বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসেবে গত তিন বছরে বিএসএফ-এর হাতে সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিক হত্যা বেড়েছে । আর এসব হত্যাকাণ্ড ঘটছে গুলি ও নির্যাতনে। তাদের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৩ সালে মোট ২৭ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করে বিএসএফ সদস্যরা। তাদের মধ্যে ১২ জনকে গুলি করে এবং ১৪ জনকে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। আর একজনকে কিভাবে হত্যা করা হয়েছে তা এখনও জানা যায়নি।
২০১৪ সালে হত্যা করা হয়েছে ৩৩ জন বাংলাদেশিকে । এরমধ্যে গুলি ও নির্যাতনে সমান সংখ্যক বাংলাদেশিকে হত্যা করা হয়।
আর চলতি বছরের জানুযারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত হত্যা করা হয়েছে ৩৭ জনকে। এদের মধ্যে ২৫ জনকে গুলি এবং ১২ জনকে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। চলতি বছরে নভেম্বর মাসে আরও তিনজনকে হত্যার খবর ছাপা হয়েছে সংবাদ মাধ্যমে । এ হিসাবে এ বছর সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যার সংখ্যা আগের দু’বছরের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে।
অন্যদিকে, ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত হত্যার তথ্য পাওয়া যায় উইকিপিডিয়ায়। তারা নিয়মিত এই ঘটনা হালনাগাদ করে। উইকি’র হিসাব অনুযায়ী, ২০১৩ সালে সীমান্তে বিএসএফ-এর হাতে ১৫ জন পাকিস্তানি নাগরিক নিহত হয়েছেন। ২০১৪ সালে ৯ জন এবং চলতি বছরে এপর্যন্ত ২২ জন পাকিস্তানি নাগরিক নিহত হয়েছেন। এই সীমান্তে পাকিস্তানের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতেও প্রায় সম পরিমাণ ভারতীয় নাগরিক নিহত হয়েছেন।
এ তিন বছরে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফ-এর হাতে নিহত বাংলাদেশি নাগরিকের সংখ্যা এ পর্যন্ত একশ। চলতি ডিসেম্বর মাসে এ সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কাও রয়েছে।একই সময়ে পাকিস্তান ভারত সীমান্তে বিএসএফ-এর হাতে ৪৬ জন পাকিস্তানি নাগরিক নিহত হয়েছেন। নিহত পাকিস্তানি নগারিকদের বড় একটি অংশ সামরিক এবং আধা সামরিক বাহিনীর সদস্য। আর বাংলাদেশের নিহত নাগরিকরা সবাই নিরস্ত্র সাধারণ মানুষ।
পরিসংখ্যানের তথ্য উপাত্ত নিয়ে ভারতের মানবাধিকার সংগঠন বাংলার মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ (মাসুম)-এর প্রধান কিরীটি রায় বলেন,‘ আমাদের পরিসংখ্যান বলছে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফ-এর হাতে যত হত্যাকাণ্ড ঘটে পাকিস্তান-ভারত সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তার চেয়ে অনেক কম।শুধু তাই নয় ভারতীয় নাগরিকরাও বিএসএফ-এর হাতে নিহত হচ্ছেন। গত এক বছরে বাংলাদেশ সংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তে ২৫ জন ভারতীয় নাগরিক নিহত হয়েছেন।এরা বাঙালি। আর পুরো সীমান্তের হিসাব করলে এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে।’
তিনি বলেন,‘ বাংলাদেশ ভারতের বন্ধুরাষ্ট্র আর পাকিস্তান ভারতের শত্রু রাষ্ট্র। কিন্তু সীমান্ত হত্যার পরিসংখ্যান তা বলে না। বন্ধু রাষ্ট্রের নাগরিকদের কি এভাবে হত্যা করা যায়? আর বাংলাদেশি যেসব নাগরিককে হত্যা করা হয় তারা নিরস্ত্র সাধারণ মানুষ। তাদের গুলি করাই তো বেআইনি।’
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিচালক নূর খান বলেন,‘ এতদিন গরু চোরাচালানকে সীমান্ত হত্যার কারণ হিসেবে বলা হত। কিন্তু এখন তো গরু চোরাচালান বলতে গেলে শূন্যের কোঠায়। তারপরও সীমান্তে বিএসএফ-এর হাতে বাংলাদেশি নাগরিক হত্যা বাড়ছে। আসলে সীমান্ত হত্যার পেছনে আসল কারণ হল ভারতের মনোভাব। ভারত কাশ্মিরসহ পাকিস্তান সীমান্তে নিয়োজিত বিএসএফ সদস্যদের এখনও ঘুরিয়ে আবার বাংলাদেশ সীমান্তে নিয়োগ করে। তাদের অধিকাংশই বাংলা ভাষাভাষী নয়। তাদের মনোভাব যুদ্ধংদেহি। ফলে পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হচ্ছে না।’
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে বিএসএফ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) পাচারকারী ও অবৈধপথে সীমান্ত পার হওয়া নাগরিকদের ক্ষেত্রে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার না করার চুক্তি করে। আর ভারত সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকেও সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার কথা বলা হয় বার বার। কিন্তু সীমান্তে বিএসএফ প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার বন্ধ করেনি। পাল্টায়নি তাদের আচরণ।
যদিও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ(বিজিবি)-এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ গত রোববার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে সীমান্ত হত্যা কমেছে বলে দাবি করেন।
(1)