বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি (বেডস্) এর আয়োজনে কোরিয়া গ্রীন ফাউন্ডেশন (কেজিএফ) এর আর্থিক সহায়তায় খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলার বাণিশান্তা ইউনিয়নের পশ্চিম ঢাংমারী গ্রামে মাসব্যাপী ম্যানগ্রোভ বনায়ন কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে।
মাসব্যাপী ম্যানগ্রোভ বনায়ন কার্যক্রমে ২০হাজার ম্যানগ্রোভের চারা রোপন করা হবে। এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রথমে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়, যেখানে ম্যানগ্রোভের গুরুত্ব, ম্যানগ্রোভ রোপণ পদ্ধতি ও অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা বিষয়ে আলোচনা করা হয়। এই আলোচনা শেষে, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর স্বস্তস্ফূর্ত অংশগ্রহণে ১ হাজার ম্যানগ্রোভের চারা রোপণ করা হয় এবং তারা এই মাসের ভিতর বাকী ১৯হাজার ম্যানগ্রোভের চারা রোপণে ও দীর্ঘমেয়াদি সংরক্ষণে সংকল্পবদ্ধ হন। এই কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন ৫০ জন স্থানীয় জনগোষ্ঠী, বেডস্ এর প্রধান নির্বাহী জনাব মাকছুদুর রহমান; মোঃ সাহনেওয়াজ হোসেন, প্রকল্প ব্যবস্থাপক; এম. সাবরিন আহমেদ, ডকুমেন্টেশন এন্ড কমিউনিকেশন অফিসার; কপিল বিশ্বাস, পাবলিক রিলেশন অফিসার; মোঃ নাহিদ হাসান, রিসার্স অফিসার; রজত শুভ্র গাইন, ফিল্ড এ্যাডভাইজার এবং মাঠকর্মী হরোপ্রসাদ সরকার ও বিশ্বজিত গাইন।
সুন্দরবন উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জন্য সুন্দরবন একটি আশীর্বাদ স্বরূপ। সুন্দরবন নানা প্রলয়ঙ্কারী প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে উপকূলীয় জনগোষ্ঠীকে যেমন আগলে রাখে তেমনি তাদের জীবীকার উৎসও এই সুন্দরবন। ম্যানগ্রোভ তথা সুন্দরবনের এর গুরুত্ব অবর্ণনীয়। ম্যানগ্রোভ শুধু উপকূলীয় অধিকাংশ মানুষের জীবীকারই উৎস নয়; বরং প্রতিকূল আবহাওয়া বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঢাল হিসাবে উপকূলবাসীকে যুগ যুগ ধরে এটি রক্ষা করে আসছে। ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছাস বাদ দিলে বিগত কয়েক দশক ধরে সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকায় নদীভাঙনই হচ্ছে অন্যতম প্রধান সমস্যা। আবার নদীভাঙণ রোধে এই ম্যানগ্রোভের রয়েছে অপরিসীম গুরুত্ব। সর্বোপরি কার্বন শোষণ ও পরিবেশকে স্থিতিশীল রাখতে ম্যানগ্রোভ অদ্বিতীয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো আশির দশক থেকে বিশ্বব্যাপী ম্যানগ্রোভ হ্রাস পেতে থাকে এবং প্রতিবছর পৃথিবী থেকে প্রায় ২.১% ম্যানগ্রোভ হ্রাস পাচ্ছে। এর মূল কারণ হলো মানুষের অত্যাধিক মাত্রায় সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ, চিংড়ি চাষ, বাসস্থান তৈরি এবং নানাবিধ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি (বেডস্)-আয়োজিত এই বনায়ন কর্যক্রমের মূল মন্ত্র হলো, “শুধুমাত্র ম্যানগ্রোভ রোপণ করাই আমাদের কাজ নয়, বরং রোপিত ম্যানগ্রোভকে বাঁচিয়ে রাখা আমাদের কর্তব্য”।
(49)