শিল্প, সাংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের লীলাভুমি বাংলাদেশ। অবহমানকাল ধরে মানুষ কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে শিল্পকর্মে প্রতিভা বিকাশে অবদান রেখে চলেছে। শিল্পকর্মে বিভিন্ন সময় বৈপ্লবিক পরিবর্তন, সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও খ্যাতি অর্জন হয়েছে অহরহ। তেমনই শিল্প-সাংস্কৃতি বিকাশের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় নানা প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে অহরহ। আর এমন ধারাবাহিকতায় মান্দাতা আমল থেকেই শিল্প ও সাংস্কৃতি নিয়ে পথ চলেছেন বহু গুণিজন। খ্যাতিও অর্জন করেছেন অনেকে। তাই ব্যস্ততম জীবনে এমন কর্মযজ্ঞে নিজেকে আত্মনিয়োগ করতে পারাটা যেমন কঠিন তেমনই আনন্দময়। যার নিদর্শন হিসাবে দক্ষিণাঞ্চলে চারু ও কারুশিল্পের এক অনন্য প্রতিভা দেখিয়ে দর্শক নন্দিত হয়েছেন খুলনার ঐতিহ্যবাহী বানিজ্যিক নগরী কপিলমুনির নাছিরপুর গ্রামের সম্ভ্রান্ত সিংহ পরিবারের ছেলে হিরালাল সিংহ। পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি ইউনিয়নের নাছিরপুর গামের ঐতিহ্যবাহী সিংহ পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন এই অদম্য শিল্পী হিরালাল। ছোটবেলা থেকেই শিক্ষা জীবনের পাশাপাশি এ শিল্পের প্রতি আনুগত্যবোধ নিয়ে কাজ শুরু করে বিভিন্ন সময় তিনি প্রভুত প্রসংশা কুড়িয়েছেন। তার মেধা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে দেখিয়েছেন অতীত ও ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন সমুহের আদলে চারু ও কারু শিল্পের নৈপুণ্যতা। উপহার দিয়েছেন জীবন্ত প্রতিমার এক অভিনব প্রদর্শনী। বিনিময়ে তিনি পেয়েছেন অসংখ্য মানুষের ভালবাসা ও প্রশংসা। তার শিল্পের নিদর্শণ সমুহের মধ্যে অন্যতম পাইকগাছা তালা সীমান্তবর্তী টাইগার গেইট, কপিলমুনি সহচরী বিদ্যামন্দি স্কুল এন্ড কলেজের মনোমুগ্ধকর সুবিশাল গেইট, পঞ্চশীব মুর্তি, বালুর কুমির, পলিথিন দ্বারা বিলুপ্ত ডাইনেসর এর মুর্তি, সিংহ দুয়ার গেইটসহ তৈরী করেছেন মহিলাদের হাতের বালা তৈরীর মেশিন। এছাড়া আর্কিটেক্সার, ফাইন আর্ট এর কাজ সমুহ তার প্রতিভার বহিঃপ্রকাশ। দক্ষিণাঞ্চলের গুণি শিল্পী হিরালাল এর নৈপুণ্যতায় মুগ্ধ হয়েছেন খুলনা জেলা প্রশাসকসহ জেলা প্রশাসনের অনেকেই। পত্রপত্রিকা ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ায়ও স্থান পেয়েছে তার শিল্প কর্মের প্রতিভা। শিল্পী হিরালালের সাথে এ বিষয় একান্ত আলাপচারীতায় তিনি দলিতভয়েস২৪ কে জানান, শৈশবের স্বপ্ন থেকেই তার এই প্রয়াশ। নিজ অর্থ দিয়েই তার এই নৈপুণ্যতাকে আকড়ে ধরে তার পথ চলা। পেশা হিসাবে তার অন্যান্য ভাই ও পরিবারের সবাই স্বর্ণ ব্যবসায় জড়িত থাকলেও শিল্পী হিরালাল এ শিল্পের প্রতি ঝুকেছেন বেশ আগে থেকেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্বপ্ন পুরনের কথা মাথায় রেখে তিনি নিজেকে এ শিল্পে আত্মনিয়োগ করেছেন। ভবিষ্যৎ ভাবনা সম্পর্কে তিনি জানান, আমাদের সমাজে অনেক জিনিষ রয়েছে যার নাম শোনা যায় কিন্তু অনেক আগে থেকেই তা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। সে সব প্রাণীদের বর্ণনা বা নিদর্শন কর্মব্যাস্ত মানুষের অগচরে চলে গেছে। লোক চক্ষুর অন্তরালে থাকা সে সব নিদর্শন সমুহ এখন নিশ্চিহ্ন প্রায়। সে সবের মাঝে আমি যেন নিজের নৈপুণ্যতা খুজে পাই। আর তার থেকেই একে একে এ সব কিছু উদ্ভাবন করার চেষ্টা করি; সফলও হই।