ইসলামকাটী সাব রেজিষ্টার মো. আসাদুজ্জামান এর সহযোগীতায় ঘের দস্যূরা ঘেরের রেজিষ্ট্রি করায় জনগন ক্ষিপ্ত হয়ে রেজিষ্ট্রি অফিস ঘেরাও করে। এসময় সাব রেজিষ্টার কৌশলে পালিয়ে গেলেও অন্য কর্মীরা গভীর রাত পর্যন্ত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।
ঘটনার প্রেক্ষাপটে তালা থানা পুলিশ ও আমর্ড ব্যাটালিয়ান পুলিশ রেজিষ্ট্রি অফিসে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত রেজিষ্ট্রি অফিস এলাকায় পুলিশ ও আমর্ড ব্যাটালিয়ান পুলিশ মোতায়েন ছিল।
সূত্রে জানাগেছে, উপজেলার ইসলামকাটী ইউনিয়নের চলশের বিল প্রায় ২ হাজার ৫শত বিঘা জমি নিয়ে অবস্থিত। এই বিলের জলাবদ্ধতার পানি নিস্কাশনের জন্য জমি মালিকরা কেশবপুর উপজেলার সুফলাকাঠি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা মঞ্জুরুল ইসলামকে সাদা মাছের ঘের করার জন্য শর্তমতে চুক্তিবদ্ধ হয়।
কিন্তু চুক্তি লংঘন করে ঘের মালিক ও তাঁর পোষ্য বাহিনী জমি মালিকদের হারি না দেয়া, এলাকায় সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার, ঘের এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড সৃষ্টি এবং একটি জাতীয় পত্রিকার সম্পাদকের নামে হয়রানীমূলক মামলা দায়েরের ঘটনায় চলশের বিল আলোচিত হয়ে ওঠে। সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ে এলাকায় আন্দোলন, সংগ্রাম গড়ে ওঠে। চলতি বছর উক্ত ঘেরের চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে।
যে কারনে এরই মধ্যে বর্তমান ঘের মালিক সহ আরও দুইজন ঘের ব্যবসায়ী উক্ত বিলে ঘের করার করার চেষ্টা শুরু করে। এদের মধ্যে কেশবপুর এলাকার বিশিষ্ট ঘের ব্যবসায়ী সুলতান মোড়ল ও ইকবল খান জমি মালিকদের অধিক হারি প্রদান সহ অন্যান্য সুবিধা প্রদানের প্রস্তাব দেয়। বিষয়টি প্রশাসন পর্যন্ত গড়ালে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন সহ এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিরা প্রকশ্যে নিলামের মাধ্যমে যে পক্ষ বেশি হারি এবং সুবিধা দেবে তাদের পক্ষে বিলের ডিড দেবার সিদ্ধান্ত হয়।
কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত অমান্য করে কতিপয় রাজনৈতিক নেতার সহযোগীতায় ও সাব রেজিষ্টারের মাধ্যমে সোমবার রাতের আঁধারে যশোরের কেশবপুরের ঘেরদস্যু সামাদ সরদারের ছেলে মোশতাক ও খোরশেদ সরদারের ছেলে মধু অবৈধভাবে চলশের বিল ঘের রেজিষ্ট্রি করে নেয়।
এলাকাবাসী জানান, প্রায় ২ হাজার ৫শত বিঘা আয়তন বিলের ৪/৫ শত মালিককে উপেক্ষা করে মাত্র ২৫ জন জমি মালিকের কাছ থেকে মোস্তাক গং ঘের ডিড করে নিয়েছে। অবৈধভাবে ঘের রেজিষ্ট্রির বিষয়টি জমি মালিকরা জানতে পারার পর তা’ প্রতিহত করতে সোমবার সারাাদিন ইসলামকাটী সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে অবস্থান নেয়। যে কারনে ইসলামকাটী রেজিষ্ট্রি অফিসে উক্ত রেজিষ্ট্রি না করে সাব রেজিষ্টার যুবলীগ নেতা আলমগীর হোসেন এর বাড়ি বসে রাতের আঁধারে জমি মালিকদের জাল স্বাক্ষরের মাধ্যমে ঘের রেজিষ্ট্রি করেন।
