সাতক্ষীরা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মো. ইনামুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল ডিবি পুলিশ তালা সেটেলমেন্ট অফিসে অভিযান চালিয়েছে।
বুধবার দুপুরে আকস্মিক অভিযান চালিয়ে পুলিশ ২ মোহরার সহ ২ পেশাদার তদ্বিরকারককে আটক করে।
আটককৃত মোহরারদের বিরুদ্ধে জাল কাগজপত্র তৈরি, মামলার বাদী-বিবাদীদের হয়রানী, জমি মালিকদের সাথে প্রতারনা, ভূয়া মামলা সৃষ্টি, ভূমি সংশ্লিষ্ট সরকারি উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সিল ও সাক্ষর জালিয়াতী, সেটেলমেন্ট অফিসে জমি সংক্রান্ত মামলায় মানুষদে হয়রানী সহ বহুবিধ অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া আটক অপর ২ তদ্বিরকারক দীর্ঘদিন ধরে সেটেলমেন্ট অফিসে সেবা নিতে আসা সাধারন মানুষদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়ে সেটেলমেন্ট অফিসারদের সাথে যোগসাজসে পক্ষে বিপক্ষে রায় পাইয়ে দেবার কাজ করতো বলে অভিযোগ রয়েছে।
বুধবার দুপুরে ডিবি পুলিশ আকস্মিক অভিযান চালিয়ে ৪জনকে আটক করলেও এসময় অধিকাংশ প্রতারক ও দূর্নীতিবাজ মোহরার এবং দালালচক্র কৌশলে পালিয়ে যায়। অভিযানের পরপরই সেটেলমেন্ট এলাকা দালালশূণ্য হয়ে যাওয়ায় পুরো এলাকা অফিস পাড়ার পরিবেশ বিরাজ করে।
আটককৃতরা হলো সেটেলমেন্ট অফিসের মোহরার নামধারী উপজেলার নলতা গ্রামের সামসুর রহমানের ছেলে সাইদুর রহমান (৫২) ও একই উপজেলার রহিমাবাদ গ্রামের হাতেম সরদারের ছেলে মোসলেম সরদার (৫০)।
এই দুইজনের নামে সহ সেটেলমেন্ট অফিসের আরও একাধিক মোহরারের বিরুদ্ধে উর্দ্ধতন সরকারি কর্মকর্তাদের সিল ও স্বাক্ষর জালিয়াতির মামলা বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধিন রয়েছে। অপরদিকে আটককৃত অপর দুই তদ্বিরকারক হচ্ছে পাশ্ববর্তি বারুইহাটি গ্রামের রহিম সরদারের ছেলে মামুন সরদার (৩৩) ও মহান্দী গ্রামের ইউসুপ শেখের ছেলে ছওকাত শেখ (৫০)।
আটককৃতদের এইদিন দুপুরে সাতক্ষীরা ডিবি কার্যলয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
উল্লেখ্য, তালা সেটেলমেন্ট অফিসে তথাকথিত মোহরার ও দালালচক্র দীর্ঘ বছর ধরে জমির রেকর্ড নিতে দূর দুরান্ত থেকে আসা সাধারন মানুষদের জিম্মি করে রেখেছে।
এই সকল দালাল ও মোহরাররা সেটেলমেন্ট অফিসে সেবা নিতে আসা সাধারন মানুষদের পকেট থেকে কৌশলে বা কখনও জোর করে টাকা হাতিয়ে নেয়। তাদের সাথে রয়েছে সেটেলমেন্ট অফিসের পেশকার সহ সকল অফিসাররা। সেটেলমেন্ট অফিসের অফিসার ও তাদের পোষ্য সকল দালালচক্র এবং মোহরাররা শূণ্য থেকে এখন লাখ লাখ টাকার মালিক। এই সকল দালাল এবং মোহরাররা তালা উপশহরে মূল্যবান জমি ক্রয় করে সেখানে আলিশান বাড়ি করে বিলাশবহুল জীবন যাপন করছে।
আটক মোহরার সাইদুর ইট ভাটা এবং শতাধিক বিঘা জমির মালিক। এছাড়া তাঁর বিলাশবহুল বাড়ি ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে। এছাড়া একসময়ের হতদরিদ্র মোসলেমও তালা সরকারি কলেজের পাশে বাড়ি সহ জমি ক্রয় এবং বিভিন্ন স্থানে জমি ও সম্পদ বানিয়েছেন।
এছাড়া আরও একাধিক মোহরার সহ একাধিক দালাল ইতোমধ্যে লক্ষ লক্ষ টাকার সম্পদ তৈরি করেছে। এসকল সম্পদ করতে দালাল ও মোহরারদের আয়ের একমাত্র মাধ্যমে হচ্ছে সেটেলমেন্ট অফিসে আসা সাধারন মানুষদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়া। মোহরার ও দালালচক্র এর হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য ভুক্তভোগী সাধারন মানুষরা ইতোপূর্বে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভায় এবিষয়ে অভিযোগ তোলে।
কিন্তু প্রশাসন দূর্নীতিবাজ অফিসার, দালাল ও মোহরারদের বিরুদ্ধে সেরুপ কোনও ব্যবস্থা নেইনি। যেকারনে সরকার দলীয় সমর্থীত এই সকল দালালচক্র ও মোহরাররা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে ওঠে। দীর্ঘ সময় পর বুধবার ডিবি পুলিশ ৪জনকে আটক করায় সাধারন মানুষের মাঝে কিছুটা স্বস্তি এসেছে।
তবে, অন্য দালালচক্র এবং প্রতারক মোহরাররা আটক না হওয়া জনগন’র মাঝে হতাশা লক্ষ্য করা গেছে। ভুক্তভোগী এলাকাবাসী তালা সেটেলমেন্ট অফিস থেকে দূর্নীতিবাজ অফিসার এবং তাদের পোষ্য মোহরার ও দালালদের উচ্ছেদ করতে এরুপ অভিযান অব্যাহত রাখার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করেছেন।
-বি. এম. জুলফিকার রায়হান, তালা, সাতক্ষীরা
(119)