শচীন্দ্র নাথ মন্ডল, দাকোপ: ঘূর্ণিঝড় মোখা ধেয়ে আসচ্ছে বেশ কয়েক টি স্হানে, অরক্ষিত দাকোপের ভেড়িবাঁধ। আতঙ্কে এ আঞ্চলের প্রায় দুই লক্ষ মানুষ।
প্রতিবছর একটার পর একটা দূর্যোগ মোকাবেলা করে বেঁচে আছে দাকোপের লক্ষাধিক মানুষ। প্রবল ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আইলার ক্ষত এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি এ অঞ্চলের অনেক পরিবার। তাই আবার যখন ঘূর্ণীঝড় মোখার আগমন বার্তা শুনেছে তখন থেকেই দুশ্চিন্তায় ঘুম হারাম হতে চলেছে এ উপকূলবাসির।
৩১, ৩২ ও ৩৩ এ তিনটি পোল্ডারে বিভক্ত দাকোপ উপজেলা মুলতো তিনটি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। ৩১ নম্বর পোল্ডারে রয়েছে চালনা পৌরসভা, পানখালী ও তিলডাঙ্গা ইউনিয়ন। ৩২ নম্বর পোল্ডারে রয়েছে কামারখোলা ও সুতারখালী ইউনিয়ন।৩৩ নম্বর পোল্ডারে আছে দাকোপ,লাউডোব, কৈলাশগঞ্জ, বাজুয়া ও বানিশান্তা ইউনিয়ন। বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ওয়াপদার ভেড়িবাঁধ নির্মিত হয়েছে ৩২ ও ৩৩ নম্বর পোল্ডারে। দুইধারে মাটি ও মাঝখানে বালু দিয়ে নির্মিত এ ওয়াপদার রাস্তা একটুও টেকসই হয়নি। তাই বছর না গড়াতেই শিসসা, ঢাকি, পশুর, ভদ্রা, ঝপঝপিয়া নদীর লাগাতার ভাঙনে নদী গর্ভে চলে গেছে এইসব বালুর বাঁধের অনেকাংশ। দায়সারা কাজ, ফলে ঝুঁকিপূর্ন এলাকার ঝুঁকি আরও বেড়ে গেছে। একটু জলোচ্ছাস হলে এসব বাঁধ যে টিকবে না তা এখন থেকেই বোঝা যাচ্ছে।
সরেজমিনে ৩টি পোল্ডার ঘুরে দেখাযায়, চালনা পৌরসভার মেরিন প্রডাক্টস লিমিটেডের সামনে থেকে এনামুলের সমিল পর্যন্ত প্রায় অর্ধ কিলোমিটার ওয়াপদার রাস্তা নদীভাঙনে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ অবস্থায় রয়েছে। একটি মাদ্রাসা ও এতিমখানা নদীতে বিলিন হওয়ার পথে।
পানখালী ইউনিয়নের খলিশা, লক্ষীখোলা পিচের মাথা, খোনা খাটাইল ও পানখালী খেয়াঘাট নদীভাঙনে ঝুঁকিপুর্ন অবস্থায় রয়েছে। দাকোপ ইউনিয়নের পোদ্দারগঞ্জ ফেরি ঘাট ও বাজার প্রচন্ড ভাঙনের মুখে পড়ছে ইতিমধ্যে বাজারের প্রায় ৫০ বিঘা জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। রামকৃষ্ণ মঠ ও মন্দির নদীর গর্ভে চলে গেছে। ভাঙন চলে এসেছে নতুন ওয়াপদা রাস্তার গায়ে। তিলডাংগা ইউনিয়নের বটবুনিয়া বাজারের ৭০ শতাংশ নদীতে চলে গেছে।
আঁধারমানিক, কামিনিবাসিয়া, ঝালবুনিয়া, উত্তর কামিনীবাসিয়ার ওয়াপদার রাস্তা ঝুঁকিপুর্ন অবস্থায় রয়েছে। কামারখোলা ইউনিয়নের জালিয়াখালীর ২টি স্থান এবং ভিটাভাঙা ওয়াপদার রাস্থা নদীভাঙনের কবলে পড়েছে। সুতারখালী ইউনিয়নের কালিবাড়ি সংলগ্ন ১কিঃমিঃ পিচের রাস্তার ৭০ শতাংশ নদীগর্ভে চলে গেছে। ঝুঁকিপূর্ন অবস্থায় রয়েছে, দক্ষিণ নলিয়ান, দক্ষিণ কালাবগি, কালাবগি সুতারখালী হানিফ সাহেবের হেচারি সংলগ্ন রাস্তা। বানীশান্তা ইউনিয়নের গ্যাস ফেক্টরি থেকে পতিতা পল্লী, রেখামারী, পূর্ব ঢাংমারী বড়বাড়ির সামনের রাস্তা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ন অবস্থায় রয়েছে। বাজুয়া ইউনিয়নের পোদ্দারগঞ্জ খেয়াঘাটের উত্তর পার্শে প্রায় ১ কিলোমিটার মারাত্মক নদীভাঙনের শিকার। ইতমধ্যে প্রায় ১শত বিঘা জমি চুনকুড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। উল্লেখিত ওয়াপদার রাস্তাগুলি নদীভাঙনের কারণে বিলিীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। সরেজমিনে আরও দেখাযায় মারাত্মত ঝুঁকিপুর্ন ভাঙন কবলিত স্থানে জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন রোধের চেষ্টা চলছে। তবে এলাবাসি মনে করেন কাজগুলি আরও আগে শুরু করা উচিৎ ছিল।
১নং পানখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ সাব্বির আহম্মেদ বলেন ওয়াপদার রাস্তাগুলি সময়মত মেরামত না করার কারনে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। মানুষের জান-মালের ঝুঁকি বাড়ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দাকোপ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আঃ কাদের জানান, ঘূর্নিঝড় মোকাবেলার জন্য জরুরী সভা করা হয়েছে এবং সাধ্যমত সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এ এলাকার মানুষের জন্য ১১৮ টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
(28)