এ খবর প্রচার হতেই সন্ধ্যায় ইসলামকাটি সাব রেজিস্ট্রি অফিস ঘিরে ফেলেন এলাকার শত শত লোকজন। লোকজন রেজিষ্ট্রি অফিস ঘেরাও সহ অফিসের কর্মীদের অবরুদ্ধ করে রাখে। ঘটনার সংবাদ পেয়ে সেখানে পুলিশ ও আমর্ড ব্যাটালিয়ান এসে রাত ২টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।
এরপূর্বে ঘের রেজিষ্ট্রিকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে- এমন আশংকায় তালা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাহবুবুর রহমান, উপজেলা আ.লীগ সভাপতি শেখ নুরুল ইসলাম এবং তালা থানার ওসি মো. সগির মিয়া ঘের রেজিষ্ট্রি বন্ধ করতে সাব রেজিষ্টারকে বললেও তা মানেননি সাব রেজিষ্টার।
ইসলামকাটী সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের মোহরার ও আ.লীগ নেতা আব্দুল আজিজ এর সহায়তায় মোস্তাক-মধু গংদের কাছ থেকে ৭ লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়ে সাব রেজিষ্টার আসাদুল ইসরাম এই রেজিষ্ট্রি সম্পাদন করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাওয়ার জন্য সাব রেজিস্ট্রার মো. আসাদুজ্জামানকে পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর অফিসের প্রধান সহকারী অনুপ চ্যাটার্জী জানান, সোমবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে চলশের বিল মৎস্যঘের রেজিষ্ট্রি (দলিল নং ২০৩, তাং : ১১.০১.১৬ ইং) হয়েছে। যার দাতা অ্যাড. কেসমত এবং যুবলীগ নেতা আলমগীর হোসেনসহ ৩০জন। গ্রহিতা মোস্তাক আহম্মেদ গং।
দলিল সম্পাদনে কোনও অনিয়ম হয়নি বলে তিনি দাবী করেন।
এদিকে অবৈধভাবে ঘের রেজিষ্ট্রি এবং জমি মালিকদের সাথে প্রতারনার কারনে মঙ্গলবার সারাদিন রেজিষ্ট্রি অফিস এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করে। যে কারনে এদিনও সেখানে পুলিশ ও আমর্ড ব্যাটালিয়ান নিয়োজিত রাখা হয়।
এব্যাপারে এলাকার সচেতন মহল উক্ত ঘেরের ডিড বাতিল এবং বিলের জমি মালিকদের দাবী অনুযায়ী প্রকাশ্য নিলামের মাধ্যমে যে পক্ষ অধিক হারি প্রদান করবে ও পরিবেশের ভারসাম্য বজায়রাখা সহ গরিব মানুষকে কাজের সুযোগ দেবে তাদের পক্ষে ঘেরের ডিড দেওয়ার দাবী করেছেন।
আর জনবান্ধব এই দাবী মানা না হলে বৃহত্তর আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তোলা হবে বলেও মহলটি জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে সাব রেজিস্ট্রারকে যথাযথ নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা না মেনে তিনি ভুয়া দাতা খাড়া করে জমি রেজিস্ট্রি করেছেন বলে শুনেছি। এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সগির মিয়া জানান, শান্তি শৃংখলা রক্ষার স্বার্থে চলশের বিলের নতুন বন্দোবস্তের ডীড না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। তা সত্ত্বেও সাব রেজিষ্ট্রার ঘেরের ডিড রেজিষ্ট্রি করেন। তিনি জানান, ঘের এলাকায় তীব্র উত্তেজনা দেখা দেয়ায় ঘটনাস্থলে পুলিশ ও আনসার সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পুলিশ আইনশৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রেখেছে।
-বি. এম. জুলফিকার রায়হান, তালা, সাতক্ষীরা
(11)