সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: সাতক্ষীরায় মেয়েদের খেলার উপযোগী একটি মাঠ দরকার। যাতে মেয়েরা আরও বেশি আগ্রহ হয় ফুটবলের প্রতি। এখন মেয়েরা ফুটবলকে পেশা হিসাবে বেছে নিচ্ছে। ফুটবলে ধনী পরিবার থেকে কেউ আসে না আসে আমাদের মতো দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে। সুতরাং তাদের পক্ষে সম্ভব নয় এটার আনুসংঙ্গীক জিনিসপত্র ক্রয় করার। সেজন্য পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন। সেটা পেলে নারী ফুটবলে আরও বেশি আগ্রহ হবে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের পক্ষে সংবর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠানে সাফজয়ী নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশীপ দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন এসব কথা বলেন।
সাফ বিজয়ী নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক ও গোলমেশিন খ্যাত সাবিনা খাতুন ও তার পরিবারের সদস্যদেরকে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে এ সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সংবর্ধনায় সাবিনা খাতুনের পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় কোচ প্রয়াত আকবার আলীর স্ত্রী উপস্থিত ছিলেন।
সাফ জয়ের পর নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন তার নিজ জেলা সাতক্ষীরায় এসেছেন শুক্রবার ভোর রাতে। ওই দিন বেলা এগারটায় সার্কিট হাউজ মোড় থেকে উষ্ণ সংবর্ধনা দেয় বিভিন্ন সংগঠন। শনিবার দুপুরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
সংবর্ধনা পেয়ে খুশি এই কৃতি ফুটবলার। তিনি জেলা প্রশাসনের কাছে মেয়েদের খেলার উপযোগী একটি মাঠ দাবি করেছেন।
সাবিনা খাতুনকে সংবর্ধনা দিতে পেরে আনন্দিত জেলা প্রশাসন। সাতক্ষীরায় নারী খেলোয়াড়দের এগিয়ে নিতে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির। তিনি সাবিনা খাতুনকে ১লাখ টাকা অনুদান দিয়েছেন। এছাড়া সংবর্ধনায় উপস্থিত সাতক্ষীরা সদর আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি সাবিনা খাতুনকে ৩ লাখ টাকার সৌজন্য উপহারের ঘোষণা দেন।
সংবর্ধনার জবাবে সাফজয়ী নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন বলেন, সাতক্ষীরাসহ বাংলাদেশের মানুষের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আমি মুগ্ধ। আমার বেড়ে উঠা এই সাতক্ষীরার মাটিতেই। এ মাটিতেই আমার শৈশব মিশে আছে। আমি যখন ফুটবল খেলা শুরু করি, তখন আমার স্বপ্ন ছিল সাউথ এশিয়ান কাপ বাংলাদেশকে উপহার দেবো। আমি সেটা দিতে পেরেছি। এটা আমার সার্থকতা। আমার পরিশ্রমের সার্থকতা। আমার শিক্ষক আকবর স্যার আজ নেই। উনার কথা অবশ্যই স্মরণ করতে হয়। আমি তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। আমার সাবিনা হয়ে ওঠার পেছনে যার অবদান সবচেয়ে বেশি, তিনি হলেন আমার আকবর স্যার। সাথে সাথে আমাকে যারা সাপোর্ট দিয়েছে তাদের সবার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা।
ফুটবল খেলাটা মেয়েদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশে বড় লোকের ঘরের মেয়েরা ফুটবল খেলে না। গরিব নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়েরা ফুটবল খেলে। কিন্তু খেলার সামগ্রী কেনার সামর্থ্য তাদের থাকে না। খেলায় ধরনের মানুষের অংশগ্রহণ একান্ত জরুরী। সাতক্ষীরায় ফুটবল একাডেমি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সাতক্ষীরায় মেয়েদের জন্য মাঠের সংকট। জেলায় একটি স্টেডিয়াম আছে। কিন্তু সেখানেও সব সময় খেলার সুযোগ থাকে না। সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ মাঠ ও পিটিআই মাঠ মেয়েদের খেলার জন্য উপযোগী নয়। এজন্য সাতক্ষীরায় মেয়েদের খেলার উপযোগী নির্দিষ্ট মাঠ প্রয়োজন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আকবর স্যার যখন আমাদের প্রাকটিস করাতেন তখন একশ্রেণির মানুষ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতো। তখন আমার বয়স ১২-১৩ বছর। সেই প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে তিনি আমাদের গড়ে তুলেছেন।
সাতক্ষীরার অনুন্নত রাস্তাঘাট ও জলাবদ্ধতা বড় সমস্যা। এ সমস্যা সমাধান করা জরুরি। এজন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
এসময় ক্যাপ্টেন সাবিনা খাতুনের মা মমতাজ বেগম সংবর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠানে সাবিনার জন্য সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন।
জ্যোতি ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সহ-সংগঠক ও প্রয়াত কোচ আকবার আলীর স্ত্রী রেহেনা আক্তার জানান, আমার স্বামী বেঁচে থাকলে কী যে খুশি হতেন। সাবিনা ও মাসুরারা আমার স্বামীর মুখ উজ্জল করেছে।
সাবিনা খাতুনকে সংবর্ধনা দিতে পেরে আনন্দিত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, সাতক্ষীরায় নারী খেলোয়াড়দের এগিয়ে নিতে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছি। এছাড়া খুব দ্রুত একটি একাডেমি চালু করবো। যেখানে ছেলে মেয়ে উভয়ই খেলতে পারবেজেলা প্রশাসক সাবিনা খাতুনকে ফুলেল শুভেচছা, সম্মাননা ক্রেষ্ট ও নগদ ১লাখ টাকা অনুদান দিয়েছে এবং তার মাকেও সম্মানিত করেছেন।
সংবর্ধনায় উপস্থিত সাতক্ষীরা-০২ আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি সাবিনা খাতুনকে ৩ লাখ টাকা আর্থিক সৌজন্য উপহার দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তাছাড়া আরও সমস্যা গুলো দেখভাল করবেন বলে আশ্বাস প্রদান করেন।
সংবর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সজীব খান, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি মো. আশরাফুজ্জামান আশু, সাধারণ সম্পাদক ভারপ্রাপ্ত মাহমুদ হাসান মুক্তি, সাবেক ফিফা রেফারি তৌয়েব হাসান শামসুজ্জামান বাবু, জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ফারহা দিবা খান সাথী, জেলা ফুটবল এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ নাসিরুল হক, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আরিফ হাসান প্রিন্স, প্রেসক্লাবে সভাপতি মমতাজ আহমেদ বাপ্পী প্রমূখ।
(1)