন, চিকিৎসা ও ভারত সরকারের কযেকটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ১৫ জানুয়ারী থেকে ২৩ জানুয়ারী পর্যন্ত ভারতে অবস্থান করতে হবে।
সেখান থেকে ফিরে কমিটির নাম চুড়ান্ত করে জেলা কমিটিতে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।
-আব্দুল লতিফ মোড়ল, ডুমুরিয়া, খুলনা
(80)