

শুক্রবার দুপুরে তার সাত আইনজীবী দেখা করার অনুমতি চেয়ে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর দুই আইনজীবীকে কারাগারের সামনে সাক্ষাতের অনুমতির জন্য অপেক্ষা করেন। কিন্তু তাদের অনুমতি দেওয়া হয়নি।
সে সময় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবী এ্যাডভোকেট হুজ্জাতুল ইসলাম খান আলফেসানী উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, কারা কর্তৃপক্ষ আমাদের কোনো ধরনের সহযোগিতা করছে না। দুপুর থেকে এখন পর্যন্ত তিন-চারবার সাক্ষাতের জন্য আবেদনের চেষ্টা করা হলেও অনুমতি মেলেনি।
তিনি আরও জানান, রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি কারাগারে পাঠানোর পর জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের সঙ্গে তার আইনজীবীরা দেখা করতে পেরেছিলেন। তাই এবারও আমাদের দেখা করতে দেওয়া হবে বলে ধারণা করেছিলাম। কিন্তু কোন অনুমতি কারা কর্তৃপক্ষ দিচ্ছেন না।
এরপর শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে আকস্মিকভাবে সালাউদ্দিনের দুই ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী ও ফাইয়াজ কাদের চৌধুরী এবং দুই আইনজীবী এ্যাডভোকেট হুজ্জাতুল ইসলাম খান আলফেসানী ও এ্যাডভোকেট আকবর ইউসুফসহ সাতজন কারাগারে আসেন। তারা কারা কর্তৃপক্ষের কাছে সাক্ষাতের অনুমতির জন্য আবেদন করতে আসেন। কিন্তু আবেদন গ্রহণ করার জন্য কারা কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল কেউ কারাগারে না থাকায় অনুসন্ধান রুমে কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর দুই ছেলে বাকিদের সঙ্গে নিয়ে চলে যান।
এ সময় ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, ‘বৃহস্পতিবার আমরা বাবার সঙ্গে দেখা করেছিলাম। আপনারা (সাংবাদিকরা) যেটা জানতে চাচ্ছেন মার্সি পিটিশন করব কি-না, এ বিষয়ে বাবা আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের দেখা করতে দেওয়া হয়নি। বাবা যেহেতু আজ বড় একটি সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন, সেহেতু তিনি চেয়েছিলেন তার আইনজীবীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে।’
তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার দেখা করতে যাওয়ার সময় তিনি তার আইনজীবীদের সঙ্গে দেখা করার কথা আমাদের বলেন। আমরা বিষয়টি আইনজীবীদের জানাই। আইনজীবীদের জানানোর পর শুক্রবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাবার সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতির জন্য আবেদনের চেষ্টা করেন। কিন্তু তাদের সেই সুযোগ দেওয়া হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ পাঁচ বছর আদালতে আইনী প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছি। সব সিদ্ধান্ত বাবা একা নিতে পারেন না। বাবা চেয়েছিলেন এই বড় সিদ্ধান্তটা আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে। কিন্তু আপনারা জানেন, আমরা দেখা করার সুযোগ পেলাম না।’
কারাগার সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুনরায় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও মুজাহিদের কাছে মার্সি পিটিশনের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়। কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির তাদের দু’জনকে এক ঘণ্টা সময় দেন সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য। তারা পরিবার ও আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে জানান। কিন্তু কারাবিধি অনুযায়ী এখন আইনজীবীদের সঙ্গে দেখা করার কোনো সুযোগ নেই। দুপুর ১২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরও তারা কোনো উত্তর না দেওয়ায় সিনিয়র জেল সুপার ফিরে আসেন।
বড় ছেলে ফাইয়াজ কাদের চৌধুরী বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী ৩০ দিনে একবার বাবার সঙ্গে আমাদের দেখা করতে দেওয়া হয়। ওই রুটিন অনুযায়ী গতকাল (বৃহস্পতিবার) বাবার সঙ্গে দেখা করতে যাই। গতকালের সাক্ষাৎ বিশেষ কোনো সাক্ষাৎ ছিল না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাবার ইচ্ছা প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে আইনজীবীরা আজ সাক্ষাতের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু অনুমতি পাওয়া যায়নি। এখন যখন আমরা সাক্ষাতের অনুমতির জন্য আবেদন জমা দিতে এসেছি তখন কারাগার থেকে বলা হচ্ছে- আবেদন গ্রহণের জন্য কারা কর্তৃপক্ষের কেউ এখন কারাগারে নেই।’
জানা গেছে, শুক্রবার রাতে কারা অধিদফতরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সন্তানের বিয়ের অনুষ্ঠান পুলিশ কনভেনশন হলে অনুষ্ঠিত হয়। তাই কারা অধিদফতরের অন্যান্য কর্মকর্তার মত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কর্মকর্তারাও রাতে ওই অনুষ্ঠানে যান। বিয়ের অনুষ্ঠানের যোগদানের জন্য কারাগার থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বের হয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই সালাদ্দিন কাদের চৌধুরীর দুই ছেলে আইনজীবীদের নিয়ে আসেন। তাই তারা সাক্ষাতের আবেদন জমা দিতে পারেননি।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী, ছেলেমেয়ে ও ভাইবোনসহ ১৫ জন নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আসেন। সাক্ষাৎ শেষে বেলা দেড়টার দিকে ছয়টি গাড়িতে তড়িঘড়ি করে তারা চলে যান। গণমাধ্যমের সঙ্গে ওই দিন তারা কোনো কথা বলেননি।-শীর্ষ নিউজ
(5)