আসাদুজ্জামান সরদার, সাতক্ষীরা: ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী ৬৩ জেলার মধ্যে সাতক্ষীরার পাঁচটি স্থানে জেএমবি’র বোমা হামলার ঘটনায় ৫টি মামলার প্রত্যেকটিতে ৮ জনকে সর্বোচ্চ ১৩ বছর, ২ জনকে ৬ বছর এবং আপর ২ জনকে ৩ বছর করে কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। এছাড়া সাজাপ্রাপ্ত সকল আসামীকে ১ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং জরিমানা অনাদায়ে আরও ১ মাসের সশ্রম কারাদন্ডাদেশ দেয়া হয়েছে। এসময় অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় ২ জন আসামীকে বে-কসুর খালাস দেয়া হয়।
সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মোঃ শরিফুল ইসলাম বুধবার জনাকীর্ণ আদালতে ১১ আসামীর উপস্থিতিতে এই রায় ঘোষনা করেন। রায় ঘোষনার সময় মামলার ৩ জন আসামী পলাতক ছিলেন।
সাজাপ্রাপ্ত অসামিরা হলেন, কলারোয়ার পুটনী গ্রামের আলী আকবরের ছেলে নাইম ওরফে আবদুন নাইম, সাতক্ষীরা সদরের পাথরঘাটা গ্রামের মৃতঃ আব্দুল জলিলের ছেলে ফকরউদ্দিন রাজী, শহরের ইটাগাছা মধ্যপাড়ার মনির উদ্দীন সরদারের ছেলে মোঃ মনোয়ার হোসেন ওরফে উজ্জল, শহরের ইটাগাছার মৃত: কেরামত আলীর ছেলে মোঃ মনিরুজ্জামান ওরফে মুন্না, সদরের কাসেমপুরের মৃতঃ ওমর আলীর ছেলে গিয়াসউদ্দিন সরদার, জামালপুর জেলার চরশী খলিফাপাড়ার রফিকুল ইসলামের ছেলে বেলাল হোসেন ওরফে আব্দুল্যাহ, একই এলাকার মজিবর রহমানের ছেলে মোঃ ইসমাইল ওরফে মোঃ হাবিবুর রহমান, মোঃ মাহবুবুর রহমান ওরফে লিটন ওরফে পলাশ ওরফে সানা, আশাশুনির কুল্যা গ্রামের মৃতঃ আব্বাস আলীর ছেলে নূর আলী মেম্বার, সদরের খড়িবিলা গ্রামের মৃত: ফজর আলীর ছেলে মোঃ মোন্তাজ ওরফে মমতাজ ওরফে মোন্তাজ আলী, একই গ্রামের আব্দুল মাজেদ সরদারের ছেলে মোঃ আসাদুল, শহরের ইটাগাছা পশ্চিম পাড়ার ওমর আলী সরদারের ছেলে মোঃ আনিসুর রহমান খোকন। এদের মধ্যে পলাতক রয়েছেন, নাইম ওরফে আবদুন নাইম, ফকরউদ্দিন রাজী ও মোঃ মনোয়ার হোসেন ওরফে উজ্জল। খালাস প্রাপ্ত আসামীরা হলেন, মোঃ সাইফ ওরফে আসাদুজ্জামান ওরফে হাজারী ওরফে সাইদ ও আবুল খায়ের।
সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. আব্দল লতিফ জানান, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট শহরের শহীদ রাজ্জাক পার্ক, জেলা জজ আদালত চত্বর, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল চত্বর, বাস টার্মিনাল ও খুলনা মোড়সহ পাঁচটি স্থানে একযোগে বোমা হামলা ও নিষিদ্ধ লিফলেট ছড়ানোর ঘটনা ঘটে। ঘটনার দিনই সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বোমা হামলাকারী শহরতলীর বাঁকালের দলিলউদ্দিন দফাদারের ছেলে নাসিররুদ্দিন দফাদার প্রত্যক্ষদর্শী বাঁকাল ইসলামপুর চরের রওশানের দেয়া বিবরণ মতে ধরা পড়ে। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী সাতক্ষীরার রসুলপুরে জেএমবির ঘাটি চিহ্নিত করা হয়। এই সূত্র ধরে ভারতীয় নাগরিক গিয়াসউদ্দিনসহ মোট ১৩জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদেরকে ঢাকায় জেআইসিতে (জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঠানো হয়। সেখানে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেওয়া ছাড়াও জেএমবির বহু গোপন তথ্য জানায় তারা। পরে তাদের ফিরিয়ে আনা হয় সাতক্ষীরায়। ২০০৬ সালের ১৩ মার্চ সিআইডি ৫ টি মামলায় ১৫ আসামির বিরুদ্ধে চার্জশীট দেয়। পরবর্তীতে নাসিরউদ্দীন দফাদার নামে এক আসামীর মৃত্যু হয়। মামলাগুলি দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষে খুলনার দ্রুত বিচার আদালতে পাঠানো হয়। সেখানে যথা সময়ে নিষ্পত্তি না হওয়ায় ২০০৭ এর ২৫ জুন মামলাগুলি খুলনা থেকে ফেরত আসে সাতক্ষীরার আদালতে। ২০০৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ১ম আদালতে মামলা গুলির বিচার কাজ শুরু হয়।
এসব মামলায় অভিযোগ পত্রের ২৮ জন সাক্ষীর মধ্যে বাদী সহ ১৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহন করেন আদালত।
অপরদিকে সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়েরকৃত এস,টিসি ১২০/২০০৮ মামলাটিরও ২০০৮ সালে বিচার শুরু হয়। আসামিদের মধ্যে শায়খ আব্দুর রহমান, বাংলা ভাই ও আতাউর রহমান সানির মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়ায় তাদেরকে এসব মামলার আসামির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া রায়ে উক্ত মামলার ২৫ আসামীর সকলকে অব্যহতি দেয়া হয়।
উপরোল্লিখিত ৫টি মামলার আসামী পক্ষের আইনজীবী আ্যাড, আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, তারা ন্যায় বিচার পাননি। এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপীল করবেন।
(3)