নিজামী-মীর কাসেম ছাড়া আপিল বিভাগে বিচারাধীন আরো ৯ মামলার আসামি হলেন জামায়াতের নায়েবে আমির মুহাম্মদ আবদুস সুবহান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির নেতা সৈয়দ মো. কায়সার, আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা মোবারক হোসেন, পিরোজপুরের আবদুল জব্বার, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাহিদুর রহমান, পটুয়াখালীর ফোরকান মল্লিক, বাগেরহাটের সিরাজ মাস্টার ও খান মো. আকরাম হোসেন।
নিষ্পত্তির পথে নিজামীর আপিল : ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজমীর করা আপিল শুনানি শেষের দিকে। ৩০ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিজামীর পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন চলবে আপিল বিভাগে। ৭ ডিসেম্বর নিজামীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তি উপস্থান করবে। ৮ ডিসেম্বর হবে পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন। আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৮ ডিসেম্বরেই পাল্টা যুক্তি উপস্থান শেষে নিজামীর মামলাটি চূড়ান্ত রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হতে পারে। এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, আগামী ১৫ ডিসেম্বরের আগেই নিজামীর মামলার আপিল শুনানি শেষ হবে। বুদ্ধিজীবীহত্যা, গণহত্যা, লুণ্ঠন, সম্পত্তি ধ্বংস, দেশত্যাগে বাধ্য করা, আটক, নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র ও সংঘটনে সহযোগিতার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় গত বছরের ২৯ অক্টোবর নিজামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
মীর কাসেম আলী : মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মীর কাসেম আলীকে গত বছরের ২ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। রাষ্ট্রপক্ষের আনা ১১ ও ১২ নম্বর অভিযোগে মুক্তিযোদ্ধা জসিম ও জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে হত্যার দায়ে তার ফাঁসির রায় হয়। ওই রায়ের বিরুদ্ধে গত বছরের ৩০ নভেম্বর আপিল করেন মীর কাসেম। চলতি বছরের ২৮ মে আপিল বিভাগ আপিলের সারসংক্ষেপ দাখিলের জন্য দুই পক্ষকে চার সপ্তাহ সময় দেন আদালত।
মোবারক হোসেন : ফাঁসির দণ্ড পাওয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা মোবারক হোসেন গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর আপিল করেন।
হত্যা, অপহরণ, জোরপূর্বক আটকে রাখা, নির্যাতন ও লুটপাটের অভিযোগের মধ্যে হত্যা ও গণহত্যার অভিযোগ দুটি প্রমাণিত হওয়ায় গত বছরের ২৪ নভেম্বর মোবারককে ফাঁসির দণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। একই বছরের ১৮ ডিসেম্বর ফাঁসির দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে আপিল করেন এই আসামি।
মোবারকের আইনজীবী তারিকুল ইসলাম জানান, আপিলে ৭৭টি গ্রাউন্ডে ৮৬২ পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট জমা দেওয়া হয়েছে।
সৈয়দ কায়সার : এরশাদ সরকারের কৃষি প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের ফাঁসির রায় হয় গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে নিজের নামে ‘কায়সার বাহিনী’ গঠন করে অপরাধ সংঘটনের দায়ে কায়সারকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
১৯ জানুয়ারি ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন তিনি। আপিল আবেদনে ফাঁসির দণ্ড বাতিলের পক্ষে মোট ৫৬টি কারণ দেখানো হয়েছে।
এটিএম আজহারুল ইসলাম: জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলামকে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর ফাঁসির রায় দেন ট্রাইব্যুনাল। আজহারের বিরুদ্ধে আনা ৬টি অভিযোগের মধ্যে ২,৩ ও ৪ নম্বর অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড এবং ৫ ও ৬ নম্বর অভিযোগে ৩০ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। ১ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।
তার বিরুদ্ধে একাত্তরে গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ৬টি অভিযোগ আনা হয়। ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি আপিল করেন আজহার।
আব্দুস সুবহান: জামায়াতের নায়েবে আমির আব্দুস সুবহানকে চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ফাঁসির দণ্ড দেন। সর্বোচ্চ সাজার বিরুদ্ধে ১৮ মার্চ আপিল করেন জামায়াত নেতা আবদুস সুবহান। আপিল আবেদনে ফাঁসির দণ্ড থেকে খালাস পেতে ৯২টি যুক্তি দেখানো হয়েছে। ৩ ভলিউমে ১১৮২ পৃষ্ঠার আপিল দাখিল করা হয়েছে।এর মধ্যে মূল আপিল ৪৯ পৃষ্ঠার।
ইঞ্জিনিয়ার জব্বার : জাতীয় পার্টির প্রাক্তন সংসদ সদস্য পলাতক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বারকে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে গত ২৫ মার্চ আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। ৩৭৮ পৃষ্ঠার আপিল আবেদনে ট্রাইব্যুনালের আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশকে চ্যালেঞ্জ করে ফাঁসির আদেশের পক্ষে ১০টি কারণ তুলে ধরা হয়েছে। এর আগে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইঞ্জিনিয়ার জব্বারকে শুধু বয়স বিবেচনায় আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল।
মাহিদুর রহমান: চলতি বছরের ২০ মে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রাজাকার মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেন চুটুকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। মাহিদুর খালাস চেয়ে ১৭ জুন আপিল করলেও চুটু আপিল করেননি বলে জানান তাদের আইনজীবী আব্দুস সাত্তার পালোয়ান।
ফোরকান মল্লিক: গত ১৬ জুলাই পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের রাজাকার ফোরকান মল্লিককে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছে বলে জানান প্রসিকিউটর তাপস কান্তি বল।
সিরাজ–আকরাম: চলতি বছরের ১১ অগাস্ট বাগেরহাটের রাজাকার কমান্ডার শেখ সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টারকে মৃত্যুদণ্ড ও খান আকরাম হোসেনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে নির্ধারিত ৩০ দিনের মধ্যে খান আকরাম হোসেন ও সিরাজ মাস্টার আপিল করেছেন ।-রাইজিংবিডি
(7)