সাতক্ষীরা প্রতিনিধিত: বহু জল্পনা কল্পনা শেষে হাইকোর্টের নির্দেশ নিজ দায়িত্ব বুঝে পেলেন সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র মো. তাসকিন আহমেদ চিশতি। বুধবার দুপুর আড়াইটাই সাতক্ষীরা পৌরভবনে মেয়রের চেয়ারে বসে ভারপ্রাপ্ত মেয়র কাজী ফিরোজ হাসান ও পৌরসভার সিইও নাজিমুদ্দিনের উপস্থিতে নিজ দপ্তরে দাপ্তরিক কাজ শুরু করেন।
এসময় পৌরসভার কাউন্সিলর সৈয়দ মাহমুদ পাপা,শফিক উদ দৌলা সাগর, কাউন্সির কায়সারুজ্জামান হিমেল, কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম বাবু, নুরজাহান বেগম, অনিমা রানী মন্ডলসহ পৌরসভার কাউন্সিলর কর্মকর্তা কর্মচারীসহ নাগরিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সাতক্ষীরা পৌরসভার প্যানেল মেয়র কাজী ফিরোজ হাসান বলেন, গত ৬ ফেব্রুয়ারি পৌর মেয়র তাসকিন আহমেদ চিশতী সাময়িক বরখাস্ত হন। আমি এক নম্বর প্যানেল মেয়র হয় মন্ত্রণালয় থেকে আমাকে চিঠি পাঠানো হয় এবং ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালনের জন্য বলা হয়। পৌরসভার সিইও কাউন্সিলর কর্মকর্তা কর্মচারী আমাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন। আমি দায়িত্ব পালন করতে থাকি। গতকাল জানতে পারি নির্বাচিত মেয়র সাহেবকে মন্ত্রণালয় উনার দায়িত্ব তাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। আজ উনি আসবেন শুনে আমরা ১২জন কাউন্সিলর তাকে ফুল দিয়ে বরণ করার জন্য দাঁড়িয়েছিলাম। দুপুরে আমার দায়িত্ব নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে বুঝিয়ে দিয়েলিাম। কিন্তু তিনি এসে আমাদের সাথে দেখা করেননি। দুপুর আড়াইটা এসেছেন উনার দায়িত্ব ওনাকে বুঝিয়ে দিয়েছি। আমি যেমন স্বাক্ষর করে নিয়েছিলাম তেমনি স্বাক্ষর করে দিয়েছি। কিন্তু ওনি স্বাক্ষর করে বুঝে নেননি।
পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিন বলেন, গতকাল আমি স্থানীয় মন্ত্রণালয় সরকার বিভাগ থেকে একটি চিঠি পেয়েছি মেয়র মহোদয়ের বরখাস্তের আদেশ স্থগিত করা হয়েছে। তাৎক্ষণিক আমি মেয়র মহোদয়ের সাথে যোগাযোগ করি। তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ অসুস্থ বলে আমাকে জানান। তিনি দায়িত্বভার কবে নেবেন জানতে চাইলে। আজ (২১ জুন) নাও আসতে পারেন। আগামীকাল (২২ জুন) আসবেন বলে আমাকে জানান। তারপর আজ দুপুরে দায়িত্ব ভার হস্তান্তর করতে আসতে বলি। প্যানেল মেয়র ও আমি নিজে দায়িত্ব হস্তান্তরের কাগজে স্বাক্ষর করলেও মেয়র মহোদয় সেখানে স্বাক্ষর করেননি। স্থানীয় সরকার বিভাগ ও হাইকোর্ট প্যানেল মেয়রকে দায়িত্ব হস্তান্তরের কথা বলেছেন। হস্তান্তর সেটা অবশ্য গ্রহণ করতে হয়। কিন্তু মেয়র সাহেব সেটা গ্রহণ করেননি। বিষয়টা আমি স্থানীয় সরকার বিভাগকে জানাবো।
এদিকে সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র তাসকিন আহমেদ চিশতি বলেন, গত চৌদ্দই ফেব্রুয়ারি মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ আমার বরখাস্তের আদেশ স্থগিত করে পুনরায় চেয়ারে বসার আদেশ দেন। কিন্তু প্যানেল মেয়র তথা ভারপ্রাপ্ত মেয়র পেশী শক্তির বলে আমাকে চেয়ারে বসতে দেননি। গত ১৯ জুন তারিখ হাইকোর্টের নির্দেশের পরে আমি পৌর ভবন এসেছি। কিন্তু গতকাল (২০ জুন) পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা ও সচিব সাহেবকে ফোন করে বলেছিলাম আজ আসবো। আজ সকালে বলেছি আমি অফিসে আসছি। তারপরেও আমাকে সকালে এসে তিন ঘন্টা বসে থাকতে হয়েছে। বিষয়টি ছিল খুবই সাধারণ রেজিস্টার খাতা, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, আমার রুমের চাবি ও গাড়ির চাবি আমাকে বুঝিয়ে দেবেন। কিন্তু হাইকোর্টের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আমার রুমটি খুলে দেননি। কাউন্সিলর সাহেবরা চাবিটা সাহেবের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছেন কিন্তু তিনি আমাকে তিন ঘন্টা ঘুরানো হয়েছে। আমি মনে করি এটি আদালত অবমাননার শামিল। আগামী ১৬ তারিখে কোর্টে শুনানি রয়েছে সেখানে বিষয়টি উত্থাপন করব।
তিনি আরও বলেন, এর আগে যদি দেখতে পেয়েছিলেন তার সকল বিয়য়ে স্থগিত করা হয়েছে আমার দায়িত্ব আমি পালন করব এখানে কারো কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝিনি আর কোন কিছু নাই। কারো কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝিয়ে নেওয়ার কোন বিষয় নেই।
এরপরে আমি খুশি আমার দায়িত্ব আমি বুঝে পেয়েছি। আমরা ১৩জন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি পৌরবাসীর জন্য সবাই মিলে কাজ করব
তিনি আরও বলেন, পৌরসভা অধিকাংশ অর্থনৈতিক কর্মকান্ড জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পরিচালিত হয়। আমার কাছে অনেকে প্রশ্ন করছেন অর্থনৈতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। আমি দীর্ঘদিন দায়িত্বে ছিলাম না। অর্থনৈতিক কর্মকান্ড কি হয়েছে আমার জানা নেই। কাগজপত্র দেখে আমি বিস্তারিত বলতে পারব। পৌরসভার নাগরিকরা মৌলিক কিছু সমস্যার মধ্যে রয়েছে আমি কাউন্সিলরসহ কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করব। পৌরবাসীকে সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে কর্মকর্তা কর্মচারীদের আরো আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি ।
প্রসঙ্গত, সোমবার (১৯ জুন) সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র মো. তাসকিন আহমেদ চিশতিকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে প্যানেল মেয়র কাজী ফিরোজ হাসানকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মো. শওকত আলী চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি আদালতের আদেশে সাতক্ষীরা পৌরসভা কার্যালয়ে গেলেও তাকে চেয়ারে বসতে দেননি ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্বে থাকা
প্যানেল মেয়র কাজী ফিরোজ হাসান।
(3)