গত ছয় বছরে বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ডের (বিসিসিটিএফ) ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ তহবিল উত্তোলিত হলেও প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৩৬ শতাংশ।
চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অনুষ্ঠেয় জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন কপ-২১ উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি’র অবস্থানপত্র উপস্থাপন করেন সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার মু. জাকির হোসেন খান। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ও উপ-নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের।
সংবাদ সম্মেলনে জলবায়ু ফান্ডের বরাদ্দ আশংকাজনক হারে কমার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, ২০১০ সালে বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড (বিসিসিটিএফ) এবং শিল্পোন্নত দেশসমূহের অর্থে বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ রেজিলিয়েন্স ফান্ড (বিসিসিআরএফ) গঠিত হলেও দু’টো তহবিলেই বরাদ্দ ক্রমেই আশংকাজনক হারে কমায় অভিযোজনের লক্ষে অর্থ সরবরাহে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।
শুধু তাই নয় গত ৬ বছরে বিসিসিটিএফ হতে অনুমোদিত ২৩৬টি সরকারি প্রকল্পের মধ্যে মাত্র ৮৪টির কার্যক্রম সমাপ্ত হয়েছে। অর্থাৎ বাস্তবায়নের হার মাত্র ৩৬ শতাংশ। প্রকল্পগুলো মধ্যে ৮৫টি প্রকল্প ২০০৯ সালের ৩০ জুন শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এসব প্রকল্পের মাত্র ২০ শতাংশ কাজ বাস্তবায়িত হয়েছে। অথচ এ পর্যন্ত তহবিল উত্তোলিত হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ।
অন্যদিকে বিসিসিআরএফ এ বরাদ্দকৃত প্রায় ৬০ মিলিয়ন ডলার সরকার ব্যবহার করতে পারছে না বলেও সংবাদ সম্মেলন থেকে বলা হয়। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় স্বচ্ছতা, আর্থিক, পরিবেশগত ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক মানদন্ড নিশ্চিত না করায় সবুজ জলবায়ু তহবিল (জিসিএফ) হতে সরাসরি তহবিল সংগ্রহ করতে সক্ষম হচ্ছে না।
জিসিএফ ছাড়ের চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, শিল্পোন্নত ৩৪টি দেশ এই তহবিলে ১০ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার প্রদানের ঘোষণা দিলেও ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিশ্রুত তহবিলের ৫০ শতাংশ প্রদান করেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন প্রকল্পের বিপরীতে তহবিল বরাদ্দ করা হয়নি।
এতে আরো বলা হয়, ২০১৪ সালে জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির (ইউনেপ) প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী অভিযোজনের জন্য ২০২৫ সাল নাগাদ প্রতি বছরে কমপক্ষে ১৫০ বিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন। কিন্তু বাস্তবে শিল্পোন্নত দেশগুলো ২০১৫ এর সেপ্টেম্বর পর্যেন্ত প্রায় ৩৫ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুত জলবায়ু তহবিলের বিপরীতে এ পর্যন্ত মাত্র ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার ছাড় করেছে।
তাই আসন্ন কপ-২১ সম্মেলনে ব্যাপকভিত্তিক কার্বন হ্রাসের চুক্তি সম্পাদিত না হলে জলবায়ু অভিযোজনের জন্য শিল্পোন্নত দেশ কর্তৃক প্রতিশ্রুত প্রয়োজনীয় জলবায়ু তহবিলের ঘাটতির পরিমাণ আরো বেড়ে যাবে।
‘চ্যাম্পিয়ন্স অব দা আর্থ’পুরস্কার পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এই পুরস্কার অর্জনের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশ সুরক্ষায় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশসহ ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রগুলো যে ঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছে তা মোকাবেলা এবং বিশ্বের কোটি কোটি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের স্বার্থ রক্ষায় বাংলাদেশকেই নেতৃত্ব দিতে হবে।
তাই প্যারিসে অনুষ্ঠেয় কপ-২১ এ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দক্ষতার সঙ্গে উন্নত রাষ্ট্রগুলোর সামনে এ সংক্রান্ত দাবি বলিষ্ঠভাবে তুলে ধরতে হবে।”
তিনি বলেন, উন্নত দেশের মধ্যে একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা গছে যা তারা উন্নয়নে সহযোগী কোন প্রকল্পে ঋণ দিয়ে তা জলবায়ু ফান্ড হিসেবে চালিয়ে দিতে চায়। তাই টিআইবি মনে করে জলবায়ু ক্ষতিপূরণের অর্থ ঋণ হিসেবে নয় অনুদান হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে দিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইব’র উত্থাপিত অন্যান্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- প্রতিশ্রুত জলবায়ু তহবিল প্রদানের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা প্যারিস চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা, জিসিএফ ও অন্যান্য উৎস হতে জলবায়ু তহবিল প্রদানে শিল্পোন্নত ও উদীয়মান অর্থনীতির দেশসমূহের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ প্যারিস চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা, ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী বিশেষ করে নারী, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এবং আদিবাসীদের ব্যাপক ও কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং নাগরিক সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণের বিষয়টি প্যারিস চুক্তিতে সুস্পষ্টভাবে অন্তর্ভুক্ত করা।-রাইজিংবিডি
(3)