আসাদুজ্জামান সরদার, সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরা সদরের কুশখালী এলাকার অন্ধ বশির আহমেদ বাঁশের বাঁশির সুরে মাতোয়ারা সবাই।
কিন্তু তিনি এই বাঁশি বাঁজান শখের বসে নয়। এই বাঁশি বাঁজিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। শ্রোতারা খুশি হয়ে যা দেয় তাতেই চলে তার সংসার। পথে পথে তার বাঁশিতে বাজে ভক্তিমূলক, পল্লীগীতি, আধুনিক গানের সুর। জন্মান্ধ বশির আহমেদের বাড়ি
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কুশাখালী গ্রামে। তার পিতার নাম মরহুম আফছার আলী গাজি। বশির আহমেদের বয়স ৩৭ বছর। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি।
বশির আহমেদ বলেন, ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে জন্ম থেকে তিনি অন্ধ। শৈশব ও কিশোর কেটেছে ঘরে বসে। যৌবনে আর ঘরে থাকতে পারেননি। গরীব ঘরের সন্তান তাই বেরিয়ে পড়তে হয়েছে জীবিকার তাগিদে। কিন্তু কী করবেন তিনি একজন অন্ধ হয়ে? তাই নিজ উদ্যোগে রপ্ত করে নেন বাঁশি বাজানো কৌশল। ভিক্ষা বৃত্তিতে না গিয়ে বাঁশিকে পুঁজি করে বিভিন্ন হাটবাজারে বাঁশি বাজিয়ে মানুষের মন জয় করেন। যা উপার্জন হয় তা দিয়ে গরিবনা মতে চলে তাদের সংসার।
বশির আহমেদ বলেন, তার বাঁশির সুর শুনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ডাক পড়তো, সেখান থেকেও কিছু আর্থিক সহায়তা পাওয়া যেত। কিন্তু মহামারি করোনার কারণে থমকে গেছে তার জীবন। থমকে গেছে সেই সুর। বাঁশি তো আগের মতো বাজে না, তাই সংসারও যেন ঠিকমতো চলে না। তার সংসারে দুই কন্যা ও এক পুত্র সন্তান রয়েছে। বাবাও চলে গেলেন না ফেরার দেশে। উপার্জনের পথ বন্ধ। কখনো আধাপেটা কখনো না খেয়ে চলছে এই গরীবের সংসার। অত্যন্ত দুঃখভারাক্রান্ত মন নিয়ে কথাগুলো বলেন বশির আহমেদ।
বশির আহমেদ বলেন, তিনি ভক্তিমূলক, পল্লীগীতি ও আধুনিক গানসহ বিভিন্ন গানের সুর তুলতে পারেন তার বাঁশিতে। শোনালেন কয়েকটি গানের সুর। নবী মোর পরশমনি নবী মোর সোনার খনি গানের সুর দিয়েই শুরু করলেন। পরপর আরও কয়েকটি গানের সুর লহরী উঠলো তার বাঁশিতে। আমার সোনার ময়নার পাখি, ও কী গাড়িয়াল ভাই, তোমার আকাশ দুটি চোখে আমি হয়ে গেছি তারা…এরকম অনেক শত গানের সতত সুরের মূর্ছনায় মোহনীয় আবেশ জড়িয়ে আছে তার বাঁশের বাঁশিতে।
বশিরের স্ত্রী হাসিনা বেগম বলেন, বড় মেয়ের বয়স ১১ বছর। সে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে। ছোট মেয়ের বয়স ৭ বছর। সে শিশু শ্রেণিতে পড়ছে, ছেলেটির বয়স সাত মাস।
ছেলে, মেয়ে ও স্বামী স্ত্রী মিলে পাঁচ জনের সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে জন্মান্ধ বংশীবাদক বশির আহমেদ।
এমতাবস্থায় সমাজের বিত্তবানসহ জেলা প্রশাসনকে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন অসহায় পরিবারটি।
(5)