টানা তিন মাস বন্ধ থাকার পর আগামীকাল শুক্রবার দেশি-বিদেশি পর্যটকসহ সব ধরনের বনজীবীদের জন্য আবারও খুলে দেওয়া হচ্ছে সুন্দরবন। তবে পানির বোতল, চিপসের প্যাকেটের মতো সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বাঘ ও হরিণসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী ও ২৯১ প্রজাতির মৎস্য সম্পদের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তিন মাস ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ খ্যান সুন্দরবনে পর্যটকসহ সব ধরনের বনজীবীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল বন বিভাগ। নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে বন্যপ্রাণী ও মৎস্য সম্পদসহ জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ হয়েছে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ।
এদিকে নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার আগে পর্যটক, বনজীবীসহ সবার মধ্যে উচ্ছ্বাস সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে নিষেধাজ্ঞার বন বিভাগের কাছ থেকে পাস-পারমিট নিয়ে সুন্দনবনে প্রবেশে সব প্রস্তুতি শেষ করেছেন ট্যুর অপারেটরসহ সব শ্রেণির বনজীবীরা।
জীববেচিত্র্যে ভরপুর সুন্দরবনে বর্তমানে ১১৪টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার, দুই লাখ হরিণসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী, সুন্দরীসহ ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা, ১৬৫ প্রজাতির শৈবাল, ১৩ প্রজাতির অর্কিড ও ৩০০ প্রজাতির পাখি রয়েছে।
এই ম্যানগ্রোভ সুন্দনবনের তিনটি এলাকা ১৯৯৭ সালের ৬ ডিসেম্বর ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড ঘোষণা করে। সুন্দরবনের মধ্যে ১৮৭৪ বর্গ কিলোমিটার জলভাগে কুমির, ৬ প্রজাতির ডলফিনসহ রয়েছে ২৯১ প্রজাতির মাছ।
এই বনে বাংলাদেশ অংশে অক্সিজেনের অফুরন্ত ভাণ্ডার সুন্দনবনের আয়তন প্রায় ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটর।এই বিশাল অংশ বিশ্বের বৃহৎ জলাভূমি রামসার এলাকা হিসেবে স্বীকৃত।
সুন্দরবন লাইভ ট্যুর অপারেটরের মালিক গোলাম রহমান বলেন, শুক্রবার থেকে আবারও সুন্দরবন খুলে নেওয়া খবরটি আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে আনন্দের।
তিনি আরও বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সুন্দরবনে পানির বোতল, চিপসের প্যাকেটের মতো সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহারে বন বিভাগের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি পর্যটকদের অবহিত করেছি।
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, কোলাহল না থাকায় সুন্দরবনে বন্যপ্রাণী ও মৎস্য প্রজাতি অবাধ বিচরণের পাশাপাশি নির্বিঘ্নে প্রজনন করতে পেরেছে। নিষেধাজ্ঞার সময়ে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য প্রাণ ফিরে পেয়েছে। ফলে ম্যাগগ্রোভ এই বনের বন্যপ্রাণী ও মৎস্য সম্পদসহ জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ হয়েছে।
বাংলাদেশ টুরিস্ট পুলিশ খুলনা রিজিওনের পরিদর্শক তারক বিশ্বাস বলেন, সরকার পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য
সুন্দরবনকে উন্মুক্ত করায় দেশি-বিদেশি দর্শনার্থী এবং বনজীবীদের মধ্যে উৎসাহ উদ্দিপনা সৃষ্টি হয়েছে। আমরা আশা করছি, পদ্মা সেতুর জন্য পর্যটক আগের তুলনায় কয়েক গুণ বাড়বে। সে জন্য সুন্দরবনে দর্শনার্থীদের ভ্রমণের জন্য তিন স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে বন বিভাগ ও বাংলাদেশ টুরিস্ট পুলিশ। এছাড়া আমরা খুব শিঘ্রই টুরিষ্ট ব্যবসার সাথে জড়িতদের সাথে বসে সরকারের আদেশ, নিষেধ সম্পর্কে জানানো হবে। আমরা সবসময় টুরিষ্টদের নিরাপদে ভ্রমন নিশ্চিত করতে কাজ করে থাকি।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবন (টোয়াস) এর সাধারণ সম্পাদক এম নাজমুল আযম ডেভিড জানান, সুন্দরবন ভ্রমনের প্রধান মৌসুম হলে নভেম্বর-মার্চ মাস পর্যন্ত। তবে এসময়ও কিছু কিছু ট্যুর হয়।আমাদের ৫০টার মতো লঞ্চ রয়েছে। এরমধ্যে ৪-৫টা লঞ্চ ট্যুরিষ্ট বুকিং নিয়েছে। বন বিভাগ থেকে বেশ কয়েকটি শর্ত দিয়েছে। আমরা সেইসব শর্ত মেনে নিয়েছি।
পশ্চিম সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন জানান, আমরা টুরিষ্ট অপারেটরদেরকে জানিয়ে দিয়েছি, তারা যেন তাদের ট্রলার বা লঞ্চে পর্যটক ওঠার পরই আমাদের নিদের্শনা গুলি জানিয়ে দেয়। একটি লঞ্চে সর্বোচ্চ ৭৫ জনের বেশি পর্যটক পরিবহন করা যাবে না। সুন্দরবনের অভ্যন্তরে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক (ওয়ান টাইম পন্য) নিষিদ্ধ থাকবে শতভাব। এছাড়া জেলেদেরকে মাছ ধরতে বেঁধে দেয়া হবে নির্দিষ্ট এলাকা বা খাল। এ শর্ত অমান্যকারিদের বিরুদ্ধে বন বিভাগ থাকবে কঠোর। এ বিষয়ে বনের অভ্যন্তরে আমাদের মনিটরিং থাকবে সক্রিয়। সর্বপরি সরকারের বিধিনিষেধ মেনেই সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য দর্শনার্থীদেরকে আমরা আহবান
জানাই।
(0)