গত মঙ্গলবার সিরিয়া সীমান্তে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে জঙ্গি বিমান ভূ-পাতিত করার চার দিনের মাথায় মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোটের অন্যতম শরিক তুরস্কের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নিল মস্কো।
জঙ্গিবিমান ভূ-পাতিত করার জন্য রাশিয়া তুরস্ককে ক্ষমা চাইতে বললেও তাতে অস্বীকৃতি জানান দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান। উল্টো শুক্রবার এক বক্তব্যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ‘আগুন নিয়ে খেলার’ অভিযোগ করেন তিনি।
অবশ্য শনিবার সুর নামিয়ে রুশ বিমান ভূ-পাতিত করার ঘটনায় ‘দুঃখ’ প্রকাশ করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট। ভবিষ্যতে এর পুনরাবৃত্তি ঘটবে না বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
রাশিয়ার সঙ্গে তুরস্কের বড় ধরনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। রাশিয়াই তাদের দ্বিতীয় বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার। গত বছর ৩০ লাখের বেশি রুশ পর্যটক তুরস্ক ভ্রমণ করেন।
পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেশকভ শনিবার বলেন, ৯০ হাজারের মতো তুরস্কের নাগরিক রাশিয়ায় কর্মরত আছেন। তাদের পরিবারের সদস্যদের হিসাবে নিলে রাশিয়ায় অবস্থানরত দেশটির নাগরিকদের সংখ্যা দাঁড়ায় দুই লাখের কাছাকাছি।
পুতিনের জারি করা ডিক্রিতে তুর্কিদের কাছে ‘প্যাকেজ’ বিক্রি বন্ধ রাখতে ট্যুর অপারেটরদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। অন্যদিকে শনিবারই তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা সতর্ক বার্তায় ‘পরিস্থিতি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত’ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাশিয়া সফর থেকে বিরত থাকতে নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
শুক্রবার তুরস্কের সঙ্গে ভিসাবিহীন ভ্রমণ ব্যবস্থা স্থগিত করেছে রাশিয়া। এরদোয়ান উত্তেজনা প্রশমনে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক চাইলেও তার আগে তুরস্ককে ক্ষমা চাইতে হবে বলে শর্ত দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। রুশ জঙ্গি বিমান ভূ-পাতিতের ঘটনায় নিজেদের নির্দোষ দাবি করে তুরস্ক বলছে, বিমানটি তাদের আকাশ সীমায় অনুপ্রবেশ করে এবং বেশ কয়েকবার সতর্ক করার পরেও তা উপেক্ষা করা হয়।
তবে মস্কো বলছে, পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তাদের এসইউ-২৪ যুদ্ধবিমান ভূ-পাতিত করা হয়। সিরিয়ার আকাশ সীমায় থাকা অবস্থায় তুরস্কের জঙ্গিবিমান থেকে সেটিতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়। হামলার আগে বিমানটি রাশিয়ার তা শনাক্ত করা হয়নি বলে তুরস্কের পক্ষ থেকে যে দাবি করা হয়েছে তাও নাকচ করেছেন পুতিন। তিনি বলছেন, এটা সহজেই শনাক্ত করা যায় এবং এর ফ্লাইট সম্পর্কিত তথ্য তুরস্কের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রকে দেওয়া হয়েছিল।
গত প্রায় পাঁচ বছর ধরে আইএসসসহ বিভিন্ন সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে লড়াইরত সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সরকারকে সহযোগিতার লক্ষ্যে সেদেশে বিমান হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া।
গত ৩০ অক্টোবর থেকে তুরস্কের প্রতিবেশী দেশটিতে রাশিয়ার এই অভিযানের সমালোচনা করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো। যদিও আইএস দমনের কথা বলে বছরখানেক ধরে সিরিয়ায় বিমান হামলা চালাচ্ছে তারা।
প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতন দাবিতে আন্দোলন থেকে ২০১১ সালে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র বাশারবিরোধী যেসব যোদ্ধাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিল তাদের অনেকেই পরে আইএসে যোগ দেন বলে বেরিয়ে এসেছে। এ কারণে সম্প্রতি ওই প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে পরিবর্তন এনেছে যুক্তরাষ্ট্র।
তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য মিত্র দেশগুলো আইএস দমনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার কথা বললেও সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বিরোধিতা করে আসছে। অবশ্য সম্প্রতি প্যারিসে হামলার পর আইএস দমনে প্রয়োজনে বাশার অনগুত বাহিনীর সহায়তা নেওয়ার কথা বলেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া অলান্দ। তবে শনিবারও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বাশার আল-আসাদকে রাশিয়ার সমর্থনের সমালোচনা করেছেন।-সুত্র: বিবিসি
(6)