মোঃ আব্দুল আজিজ, পাইকগাছাঃ পাইকগাছার ঐতিহ্যবাহী ঘোষখালী নদীর কচুরিপানা অপসারণ নিয়ে দিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন এলাকাবাসী। অনেকেই কচুরিপানা ধ্বংস করতে লবণপানি উত্তোলনের কথা বলছেন। অনেকেই আবার লবণপানির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিকল্প ব্যবস্থায় কচুরিপানার অপসারণ চাচ্ছেন। এনিয়ে বিপাকে রয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও পরিষদ বর্গ। সাধারণ মানুষের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে এলাকাবাসীর সাথে বৈঠক করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান।
বৈঠকে বেশিরভাগ মানুষ প্রকৃতি ও পরিবেশ বজায় রেখে কচুরিপানা অপসারণের জন্য মতামত দিয়েছেন। উল্লেখ্য, উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন গড়ইখালী ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী ঘোষখালী বদ্ধ নদী ইউনিয়নের শান্তা বাজার স্লুইচ গেট থেকে শুরু হয়ে ইউনিয়ন মধ্য দিয়ে কয়রা উপজেলার আমাদী গিয়ে শেষ হয়েছে। প্রায় ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে বদ্ধ নদীতে ভরা বর্ষা মৌসুমে পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে রাখা হয়। যে পানি দিয়ে শুষ্ক রবি মৌসুমে পাইকগাছার গড়ইখালী ও চাঁদখালী এবং কয়রা উপজেলার আমাদী ও মহেশ^রীপুর সহ ৪ ইউনিয়নের হাজার হাজার হেক্টর জমিতে ধান ও তরমুজ সহ নানা ধরণের রবি ফসল উৎপাদন করা হয়। এ ধরণের ব্যবস্থায় গ্রামীণ অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।
একদিকে যেমন পতিত থাকা হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল উৎপাদনের আওতায় এসেছে, অপরদিকে কৃষি ফসল উৎপাদন ও বিক্রয় করে হাজার হাজার কৃষকের আর্থসামাজিক উন্নয়ন হয়েছে। এছাড়া নদীর মিষ্টি পানি পান করে গরু, মহিষ সহ হাজার হাজার গবাদি পশু পালন করছেন এলাকার মানুষ। অন্যদিকে দেশীয় প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ সহ বংশ বিস্তার ঘটছে অত্র নদীতে। এ নদীর মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছে অসংখ্য মানুষ। নদীর দু’ধারের শত শত পরিবার গোসলও করে থাকে নদীর মিষ্টি পানিতে। এক কথায় ঘোষখালী নদীর মিষ্টি পানির সংরক্ষণ ব্যবস্থা বদলে দিয়েছে এলাকার মানুষের জীবন যাত্রা। এছাড়া পরিবেশ সংরক্ষণ হওয়ার পাশাপাশি প্রাণ ফিরে পেয়েছে প্রকৃতি। মিষ্টি পানির কারণে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ পালা বেড়ে উঠছে দ্রুত। বিশেষ করে প্রায় প্রতিটি বাড়ীতে এখন রয়েছে ফলজ বৃক্ষ। এদিকে রবি মৌসুমের ফসল উৎপাদন শেষে নদীটি ভরে গেছে কচুরিপানায়। এই কচুরিপানা নিয়ে চরম বিপাকে রয়েছেন এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান সহ এলাকার মানুষ। অনেকেই মনে করছেন কচুরিপানা পরিষ্কার না করলে নদীটি দ্রুত ভরাট হয়ে যাবে। এ জন্য অনেকেই লবণ পানি উত্তোলন করে কচুরিপানা মেরে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছেন। এ ধরণের ব্যবস্থায় প্রকৃতি ও পরিবেশ চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়বে বলে মনে করছেন বেশিরভাগ মানুষ। এলাকার মানুষ দিধা বিভক্ত হয়ে পড়ায় সিদ্ধান্ত নিতে চরম বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান। তিনি বেশিরভাগ মানুষের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে কচুরিপানা অপসারণ করার জন্য এলাকাবাসীর মতামত নিতে বুধবার সন্ধ্যায় ইউনিয়নের বাইনবাড়িয়া হাইস্কুল মাঠে এলাকাবাসীর সাথে বৈঠক করেন।
বৈঠকে নানামুখী আলোচনা আনতে বেশিরভাগ মানুষ এলাকার প্রকৃতি ও পরিবেশ বজায় রেখে ইউনিয়ন পরিষদ ও এলাকাবাসীর যৌথ অর্থায়নে শ্রমিক দিয়ে কচুরিপানা অপসারণের পরামর্শ দেন।
ইউপি চেয়ারম্যান জিএম আব্দুস সালাম কেরু’র সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, ইউপি সদস্য এসএম আয়ুব আলী, বিকাশ চন্দ্র মন্ডল, প্রধান শিক্ষক দেব প্রসাদ সানা, আওয়ামী লীগনেতা আব্দুস সাত্তার নুন্টে, প্রধান শিক্ষক বিভাস চন্দ্র বাছাড়, স্বপন কুমার মন্ডল, কুমারেশ চন্দ্র মন্ডল, গনেশ চন্দ্র মন্ডল, ত্রিপল কান্তি বাছাড়, জয়ন্ত কুমার মন্ডল, বিনয় কৃষ্ণ মন্ডল, কার্তিক চন্দ্র মন্ডল, সুনীল কুমার গাইন, রমেন কুমার মন্ডল, পতিত পাবন সরদার, পুষ্পেন সরদার, ঠাকুর দাশ সানা, অমীয় বৈরাগী, সুশান্ত কুমার মন্ডল, মজিদ গাইন, সঞ্জয় কুমার, সালাম গাজী, কলিম শেখ, বারিক শেখ, নবতোষ মন্ডল, প্রসাদ চক্রবর্তী, জগদীশ মন্ডল, সোহরাব শেখ, গোবিন্দ মন্ডল, তুষার কান্তি মন্ডল, স্বপন মন্ডল, সুজিত মন্ডল, তাপস সানা, সুদীপ বাছাড়, মিঠুন বাছাড়, সমীরণ বাছাড় ও অনীল বাছাড়।
(9)