জেসমিন আক্তার প্রত্যাশা, খুবি প্রতিনিধি:
খুলনামহানগরীর গল্লামারি এলাকার বাসিন্দা মোঃ সাদিকুল ইসলাম । প্রায় তিন বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় পা হারান তিনি। তারপর থেকেই বদলে যায় তার জীবিকার পদ্ধতি। জীবনে নেমে আসে দুর্গতি । পা নেই বলে করতে পারে না কোন কাজ । তাই আয়ও নেই । এমনকি তীব্র শীতে গরম কাপড় নিবারণের সামর্থ্য নেই তার।
আর তাই বরাবরের মতো শীতবস্ত্র বিতরণের মাধ্যমে এবারো সাদিকুলদের পাশে এসে দাঁড়ান স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বাঁধন খুবি (খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়) ইউনিট । স্বেচ্ছায় রক্ত দানের পাশাপাশি বাঁধন বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়ন মূলক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে সব সময় মানুষের পাশে থাকে।
২০০৬ সাল থেকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয় বাধঁনের পথ চলা। শিক্ষার্থীদের গড়া স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন বাঁধন রক্তদানে মানুষদের উৎসাহিত করার পাশাপাশি সংগঠনে কাজ করছে অনেক শিক্ষার্থী । “ একের রক্ত অন্যের জীবন রক্তই হোক আত্মার বাঁধন “ এই স্লোগান এর মত সত্যিই যেন রক্তদান এর মাধ্যমে তারা আত্মার বাঁধন তৈরি করে আর তাইতো যখনই খবর পায় কোন ব্যক্তির রক্তের প্রয়োজন সেখানেই পৌঁছে যায় তারা।
বাধঁন শুধুমাত্র রক্ত দিয়েই মানুষের পাশে থাকেনা, বন্যার সময়ে বন্যাদূর্গতদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল তারা। প্রায় ১৫০ জন বন্যাকবলিত মানুষের মাঝে তারা বিনামূল্যে ঔষধ বিশুদ্ধ খাবার পানি , স্যালাইন ও সাধারণ চিকিৎসা প্রদান করেন । সার্বক্ষণিক তিনজন চিকিৎসক বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন।
এছাড়াও বাধঁনের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে তারা পথশিশুদের সাথে কেক কাটে এবং প্রায় ৩৫০ জন গৃহহীন মানুষদের কাছে খাবার পৌঁছে দেন ।
বাঁধনের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বাধঁন এসব কার্যক্রমের পাশাপাশি বিনামূল্যে মানুষদের রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করে থাকে । এর জন্য তারা খুলনার আশেপাশের গ্রাম গুলোতে যেয়ে থাকে এবং বিনামূল্যে সকলের রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করে ।
করোনাকালীন সময়ে কিভাবে তারা বাঁধনের কার্যক্রম করছে এ ব্যাপারে বাঁধনের প্রেসিডেন্ট নিলয় কুমার সরকার এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল । আপনি জানেন খুলনা ইউনিভার্সিটি ছোট একটা ক্যাম্পাস , আমাদের কাছে লোকাল ডোনারদের একটা লিস্ট ছিল , লিস্টে সুন্দরবন কলেজ , সিটি কলেজ তারপর যারা লোকাল আছে তাদের নিয়ে লিস্ট করা হয় । এ পাঁচ-ছয় মাস আমরা তাদের কাছ থেকেই ব্লাড সংগ্রহ করেছি । আমরা চেষ্টা করেছি ক্যাম্পাস খোলা থাকার সময় লোকাল ডোনারদের কাছ থেকে ব্লাড না নেওয়ার যাতে করে বন্ধের সময় তাদের কাছ থেকে ব্লাড নেওয়া যায় । কারণ তারা খুলনাতেই থাকে। প্রতিদিন আট থেকে দশ ব্যাগ ব্লাড গেছে এই বন্ধের ভিতরে ।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশে এমন একটা দিন আসবে যেখানে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ তার রক্তের গ্রুপ জানবে এবং স্বেচ্ছায় রক্তদানে এগিয়ে আসবে।
বাধঁনের একজন সদস্যের সাথে কথা বললে তিনি জানান, “ আমরা সব সময়ই চেষ্টা করি সকলের পাশে থাকার । অনেক সময় আমাদের দূরেও যেতে হয় রক্ত দিতে কিন্তু এইটাকে আমরা কখনোই বাধা মনে করি না । এমনও হয়েছে রক্ত দিতে যেয়ে দেখি রক্তে সেদিন লাগবে না , পরপর চার দিন রক্ত দেওয়ার জন্য গিয়েছি চতুর্থ দিন রক্ত লেগেছে । কাজটা হাসিমুখেই করেছি “ ।
বাঁধন এমন একটি সংগঠন যারা সব সময় চেষ্টা করেছে মানুষের পাশে থাকতে , মানুষকে সাহায্য করতে । রক্ত দিয়ে তৈরি করেছে মানুষের সাথে এক আত্মার বন্ধন আর তাইতো তাদের স্লোগান “একের রক্ত অন্যের জীবন রক্তই হোক আত্মার বাঁধন”।
(130)