আজ মহাষ্টমীর দিনে সকাল ৯টা ৪৮ মিনিটের মধ্যে দুর্গাদেবীর মহাষ্টমী বিহিত পূজা প্রশস্তা ও ব্রতোপবাস অনুষ্ঠিত হবে। ভক্তরা মায়ের চরণে দেবেন পুষ্পাঞ্জলী। মধ্যাহ্নে মহাপ্রসাদ বিতরণ এবং বিকালে হবে সন্ধি পূজা আরম্ভ। আগামীকাল বৃহস্পতিবার মহাসমারোহে অনুষ্ঠিত হবে মহানবমী পূজা। সারাদেশের ম-পগুলোতে পূজার্চনার পাশাপাশি অন্যান্য আয়োজনের সঙ্গে থাকছে আরতি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ভক্তিমূলক সংগীত, স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, দুস্থদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণসহ নানা আয়োজন।
এদিকে ব্যাপক আনন্দ, উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে গতকাল সোমবার সারাদেশের পূজাম-পগুলোতে মহাসপ্তমীবিহিত পূজা পালিত হয়েছে। নবপত্রিকা স্নান দিয়ে ভোরে পূজা শুরু হয়। দেবীকে ৯টি রূপে কল্পনা করে স্থাপন করা হয় নবপত্রিকা। একে একে চক্ষুদান ও প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর পরই শুরু হয় মহাসপ্তমী পূজা।
মহাসপ্তমীতে ষোড়শ উপাচারে অর্থাৎ ষোলোটি উপাদানে দেবীর পূজা করা হয়। সকালে ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হয়। দেবীকে আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, স্নানীয়, পুষ্পমাল্য, চন্দন, ধূপ ও দীপ দিয়ে পূজা করেন তার ভক্তরা। পূজা শেষে মায়ের চরণে পুষপাঞ্জলী দেয়া হয় পুষপাঞ্জলী। সপ্তমী পূজা উপলক্ষে সন্ধ্যায় বিভিন্ন পূজাম-পে ভক্তিমূলক সংগীত, রামায়ণ পালা, আরতিসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
আর হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে, সাধারণত ১ থেকে ১৬ বছরের অজাতপুষ্প সুলক্ষণা কুমারীকে পূজার উল্লেখ রয়েছে। ব্রাহ্মণ অবিবাহিত কন্যা অথবা অন্য গোত্রের অবিবাহিত কন্যাকেও পূজা করার বিধান রয়েছে। ঢাকার গোপীবাগের রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠের অধ্যক্ষ ধ্রুভিশানন্দ মহারাজ জানান, বুধবার মহাষ্টমীতে বেলা ১১টায় রামকৃষ্ণ মিশনে কুমারী পূজা পালিত হবে। এছাড়া মিশনের নিয়ন্ত্রণাধীন নারায়ণগঞ্জ ও দিনাজপুরসহ কয়েকটি মঠ এবং ঐতিহ্যবাহী পূজাম-পেও কুমারী পূজা হবে।
কুমারী পূজা কেন করা হয়- এ বিষয়ে শ্রীরামকৃষ্ণের কথামৃতে বলা হয়েছে, সব স্ত্রীলোক ভগবতীর এক স্বরূপ। শুদ্ধাত্মা কুমারীতে ভগবতীর বেশি প্রকাশ। সকল নারীতে মাতৃরূপ উপলব্ধি করাই কুমারী পূজার প্রধান লক্ষ্য। বয়সভেদে কুমারীর নাম হয় ভিন্ন। শাস্ত্র মতে, এক বছর বয়সে তাকে সন্ধ্যা, দুইয়ে সরস্বতী, তিনে ত্রিধামূর্তি, চারে কালিকা, পাঁচে সুভগা, ছয়ে উমা, সাতে মালিনী, আটে কুব্জিকা, নয়ে অপরাজিতা, দশে কালসন্ধর্ভা, এগারোয় রুদ্রাণী, বারোয় ভৈরবী, তেরোয় মহালক্ষ্মী, চৌদ্দয় পীঠনায়িকা, পনেরোয় ক্ষেত্রজ্ঞা এবং ষোলো বছরে অম্বিকা বলা হয়ে থাকে।
কুমারী পূজার দিন নির্বাচিত কুমারীকে স্নান করিয়ে নতুন কাপড় পরানো হয়। হাতে দেয়া হয় ফুল, কপালে সিঁদুরের তিলক ও পায়ে আলতা। সঠিক সময়ে কুমারীকে সুসজ্জিত আসনে বসিয়ে ষোড়শোপচারে পূজা করা হয়। চারদিক মুখরিত হয় শঙ্খ, ঢাকের আওয়াজ, উলুধ্বনি আর মায়ের স্তুতিতে। অপরদিকে সনাতন পঞ্জিকা মতে এবার ২২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার একই দিনে মহানবমী ও বিজয়া দশমী পড়ায় ওই দিন দর্পণ বিসর্জন হবে। তবে সারাদেশে ২৩ অক্টোবর শুক্রবারই বিজয়া শোভাযাত্রাসহকারে প্রতিমা বিসর্জনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর মহালয়ার দিন থেকেই মূলত শুরু হয়েছে দেবী দুর্গার আগমনধ্বনি।
বিশুদ্ধ পঞ্জিকামতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার ঘোটকে (ঘোড়া) চড়ে মর্তলোকে (পৃথিবী) আসবেন। আর দেবী স্বর্গালোকে বিদায় নেবেন দোলায় (পালকি) চড়ে। এ বছর সারাদেশের ৬৪ জেলায় ২৯ হাজার ৭৪টি মন্ডপে পূজার আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্য রাজধানী ঢাকায় ২২৩টি মন্ডপে পূজার আয়োজন হয়েছে। উৎসব সফলভাবে সম্পন্ন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। প্রতিটি মন্ডপে থাকবে পুলিশ ও আনসার সদস্য। টহলে থাকবে র্যাব।
(14)