চায়ের রাজ্য মৌলভীবাজার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনন্য এক উপাখ্যান। এখানকার ছোট-বড় চা বাগানগুলো যেন সবুজের আচ্ছাদনে গড়ে তুলেছে এক প্রাকৃতিক ভূস্বর্গ। চারদিকের এই সবুজের সমাহার হরহামেশাই প্রকৃতিপ্রেমীদের সম্মোহিত করে।
অপরূপ স্থান দেখতে পর্যটকরা চলে যান মৌলভীবাজারে। এই অনন্য প্রাকৃতিক শোভা তাদের দারুণ আকর্ষণে টানে। আর তাই পর্যটকরা বার বার ফিরে যান মৌলভীবাজারের বুকে। থাকার জন্য গড়ে উঠেছে দারুণ সব রিসোর্ট। আর এই রিসোর্টগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যে বাঁশ ও ছনের দৃষ্টিনন্দন অরণ্যনিবাস ইকো রিসোর্ট।
যারা সবুজ গাছপালা, নীরবতা, পাখির কিচিরমিচির, শুকনো পাতার মড়মড়ে শব্দ পছন্দ করেন এমনকি প্রকৃতির মাঝে নিজেকে সঁপে দিতে চান, সবই যেন একাকার হয়ে মিশে আছে অরণ্যনিবাস ইকো রিসোর্টে। গ্রামে বেড়ানোর সুযোগ যাদের নেই তারা সত্যিকারের আদর্শ গ্রামের অনুভূতি পাবেন এখানে। এটি গড়ে উঠেছে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ৫নং সদর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের বনগাঁও গ্রামে।
বাঁশ ও ছনের তৈরি ইকো রিসোর্টটি সহজেই চোখ জুড়াবে দর্শনার্থীদের। এখানে রয়েছে মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্য ছাড়াও গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যে তৈরি ৮টি কটেজ। রিসোর্টে রয়েছে ৮টি কক্ষ। এছাড়াও রয়েছে ছাত্রদের জন্য আলাদা ৬টি পট হাউসের ব্যবস্থা।
ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা আকাশ জামান, হাসান আল-মামুন, আবদুস শুকুর বলেন, দেশে বিভিন্ন নামি-দামি কটেজ আছে, তবে এই কটেজ একটু ব্যতিক্রম। এই কটেজে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য খুঁজে পাওয়া যায়। তাই ফেসবুকের মাধ্যমে এর অবস্থান খুঁজে এখানে এসেছি।
এদিকে স্থানীয় শিক্ষক ঝুলন চক্রবর্তী বলেন, ‘এ রিসোর্ট হওয়ার পর এলাকাটি অনেক পরিচিতি লাভ করেছে। হাজার হাজার মানুষ প্রতিনিয়ত এ এলাকায় আসছে জানতে পারছে গ্রামগঞ্জের ইতিহাস এতিহ্য।’
অরণ্যনিবাস ইকো রিসোর্টের পরিচালক ফায়কুজ্জামান বাদশা বলেন, ‘আমাদের সব কটেজের রুম বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটা রুমে রয়েছে এসি। শুক্র ও শনিবার কটেজের বড় রুমগুলোর ভাড়া সাড়ে ৫ হাজার টাকা এবং অন্যান্য দিনের জন্য রয়েছে সাড়ে ৪ হাজার টাকা। ছোট ছোট পট হাউসের ভাড়া ১ হাজার করে নির্ধারিত করা হয়েছে, সেখানে ছাত্রছাত্রীরা থাকতে পারবেন। এখানে রয়েছে মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। রয়েছে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা। এটা বাংলাদেশের অন্যান্য ইকো রিসোর্টের চেয়ে পুরোটাই ব্যতিক্রমী।’
অরণ্যনিবাস ইকো রিসোর্টের পরিচালক আরো বলেন, ‘প্রকৃতির কাছাকাছি কোথাও ছুটি কাটাতে চাইলে অরণ্যনিবাস হবে আপনার জন্য দুর্দান্ত এক অপশন। চমৎকার গোছানো এবং গাছগাছালিতে ভরা এই রিসোর্টে রয়েছে বড় পর্দায় খেলা ও ছবি দেখার ব্যবস্থা, বোটিং, নিরিবিলি সময় বা গল্প করার জন্য রয়েছে বেশকিছু বসার স্থান।’
কীভাবে যাবেন এই ইকো ভিলেজে? দেশের যে কোনো স্থান থেকে বাস, ট্রেন বা হেলিকপ্টার যোগে মৌলভীবাজার যাওয়া যাবে, সেখান থেকে এই রিসোর্টে যেতে পারেন। বাস বা রেলপথে এলে ঢাকা থেকে সিলেটগামী আন্তঃনগর ট্রেনে করে নামতে হবে শ্রীমঙ্গল, ভানুগাছ বা শমসেরনগর রেলওয়ে স্টেশনে। দেশের সব আন্তঃনগর ট্রেন শ্রীমঙ্গল, ভানুগাছ ও শমসেরনগর রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রাবিরতি করে। ফলে আগেই জেনে নিতে হবে কোথায় নামতে হবে। শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশনে নামলে সেখান থেকে বাস ও সিএনজি অটোরিকশা পাওয়া যায়। সেখান থেকে অটোরিকশায় সহজেই ‘অরণ্যনিবাস ইকো রিসোর্টে’ পৌঁছানো যায়। যাদের প্রচুর হাঁটার অভ্যাস আছে তারা ভানুগাছ থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার পথ হেঁটেও যেতে পারেন সেখানে। আবার ভানুগাছ ও শমশেরনগর নামলে অটোরিকশা করে সেখানে পৌঁছাতে পারেন। ঢাকা বা দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে বাসে আসতে চাইলে মৌলভীবাজারগামী বাসে ওঠে নামতে হবে শ্রীমঙ্গলে। সেখান থেকে একইভাবে যাওয়া যায়। এ ছাড়া বিমানে এলে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে নেমে বাস বা ট্রেনে আসা যাবে শমসেরনগর, সেখান থেকেই আপনি এই অরণ্যনিবাস ইকো রিসোর্টে আসতে পারেন। তাছাড়া আসার সময় দেখতে পারবেন চা-বাগান, সুপরিচিত মাধবপুর লেক, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ, পদ্মছড়া লেক, পাত্রখলা লেক, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, হামহাম জলপ্রভাত।
(1)