শচীন্দ্র নাথ মন্ডল, দাকোপঃ দাকোপের চালনা পৌরসভার মাছ কোম্পানী মেরিন প্রোডাক্টস লিমিটেডের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। শ্রমিকের শ্রম ঘন্টা ফাাঁকি, ওভার টাইমে নেই কোনো বাড়তি ভাতা। শ্রমিকদের বেতন ভাতা দেওয়া হয় এক মাস অন্তর। কাজ করানো হয় শিশু শ্রমিক দিয়ে। নারী শ্রমিকদের জন্য নেই নারী বান্ধব পরিবেশ। কোম্পানীর নষ্টপানি ও বর্জ্য সরাসরি ফেলা হচ্ছে নদীতে।
দক্ষিণ খুলনার দাকোপের এক মাত্র হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি কারক প্রতিষ্ঠান চালনা মরিন প্রোডাক্টস লিমিটেড। এলাকায় কর্মসংস্থানের তেমন কোনো সুযোগ না থাকায় এখানে শ্রমদিতে আসে স্থানীয় অনেক দরিদ্র ও হত-দরিদ্র পরিবারের নারি ও পুরুষ। খোঁজ-খবর নিয়ে জানাযায় এখানে যারা কাজ করতে আসে তাদের মাসিক বেতন অনেক কম। সাধারণ কর্মীর বেতন ৯ হাজার এবং পেনারদের বেতন ৭ হাজার ৫শ থেকে ৮ হাজার টাকা। মালিক পক্ষ জানতে পারলে চাকুরী থাকবেনা এই ভয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শ্রমিক জানান, তারা তাদের বেতন প্রতি মাসে না পেয়ে একমাস অন্তর এক মাসের বেতন পায়। অর্থাৎ এক মাসের বেতন কোম্পানীর কাছে ধরা থাকে। এতে দ্রব্য মূল্যের এই উর্ধগতির সময়ে শ্রমিকরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে চরম দূর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। দৈনিক ৮ ঘন্টা কাজ করার কথা থাকলে ও কাজ করানো হয় ১০ থেকে ১২ ঘন্টা। ওভারটাইমে বেতনের দ্বিগুন টাকা দেওয়ার আইন থাকলেও ওভার টাইমের জন্য কোনো বেতন-ভাতা দেওয়া হয় না। টিফিন খরচ হিসেবে মাত্র ৫০ টাকা দেওয়া হয়। এখানে অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ শ্রমিক। যারা গেটের দারোয়ান তারাই শুধু ৮ ঘন্টা ডিউটিকরে। শ্রমিকদেও অধিকার এবং কোম্পানীর দূর্নীতিনিয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে চাকুরি থেকে বাদ দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটির অফিস সূত্রে জানাযায় কোম্পানীর বর্তমান কর্মীর সংখ্যা নারী পুরুষ মিলে ৪০ জন। বেশ কিছু দিন ধরে কোম্পানীর উৎপাদন নাকি বন্ধ রয়েছে। এই সাময়িক বন্ধের কারণ মালিক ছাড়া আর কেউ বলতে পারেনা। এমন পরিস্থিতিতে কাজ হারানো এবং বকেয়া বেতন না পাওয়ার আশংকায় দিন কাটাচ্ছে সাধারণ শ্রমিকরা।
সরেজমিনে দেখাযায় কোম্পানীর গেটের পার্শে একটি সাইনবোর্ডে বড় করে লেখা আছে এখানে ১৮ বছরের নিচে কাউকে কাজ দেওয়া হয় না। অথচ ভিতরের চিত্র অন্য রকম, ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সি একাধিক কিশোরী কোম্পানীর ইউনিফর্ম পওে মাথায় মাছের প্যাকেট বহন করে গাড়িতে তুলে দিচ্ছে। কোম্পানীর নষ্টপানিও বর্জ্য সরাসরি পাইপ দিয়ে সামনের চুনকুড়ি নদীতে ফেলা হচ্ছে। এখানে নারী শ্রমিকদের জন্য নেই তেমন কর্ম পরিবেশ। শ্রমিকের বেতন প্রতিমাসে কেন দেওয়া হয় না, বছরের পর বছর কাজ করার পরও কেন বেতন বাড়েনা, ওভারটাইমে টিফিনের জন্য ৫০ টাকা ছাড়া কেন বাড়তি বেতন ভাতা দেওয়া হয় না এবং কেন শিশু শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে এসব কথা জানতে চাইলে কোম্পানীর ব্যবস্থাপক খোরশেদ আলম জানান এটা এ কোম্পানীর নিয়ম। শিশু শ্রমিকের বিষয়ে তিনি বলেন, ওরা সবসময়না মাঝে মধ্যে পারটাইম কাজ করতে আসে। নদীতে সরাসরি নষ্ট পানি ও বর্জ্য ফেলার বিষয়ে তিনি জানান পরিবেশ দফতরের কর্মকর্তারা আসেন তারা তো বিষয়টি দেখে খারাপ কিছু বলেননা।
কোম্পানীর মালিক জাহাঙ্গীর হাবিবের সাথে মুঠো ফোনে কথা বলার জন্য ব্যবস্থাপক একটি মোবাইল নম্বর দেন। সে নম্বর দিয়ে ফোন করে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বলতে চাইলে অপর প্রান্ত থেকে উত্তর আসে তিনি উক্ত কোম্পানীর মালিক নন।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় ভারপ্রাপ্ত উপজেলানির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) পারভিন সুলতানার সাথে । তিনি জানান মাছ কোম্পানীর বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
(2)