আগামী তিন মাসের মধ্যে এসব ফোনে ব্যবহৃত সিমের নিবন্ধন কার্যক্রম চলবে। তবে মোবাইল ফোন অপারেটররা বলছেন জাতীয় পরিচয়পত্র সার্ভারে তাদের প্রবেশাধিকার এবং নিবন্ধনের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত না করলে নিবন্ধন কার্যক্রম ফলপ্রসূ হবে না।
সরকারের কর্মকর্তারা বলছেন মোবাইল ফোনে ব্যবহৃত অনেক সিমই ভুয়া তথ্য দিয়ে নিবন্ধন করা হয়েছে যা অবৈধ। আর এসব ফোন নানা সময়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটেই আগামী মঙ্গলবার থেকে সব সিমের নিবন্ধন নিশ্চিত করার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।
তিনি বলেন, “আগে যেগুলো নিবন্ধন করা হয়েছে সেগুলো ভেরিফাই করা হবে এবং তাতে কোন ভুল তথ্য থাকলে সেটি ঠিক করে নিবন্ধন করতে হবে। আর বাকিগুলো তো নিবন্ধন করতেই হবে। নিবন্ধন কার্যক্রম তিন মাস চলবে প্রাথমিক পর্যায়ে।”
তিনি আরও বলেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিবন্ধনে ব্যর্থ সিম বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং এর পর ওই ধরনের সিমের ব্যবহারের প্রমাণ পেলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহক ও অপারেটরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন তারা।
আর এ কারণে নিবন্ধনের সময় অপারেটরদের বলা হবে গ্রাহকের তথ্যের পাশাপাশি কোম্পানির সিম বিতরণকারী এজেন্ট ও খুচরা বিক্রেতাদেরও যাবতীয় তথ্যের একটি ডাটাবেইস তৈরি করতে হবে।
কিন্তু নতুন করে নিবন্ধন কার্যক্রম বা এসব পদক্ষেপের উদ্দেশ্য কী? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন অবৈধ নিবন্ধন ও অবৈধ সিম অনেক সমস্যার উৎস বলে মনে করছেন তারা।
“অবৈধ ভিওআইপি কমবে। আর এসব অনিবন্ধিত সিম বহু অপরাধের কারণ। জঙ্গি অর্থায়ন, এমনকি তদবির বাণিজ্য হয় এর মাধ্যমে। অনেক সময় ভিআইপি ব্যক্তির নাম্বার থেকে তদবির করা হয় অথচ তিনি তার কিছুই জানেননা। এগুলো বন্ধ হবে”, বিবিসিকে বলছিলেন তিনি।
যারা সঠিক তথ্য দিয়ে আগেই নিবন্ধন করেছেন তারা কেন আবার এ প্রক্রিয়ায় আসবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন জাতীয় স্বার্থে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় যাতে হয়রানির শিকার কেউ না হয় সেজন্য টেলিযোগাযোগ রেগুলেটরি কমিশন বা বিটিআরসি এবং অপারেটরদের সতর্ক থাকতে বলা হবে।
এর আগে ২০০৬ সালে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো মোবাইল ফোনের সিম নিবন্ধনের কার্যক্রম শুরু হলেও তখন তার সত্যতা যাচাইয়ের তেমন কোন প্রস্তুতি ছিলনা। পরে ২০১১ সালে সরকার প্রি-অ্যাকটিভ সিম বিক্রি বন্ধ করে দেয়।
চালু করা হয়েছিলো জরিমানার বিধানও। কিন্তু এর পরেও অসত্য তথ্য দিয়ে সিম কেনাবেচার অভিযোগে সমালোচনায় পড়তে হচ্ছে মোবাইল ফোন অপারেটরদের।
মোবাইল ফোন কোম্পানি গ্রামীণ ফোনের চিফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান বলছেন আগে জাতীয় পরিচয় পত্র বা নিবন্ধন ফর্মে দেওয়া তথ্য যাচাইয়ের কোন সুযোগই তাদের ছিলনা। তিনি বলেন এবারের উদ্যোগ সফল করতে হলে সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, “রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হওয়া জরুরি। এটি চূড়ান্ত হলে যে কিভাবে নিবন্ধন করবো না হলে জাতীয় পরিচয়পত্র ডাটাবেইসে প্রবেশাধিকার ছাড়া এটি অর্থহীন হবে।”
তিন মাসের মধ্যে এতো সিম নিবন্ধন সম্ভব হবে কি-না জানতে চাইলে মি. হাসান বলেন নিবন্ধন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হলে সেটি তারা বুঝতে পারবেন, তবে আপাতদৃষ্টিতে তিন মাসকে কম সময় বলেই মনে হচ্ছে তার কাছে।
প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলছেন অপারেটররা যাতে জাতীয় পরিচয়পত্র সার্ভারে প্রবেশাধিকার পায় এবং নিবন্ধন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করতে কালই তারা অপারেটর, পরিচয়পত্র কর্তৃপক্ষ ও টেলিযোগাযোগ রেগুলেটরি কমিশন বা বিটিআরসির সাথে বৈঠক করবেন।
বিটিআরসি বলছে সহজে নিবন্ধন, বিশেষ করে কাস্টমার কেয়ার সেন্টারে বা দোকানে না গিয়ে অনলাইনে নিবন্ধন করা যায় কি না সেটিও চিন্তা করছে তারা।-বিবিসি
(1)