মোঃ আব্দুল আজিজ, পাইকগাছা, খুলনা: উপকূলীয় খুলনার পাইকগাছায় অজ্ঞাত রোগে মরে সাবাড় হয়ে যাচ্ছে রেইন ট্রি গাছ। স্থানীয় লোকজন এটা শিশু বা শিরিশ কেউ কেউ আবার চটকা গাছ বলে থাকে।
গত কয়েক বছরের ব্যবধানে অত্র উপজেলার বিভিন্ন সড়ক ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের দেড় হাজারেরও বেশি রেইন ট্রি মরে গেছে। এতে একদিকে যেমন আর্থিকভাবে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে, অপরদিকে হুমকির মুখে পড়েছে প্রকৃতি ও পরিবেশ।
কি কারনে মারা যাচ্ছে স্থানীয় বন বিভাগ সেটি এখনো সনাক্ত করতে পারেনি, পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধে কার্যকর কোন ব্যবস্থাও নেয়া হয়নি। এর ফলে ভবিষ্যতে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন পরিবেশ সংক্রান্ত সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
উল্লেখ্য উপকূলীয় এ অঞ্চলে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা রয়েছে, এর মধ্যে দ্রুত বর্ধনশীল গাছ হচ্ছে রেইন ট্রি , এটি খুব দ্রুত বেড়ে ওঠে, কয়েক বছরের মধ্যে বড় গাছে পরিণত হয়, মানুষ দ্রুত এ ডালপালাকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতে পারে এবং প্রয়োজনে গৃহস্থলী এবং আসবাবপত্র তৈরি করাসহ বিক্রি করে প্রয়োজনীয় আর্থিক সুবিধা পেয়ে থাকে। এজন্য উপকূলীয় অঞ্চলে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে জনপ্রিয় গাছের তালিকায় স্থান করে নেয় রেইন ট্রি ।
সরকারিভাবে বিভিন্ন সড়কের পাশে লাগানো হয় এ গাছ। সড়কের পাশাপাশি সরকারি প্রতিষ্ঠানের জায়গায় লাগানো হয় রেইন ট্রি। এছাড়া সাধারণ মানুষও তাদের নিজেদের জায়গায় প্রচুর পরিমাণে রেইন ট্রি লাগাই। জ্বালানি এবং আরবাবপত্র তৈরির জন্য এলাকায় প্রচুর চাহিদা রয়েছে এর। এলাকার চাহিদা পূরণের পাশাপাশি এ গাছ সরবরাহ করা হয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। অতি জনপ্রিয় এই গাছটি অত্র অঞ্চলে বিলুপ্তি হওয়ার উপক্রম হয়েছে। অজ্ঞাত রোগে মরে সাবাড় হয়ে যাচ্ছে রেইন ট্রি ।
বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী ২০১৬ সালের দিকে অত্র অঞ্চলে এ রোগ দেখা দেয়। বর্তমানে ব্যাপক হারে মরে যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ এ গাছটি। উপজেলা প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান খান জানান উপজেলার পাইকগাছা বেতবুনিয়া সড়ক, বোয়ালিয়া বাঁকা, কাটাখালী শালিখা, চাঁদখালী, গোলাবাড়ি সোনাতনকাটী, হাউলি কাজিমুছা, কোর্ট হাসপাতাল সড়ক সহ বিভিন্ন সড়কে প্রায় এক হাজার গাছ মারা গেছে। যার আনুমানিক মূল্য কোটি টাকার বেশি। বন বিভাগের উদাসীনতার কারণে একটি প্রজাতির গাছ উপকূলীয় অঞ্চল থেকে বিলুপ্তি হতে চলেছে। রোগ সনাক্ত ও প্রতিকারে উদ্যোগ নিতে হবে।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার বিদ্যুৎ রঞ্জন সাহা বলেন মানিকতলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ অসংখ্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ শিশু গাছ মরে গেছে। উপজেলা বন কর্মকর্তা প্রেমানন্দ রায় বলেন, রেন্ট্রি অত্র অঞ্চলের দ্রুত বর্ধনশীল একটি গুরুত্বপূর্ণ গাছ। গাছটি লাগানোর বেশ কয়েক বছর পর অর্থাৎ একটু বড়সড়ো হয়ে উঠলে প্রথমে এর ডালপালা আক্রান্ত হয়, এরপর গাছের পাতা ঝরে যায়, তারপর পুরো গাছ আক্রান্ত হয়ে ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ গাছটি মরে যায়। কি রোগে মারা যাচ্ছে সেটি এখনো জানা সম্ভব হয়নি তবে রোগ সনাক্ত ও প্রতিকার সহ এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল ভদ্র জানান, উন্নয়ন ও কর্মপরিকল্পনায় জাতীয় পর্যায়ে উপকূলীয় অঞ্চলকে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। এ অঞ্চলের প্রাণ প্রকৃতি ও পরিবেশ সুরক্ষায় টেকসই উদ্যোগ নিতে হব। উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য উপযোগী গাছ বেশি বেশি লাগাতে হবে। গাছ শুধু লাগালে হবে না, সেটি সংরক্ষণের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা থাকতে হবে। এ অঞ্চল থেকে যেসব গাছ মারা যাচ্ছে রোগ নির্ণয় সহ প্রতিকার ব্যবস্থা বের করতে হবে। পাশাপাশি প্রাণ পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষায় উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি স্থানীয় উদ্যোগ ও কৌশল কে কাজে লাগাতে হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আল-আমিন জানান, যে কোন গাছ প্রকৃতি ও পরিবেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিবেশ ঠিক থাকলে সবকিছুই ঠিক থাকে, এজন্য পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্রতিটি গাছের যত্ন নেওয়া উচিত। রেইন ট্রি কেন মারা যাচ্ছে এটি নির্ণয় করার জন্য বন বিভাগকে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি গাছ লাগানোর পর সেটি পরিচর্যা ও যত্ন নেওয়ার জন্য আমাদের সবাইকে সচেতন ও আন্তরিক হতে হবে। উপকূলীয় অঞ্চলের রেন্ট্রি গাছের রোগ নির্ণয় ও প্রতিকার করার মাধ্যমে উপকূলীয় অঞ্চলের পরিবেশ ও প্রকৃতি তার প্রাণ ফিরে পাক এমনটাই প্রত্যাশা পরিবেশ সংগঠনের।