খুলনার ডুমুরিয়া চুকনগরে একটি ক্লিনিকে অপরেশনের পর এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় ডুমুরিয়া থানায় মৃত্যের স্বামী হত্যা মামলা দায়ের করেছে। ক্লিনিক মালিক পলাতক, ২ নার্সকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ ও মৃত্যের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে প্রসব বেদনা নিয়ে ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগরের হালিমা মেমোরিয়াল নার্সিং হোম এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে ভর্তি হন পার্শ্ববর্তী কেশবপুর উপজেলার দশকাউনিয়া গ্রামের প্রদীপ সরকারের স্ত্রী শ্যামলী সরকার(২৩)। এর পর ক্লিনিক মালিক কথিত ডাক্তার কামাল হোসেন বলেন, রোগীর অবস্থা খারাপ দ্রুত সিজার না করলে মা ও বাচ্চা কাউকে বাচানো যাবেনা। এ কথা বলে কোন প্রকার পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই তড়ি-ঘড়ি করে তাকে অপরেশন থিয়েটারে ঢোকানো হয়। এ সময় ক্লিনিকে অপরেশনের জন্যে কোন ডাক্তার ছিলনা। অভিযোগকারী সূত্রে জানা যায়, ক্লিনিক মালিক হাতুড়ে ডাক্তার কামাল হোসেন এবং তার কথিত স্ত্রী তাজমিরা খাতুন মিলে শ্যামলীর অপরেশন করেছেন। অপরেশনের পর তার একটি সুস্থ্য পুত্র সন্তানের জন্ম হলেও শ্যামলীর শরীর থেকে প্রচুর পরিমানে রক্তক্ষরণ হতে থাকে। শনিবার বিকাল ৫টার দিকে ঐ ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শ্যামলী মৃত্যু বরন করেন। এ সময় ক্লিনিকের এ্যাম্বুলেন্সে করে তার মৃতদেহ বাড়িতে পাঠিয়ে দেন ক্লিনিক কতৃপক্ষ। শ্যামলীর লাশ বাড়িতে নিয়ে গেলে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ লাশবাহী এ্যাম্বুলেন্সটি পুনরায় ক্লিনিকে ফেরত পাঠিয়ে দেন এবং উক্ত এলাকার শতাধিক লোক এসে ক্লিনিক ঘেরাও করে রাখে। অবস্থা বেগতিক দেখে ক্লিনিক মালিক কামাল হোসেন পালিয়ে যান। এ সময় শ্যামলীর লাশ সামনে রেখে উত্তেজিত জনতা বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকে। এক পর্যায়ে ডুমুরিয়া থানার ও সি (তদন্ত) মঞ্জুরুল আলম, সেকেন্ড অফিসার এস আই মহসিন, এস আই ইন্দ্রজিৎ, এস আব্দুল হালিম সঙ্গীয় ফোর্স সহ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। পুলিশ লাশের সুরত হাল প্রতিবেদন তৈরী শেষে ময়না তদন্তের জন্যে মর্গে প্রেরণ করেন এবং কামালের কতিথ স্ত্রী তাজমিরা খাতুন ও কথিত নার্স রওশনারাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে পলাতক কামালের কাছে মোবাইল ফোনে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমি আপরেশন করিনি বাইরের ডাক্তার এসে ও টি করেছে। অপরেশনের পরে রোগীর শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে, তাদেরকে বার বার রক্ত দিতে বলার পরও তারা রক্তের ব্যবস্থা করতে পারেনি এ জন্যেই মুলত দূর্ঘটনাটি ঘটেছে। এ ব্যাপারে মৃত শ্যামলীর স্বামী প্রদীপ দাস বাদী হয়ে ক্লিনিক মালিক কামাল হোসেন, নার্স তাজমিরা ও রওশনারা সহ অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামী করে ডুমুরিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং-০১ তারিখ-০১/১১/২০১৫। এ প্রসঙ্গে ডুমুরিয়া থানার ও সি (তদন্ত) মঞ্জুরুল আলম বলেন, থানায় মামলা হয়েছে, ২ জনকে আটক করা হয়েছে। কামালকেও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ দলিত পরিষদের খুলনা জেলা কমিটি এবং এনজিও সংস্থা পরিত্রাণের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান সহ দোষীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি করেন।